ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
অনিশ্চয়তায় প্রযোজক-পরিচালকরা

থমকে আছে একগুচ্ছ সিনেমা

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪, ১২:৪৮ পিএম

থমকে আছে একগুচ্ছ সিনেমা

ছবি: সংগৃহীত

ঝিমিয়ে থাকা চলচ্চিত্র করোনা মহামারির পর ঘুরে দাঁড়ায়। গত কয়েক বছরে ‘হাওয়া’, ‘পরাণ’, ‘প্রিয়তমা’ এবং গেল কোরবানির ঈদে ‘তুফান’ দিয়ে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ফিরেছিল। সিনেমাগুলো থেকে বেশ ভালো ব্যবসা করেছেন হল মালিকরা। এরপর মুক্তির মিছিলে ছিল বড় বাজেটের এবং গল্প নির্ভর বেশ কয়েকটি সিনেমা।

সেই তালিকায় রয়েছে—ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার শাকিব খানের ‘দরদ’, সিয়াম আহমেদের ‘জংলি’, আরিফিন শুভর ‘নীলচক্র’সহ আরো কয়েকটি সিনেমা। চলতি বছর শেষের আগেই সিনেমাগুলো মুক্তির কথা ছিল। কিন্তু আন্দোলন, সরকার পতন, পরবর্তী পরিস্থিতি এবং বন্যা ঘিরে অনিশ্চয়তায় প্রযোজক এবং পরিচালকরা নির্ধারিত সময়ে তাদের সিনেমা মুক্তি দিতে চাইছেন না।

তারা মনে করছেন, দেশের মানুষ এখন গাঁটের পয়সা খরচ করে বিনোদন উপভোগ করার মত মানসিক অবস্থায় নেই। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মধ্যে ‘অস্থিরতা কাটেনি’। এখন সিনেমা মুক্তি দিলে কেবল আর্থিক ক্ষতিই হবে। তাই বড় বাজেটের অনেক সিনেমার মুক্তির সম্ভাব্য তারিখ প্রযোজকরা এক ধাক্কায় নিয়ে গেছেন আগামী বছরে।

জুলাই ও আগস্ট, গত দুই মাসে সিনেমা মুক্তি ছিল হাতেগোনা। এর মধ্যে জুলাই মাসে শবনম ফেরদৌসীর ‘আজব কারখানা’ এবং অগাস্টে মনতাজুর রহমান আকবের ‘অমানুষ হল মানুষ’ সিনেমা দুটি মুক্তি পেয়েছে। এছাড়া নতুন কোনো সিনেমা হলে আসেনি। ওই সিনেমা দুটি হলে দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়।

চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির অফিস সচিব সৌমেন রায় বাবু বলেন, ‘সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। ১৩ তারিখে একটি সিনেমা মুক্তির কথা ছিল। তারিখও নিয়ে রেখেছিল, কিন্তু সেটা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশের এই পরিস্থিতিতে এখন সিনেমা মুক্তির সাহস কেউ পাচ্ছে না।’

শাকিব খান ও সোনাল চৌহান। ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছর মুক্তির তালিকায় আরও ছিল ‘এশা মার্ডার’, ‘কবি’, ‘নূর’, ‘নন্দিনী’, ‘হৈমন্তীর ইতিকথা’সহ বেশ কয়েকটি সিনেমা। ‘নীলচক্র: ব্লু গ্যাং’ মুক্তির কথা ছিল অগাস্ট বা সেপ্টেম্বরে। তবে এই বছর আর সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হবে না জানিয়েছেন পরিচালক মিঠু খান।

অগাস্টের ২ তারিখে মুক্তির কথা ছিল পরিচালক সোয়াইবুর রহমান রাসেলের ‘নন্দিনী’ সিনেমাটি। তবে দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে শেষ পর্যন্ত সিনেমাটি মুক্তি পায়নি। এ প্রসঙ্গে পরিচালক দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ-কে বলেন, ‘এখনই সিনেমা মুক্তি নিয়ে চিন্তা করছি না। আরও এক-দুই মাস গেলে মুক্তি নিয়ে পরিকল্পনা করব। সবকিছু এখনো স্বাভাবিক হয়নি। যখন মনে হবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক তখন মুক্তির পরিকল্পনা করব।’

একই কথা বললেন ‘জংলি’ সিনেমার পরিচালক এম রাহিম। সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার এখন কোনো পরিকল্পনাই নেই তার। যদিও শোনা যাচ্ছে, এখনো সিনেমাটির কাজ শেষ হয়নি।

এদিকে, গত ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল শাকিব খান অভিনীত ‘দরদ’। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডে জমা আছে। এ প্রসঙ্গে পরিচালক অনন্য মামুন বলেন, ‘সিনেমাটি সেন্সরে জমা আছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে ছাড়পত্র পাবো। এরপর সিনেমাটির মুক্তির তারিখ নিশ্চিত করা যাবে।’

সিনেমা মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্নে প্রযোজক মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে দেখা দেয় বন্যা। এর কারণে অনেক সিনেমা হল বন্ধ আছে। দেশের মানুষ যেহেতু মাত্র একটা দুর্যোগকালীন সময় পার করে উঠেছে তাই এখনই সিনেমা মুক্তি নিয়ে কেউ ভাবছে না। পরিস্থিতি ঠিক হয়ে গেলে সিনেমা মুক্তি দেওয়া হবে।’

ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত ও নাজিরা মৌ। ছবি: সংগৃহীত

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার বলেছেন, দেশের ৮০ শতাংশ সিনেমা হল বন্ধ এবং সিনেমা মুক্তি দিলে বড় লোকসান হওয়ার ভয়েই সিনেমা মুক্তি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন প্রযোজকরা।

এখন নতুন সিনেমা মুক্তি না পেলে ব্যবসা বাণিজ্যের ভবিষৎ ভালো দেখছেন না চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন, এভাবে চলতে থাকলে এবং নতুন সিনেমা মুক্তি না পেলে দর্শকরা হলমুখী হবেন না। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতির বড় একটা প্রভাব তো ফেলবেই। তবে এই পরিস্থিতিতেও যদি শাকিব খানের ‘দরদ’ সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া যায়, তাহলে দর্শক হলে ফিরতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।

রূপালী বাংলাদেশ/রুআ

Link copied!