ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মধু পান করা তারকাদের ভবিষ্যৎ কোন পথে

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪, ০১:৪৫ পিএম

মধু পান করা তারকাদের ভবিষ্যৎ কোন পথে

ছবি: সংগৃহীত

শোবিজ দুনিয়া থেকে রাজনীতির মঞ্চে, ভ্রমর সেজে মধু পান করতে আসতেন অভিনয় শিল্পী-নায়ক-নায়িকা-গায়ক-গায়িকারা। আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডি কার্যালয়ে বসতো তারকারাজির মিলনমেলা। কখনও ব্যক্তি সুবিধা তো, কখনও এমপি পদের মনোনয়ন পেতে দ্বারস্থ হতেন প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীদের কাছে। রাজনীতির মাঠ থেকে বেডরুম-অবাধ যাতায়াত ছিল অভিনেত্রীদের। ক্ষমতার অপব্যবহার করা এইসব তারকার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের ব্যক্তিত্বরা।

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর খোঁজ নেই আওয়ামী লীগের সুবিধা নেওয়া তারকাদের। বর্তমানে তারা রয়েছেন আত্মগোপনে। কখনো রাজনীতি না করা আসাদুজ্জামান নূর, তারানা হালিম, সুবর্ণা মুস্তাফা, মমতাজ বেগমরা বারবার নির্বাচিত হয়েছেন সংসদ সদস্য। তাদের পথ ধরে একে একে এমপি পদ পেতে মরিয়া হয়েছেন ফেরদৌস আহমেদ, রিয়াজ, শাকিল খান, রোকেয়া প্রাচী, তানভীন সুইটি, শমী কায়সার, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, মাহিয়া মাহি, জ্যোতিকা জ্যোতি, তারিন জাহান, মেহের আফরোজ শাওন, অপু বিশ্বাস, সোহানা সাবা, নিপুণরা। যখন যে দল ক্ষমতায় তখন তাদের কাছেই ভিড়তেন এসব তারকাদের অনেকেই।

প্রশ্ন রেখে এ প্রসঙ্গে অভিনেতা ও নেতা বাবুল আহমেদ বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই এদের ভোল পাল্টানোর চরিত্র। এক সময় ফেরদৌস তারেক রহমানের পেছনে ঘুরে ভাই-ভাই করত। ছাত্রদল করত রিয়াজ-ফেরদৌস। এখন ফেরদৌস বড় আওয়ামী লীগ। রিয়াজ কবে আওয়ামী লীগ ছিল? শিল্পীরা সবাই যদি এমপি হতে চায় তাহলে যারা বছরের পর বছর রাজনীতি করছে তাদের কি হবে?’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ঢাকা ১০ আসনে আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হন এক সময়ের ছাত্রদল নেতা চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ। আগামীতে সংসদে যাওয়ার এরই মধ্যে স্বপ্ন বুনেছিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ আহমেদ। এবারের সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন একসময় বিএনপি করা তারিন জাহান। ক্ষমতাশীন নেতাদের সঙ্গে মিশে তারিন, ঊর্মিলা, শমী কায়সার, নিপুণ আক্তার, মীর সাব্বির, জ্যোতিরা ধরাকে সরা জ্ঞান করতেন না। কেউ কেউ ভাগিয়েছেন অনুদান। আবার অনেকেই বছরজুড়ে সরকারি সুবিধা ভোগ করতেন।

তুখোড় আওয়ামী লীগ না হলেও প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে মিশে দুই বছরের জন্য চুক্তিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক পদে দায়িত্ব নেন জ্যোতিকা জ্যোতি। এর আগে বেশ কয়েকবার এমপি হওয়ার জন্য দলটির মনোয়ন ফরম নিলেও মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে সরব না থাকায় ভাগ্য সহায় হয়নি এই অভিনেত্রীর। কেউ কেউ আবার পদে না থেকেও গড়েছেন গাড়ি-বাড়ি। সেই তালিকায় আছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ। রাজনীতিবিদ শেখ সেলিমের ছত্রছায়ায় নিপুণ হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তার ক্ষমতায় নির্বাচিত না হয়ে দুই বছর শিল্পী সমিতির পদ দখল করে ছিলেন। গড়েছেন টাকার পাহাড়।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হামলার পরিকল্পনার হোতা কোনো কোনো তারকা শিল্পী। এসব কাজ করতে তারা সরাসরি কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন। তারকা খ্যাতি ব্যবহার করে জনতার বিপক্ষে ছিলেন এসব তারকারা। ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দিনকে রাত আর রাতকে দিন করেছেন যেসব তারকা শিল্পী তাদের এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মনির খান বলেন, ‘অপরাধী কখনো প্রকাশ্যে থাকতে পারে না। এখন দেশের পরিস্থিতি সেই জায়গায় নেই। দীর্ঘ ১৬ বছর অনেক অনিয়ম করেছে। এখন ভয়ে লুকিয়ে আছেন তারা। কারণ, তারা অন্যায় ভাবে দলের ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন।’

শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের শূন্যতা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ, যা দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চে প্রধান শক্তি হিসেবে বিবেচিত ছিল, সেই দলটির অনুপস্থিতিতে অন্য সবার মতো অভিভাবকহীন হয়েছেন তারকারাও। চলতি বছরের জাতীয় নির্বাচনে অনেক তারকা শিল্পীর নির্বাচনে দাঁড়ানোর চাপ থাকলেও তা কেউ কেউ উপেক্ষা করেছেন। তবে স্বার্থের স্রোতে ভেসে গেলেন ক্ষমতার চাপ-রাশির তারকারা। তাই তো প্রশ্ন ওঠেছে, একসময় বিএনপি করা ফেরদৌস, রিয়াজ, তারিন জাহান, মীর সাব্বিরদের ভবিষ্যৎ এখন কোন পথে যাচ্ছে?

রূপালী বাংলাদেশ/রুআ

Link copied!