ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫

২৩ জুলাইয়ের রাতের ঘটনা তুলে ধরলেন তাসরিফ খান

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৪, ০৩:২৯ এএম

২৩ জুলাইয়ের রাতের ঘটনা তুলে ধরলেন তাসরিফ খান

তাসরিফ খান। ছবি: সংগৃহীত

দেশের যেকোন পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সরব থাকেন এ সময়ের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী তাসরিফ খান। তেমনি কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুরুতেই সমথর্ন জানিয়েছেলেন তরুণ এই গায়ক। কখনো গান, আবার কখনো সরাসরি কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। আর এর জন্য মানসিক নির্যাতনের শিকারও হন।

বৃহস্পতিবার ১৫ আগস্ট রাতে তাসরিফ তার ফেসবুক পোস্টে গত ২৩ জুলাইয়ের রাতের ঘটনা তুলে ধরেন।

গায়ক তাসরিফ খানের সেই ফেসবুক পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হলো-

কিছু নির্মম ইতিহাস টাইমলাইনে থাকুক।

২৩ জুলাই রাত ১ টার কথা বলছি। একজন সিনিয়র ইনফ্লুয়েন্সার কল দিয়ে বললো, ‘তাসরিফ, তোর বাসার নিচে নাম, চা খাইতে আসতেছি, গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে।

৫ জুলাই থেকে ছাত্রদের পক্ষে বিভিন্ন পোস্ট করা, কবিতা লিখতে থাকা এবং ‘রাজার রাজ্যে সবাই গোলাম’ গানটা ফেসবুকে চলতে থাকায় সরকারি গুণ্ডা বাহিনীর থ্রেটে আমি তখন বাসার বাইরে অবস্থান করছিলাম। ওই সিনিয়র ইনফ্লুয়েন্সারের কথায় বিশ্বাস করে আমি তখন বাসার সামনে আসি উনার সাথে দেখা করতে। গাড়ি থেকে ৬-৭ জনের মতো নেমে আসে।

ইনফ্লুয়েন্সার সাহেব আমাকে একটু সাইডে নিয়ে আস্তে করে বুঝিয়ে বলেন, ‘সাথে যারা আছে তারা একটা এজেন্সির লোক এবং আইন প্রয়োগ সংস্থার বাহিনীর কয়েকজনও আছে এখানে।’ আমি তখন উনার কাছে জানতে চাই যে উনারা কেন এসেছেন কী চাচ্ছেন মূলত!

উনি তখন বুঝায়, ‘সরকারি একটা কাজ আছে, এই সরকার আরও ৭-৮ বছর ক্ষমতায় থাকবো। আমরা ঠিকমতো বাঁচতে চাইলে সরকারের পক্ষে কাজ করতে হইবো, এর বাইরে কোনো রাস্তা নাই।’ এই কথা বলে উনি আবার আমাকে গাড়ির কাছে নিয়ে যান। সেই ৬-৭ জনের মধ্য থেকে একজন আমাকে বলেন, ‘তাসরিফ, তোমাকে আমরা চিনি। আমরা তোমাকে একটা স্ক্রিপ্ট দিতেছি, ছোট্ট একটা ভিডিও করতে হবে। এই ভিডিওটা আমাদের কালকের মধ্যে লাগবে। পরশু সরাসরি প্রধানমন্ত্রী এই ভিডিওটা দেখবেন এবং তারপর তুমি আপলোড করবা।’

সেই ইনফ্লুয়েন্সার তাদের সাথে সুর মিলিয়ে আমাকে বলেন, ‘দেখ তাসরিফ, পিএম এর চোখে পড়ার এটাই সুবর্ণ সুযোগ, ভিডিওটা ভালো করে কর, সরকার যতদিন আছে সুবিধা পাবি।’ কথা শেষ করার আগেই উনি পকেট থেকে এক লাখ টাকার তিনটা বান্ডেল, মোট তিন লাখ টাকা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এইটা সামান্য ছোট একটা গিফট! টাকা যত চাস, তত দেয়া হবে, ভিডিওটা সুন্দর কইরা কর।’

ঠিক এই সময় আমার ফোনে আমার ব্যান্ডের ড্রামার শান্তর নাম্বার থেকে একটা কল আসে। ফোন রিসিভ করতেই শান্ত আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘তাসরিফ! পাঁচ ছয়জন পুলিশ এবং সিভিল ড্রেসের কয়েকজন মিলে আমাকে রোল দিয়ে সারা শরীরে মারছে!’

শান্তর কথা শুনে আমার হাত-পা একরকম কাঁপতে থাকে। আমি বোঝার চেষ্টা করি, এই মাইর খাওয়াটা কি আমাকে এদিকে রাজি করানোর জন্য ভয় দেখানো? নাকি কেবলমাত্র একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা? শান্তর লাইন কেটে যায়।

‘আমাকে ছাত্র বইলা বইলা ওরা মারছে আর বারবার বলতেছিল যে এই অমুকের পোলা ছাত্র! ওরে মার!’ ওই রাতে আমি বাসা থেকে পালিয়ে যাই।

আমি জানি কয়েকটা পোস্ট, কবিতা লেখা আর ‘রাজার রাজ্যে সবাই গোলাম’ এর মতো কিছু গান করা ছাড়া দেশের জন্য তেমন কিছুই করতে পারি নাই। আমি জানি, আমি আবু সাঈদের মতো পথে যেয়ে বুক পেতে দিতে পারি নাই। হয়তো বা এতটুকু সাহস আমার তখন হয় নাই। তবে, আল্লাহ জানেন আর আমি জানি, আমি টাকার কাছে বিক্রি হইনি। আর দেশের সাথে বেঈমানি করিনি।

শান্তর ছবিগুলো এবং ওদের নির্মমতার কথাগুলো আমি লিখে পোস্ট করছি এই কারণে, যেন ভবিষ্যতে কখনো এই স্বৈরাচারের প্রতি আমার ঘৃণা এতটুকু পরিমাণও কমে না যায়।

 

আরবি/জেডআর

Link copied!