দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী কুসুম শিকদার। অভিনয় ছাড়াও তার পরিচিতি রয়েছে মডেল, গায়িকা এমনকি লেখক হিসেবেও। পাশাপাশি নির্মাতা হিসেবে তিনি যে নাম লিখিয়েছেন এ তথ্য অনেকেরই কম-বেশি জানা। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে পর্দায় নেই কুসুম। ব্যক্তিগত কারণে অভিনয় থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন তিনি। অভিমান ভুলে প্রথমবার আসলেন সিনেমা পরিচালনায়। নাম ‘শরতের জবা’। অচিরেই সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে। সিনেমা ও সমসাময়িক প্রসঙ্গে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
সিনেমা
প্রথমবার সিনেমা পরিচালনা করেছি। এরই মধ্যে এর পোস্টার ও টিজার প্রকাশ পেয়েছে। তার আগে সেন্সর ছাড়পত্র পাই। টিজার প্রকাশের পর ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। অনেকেই ফোন করে প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন টিজার তাদের ভালো লেগেছে। আমার ফেরার খবরে ভক্তরা অনেক খুশি। নির্মাতা বন্ধুরাও টিজারের প্রশংসা করছেন। এটা নবীন নির্মাতা হিসেবে আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।
রহস্যে ঘেরা
শরতের জবা রহস্যময় গল্প।রয়েছে ভৌতিক আবহাওয়া। প্রেম ও গান তো আছেই। সাইকোলজিকাল থ্রিলার গল্প। সিনেমার পুরো যাত্রাটিই আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং। গল্প, চিত্রনাট্য, প্রযোজনা, পরিচালনা ও অভিনয়সহ সবকিছুই আমার করা। সেই জায়গা থেকে এখনো পরিশ্রমের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছি। অনেক যত্ন নিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ করেছি। চাইলেই এটি তিন মাসে নির্মাণ করতে পারতাম। প্রায় এক বছর সময় নিয়ে তৈরি করেছি। আমি চেয়েছিলাম, আমার প্রথম সিনেমাটি দর্শক দেখুক। আমার লেখা ‘অজাগতিক ছায়া’ গল্পগ্রন্থে ‘শরতের জবা’ নামে একটি ছোট গল্প আছে। সেই গল্প থেকেই সিনেমার নামকরণ করা হয়েছে। গল্পটি আমার পছন্দের। যার কারণে নির্মাণ করা। একবার পত্রিকায় পরবর্তীতে পরপর দুইবার বই মেলায় এটি প্রকাশিত হয়। সেসময় যারা গল্পটি পড়েছেন প্রশংসা করেছেন। তাদের প্রতিক্রিয়ার পর ভাবলাম কিছু একটা করি। এরপর সিনেমা নির্মাণ করা। নিজের সেরাটা দিয়ে কাজটি করার চেষ্টা করেছি। কতটুকু পেরেছি তা দর্শক বলতে পারবেন।
দায়িত্ব
শুধু মাত্র অভিনয়ের অভিজ্ঞতা ছিল। বাকিগুলো আমার জন্য একেবারে নতুন। প্রযোজনা অনেক কঠিন কাজ। জার্নিটা সহজ ছিল তাও কিন্তু না। এই সিনেমার প্রধান শক্তি হচ্ছে গল্প। যেই গল্পের বই অনেক আগেই দর্শকদের মধ্যে প্রকাশ করেছি। কাজটি করতে গিয়ে অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। নবীন হিসেবে কাজটি নিয়ে আমি খুশি। আশা করি, দর্শকও পছন্দ করবেন।
চরিত্র
সিনেমাটিতে জবা ও বেলী দুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। আমি জবা চরিত্রে অভিনয় করেছি। একাকী নারীর রহস্যময় জীবনের গল্প। ঘাত-প্রতিঘাত, অতৃপ্ত প্রেম, অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা; যা দুই নারীর জীবনে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। সেই প্রশ্নের উত্তর মিলবে শরতের জবা সিনেমাতে।
কুসুম থেকে জবা
আমি যখন যে চরিত্রে অভিনয় করেছি সেই চরিত্রই দর্শকমহলে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। লাল টিপ- নিথি, গহীনের শব্দ- স্বপ্ন; শঙ্খচিল- লায়লা। চরিত্রগুলো দর্শক পছন্দ করেছে বলেই আমি জনপ্রিয়তা পেয়েছি। নিজেও শরতের জবা করে তৃপ্তি পেয়েছি। সেই জায়গা থেকে দর্শক বলতে পারবেন তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পেরেছি কিনা।
৬ বছর পর
২০১৮ সালে শেষ কাজ করি। এরপর আর কাজ করিনি। ২০২৩ সালে ৫ বছর পর শুটিংয়ে ফিরেছি। পর্দার দিক দিয়ে ৬ বছর পর দর্শকদের সামনে আসতে যাচ্ছি। দেশের পরিস্থিতির কারণে বেশ কয়েকবার মুক্তির তারিখ থেকে সরে আসি। আক্টোবরে নতুন তারিখ নির্ধারন করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে সিনেমাটি মুক্তি পাবে।
সিনেমা এখন ঈদ কেন্দ্রিক
কয়েক বছর ধরে আমাদের সিনেমা ঈদ কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। অন্য সময় মুক্তি পেলে দর্শক প্রেক্ষাগৃহমুখী করা একটু কষ্টসাধ্য। সেই জায়গা থেকে আমরা অনেকটা ঝুঁকি নিতে যাচ্ছি। তবে এখন সবাই ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন। আমি কাজটি নিয়ে আশাবাদী যার কারণে ঝুঁকি নিতে অসুবিধা নেই।
রসায়ন
প্রথমবার ইয়াশ রোহানের সঙ্গে কাজ করেছি। সেই জায়গা থেকে ইয়াশ যথেষ্ট ভালো করেছে। বেলী চরিত্রের অভিনেত্রীও বেশ ভালো কাজ করেছে।
পরিচালনায় নিয়মিত হবেন?
আমি যখন অভিনয় করতাম তখনো নিয়মিত ছিলাম না। আমার প্রজন্মের যারা তাদের তুলনায় আমার কাজ সবসময় কম ছিল। এখন আমার মতো করে অভিনয়ের প্রস্তাব এলে করব। প্রযোজনা বা পরিচালনা অনেক কঠিন। সেটা শরতের জবার উপর নির্ভর করছে নিয়মিত হবো কিনা।
অনিয়মিত
২০১৮ সালের পর ৬ বছর অভিনয় করিনি নিজের সিনেমাটা ছাড়া। শঙ্খচিল সিনেমায় অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। ক্যারিয়ারে যখন সবচেয়ে ভালো সময় যাচ্ছে এবং ভালো কাজ আসতেছে তখনই ব্যক্তিগত কারণে অভিনয় থেকে দূরে সরে যাই। কারণটি কখনো বলিনি। হয়ত ভবিষ্যতে বলতেও পারি।
মরীচিকা মায়া
এটি একটি মিউজিক্যাল ফিল্ম। যার ব্যাপ্তি প্রায় সাড়ে আট মিনিট। মুক্তির জন্য প্রস্তুত আছে। পরিস্থিতির কারণে মুক্তি পায়নি। সবকিছু স্বাভাবিক হলে শরতের জবার পাশাপাশি এটিও মুক্তি দেব।
কেমন বাংলাদেশ চাই
আমি সবসময় পজিটিভ। সবকিছুতে পজিটিভ চিন্তা করতেই পছন্দ করি। দেশের ভালো হোক সেটাই চাওয়া। নতুন সরকার সুন্দর একটি বাংলাদেশ উপহার দেবেন সেই প্রত্যাশা করি।
আপনার মতামত লিখুন :