ঢাকা শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

শিল্পকলায় মাঝপথে নাটক বন্ধ হওয়ার নেপথ্যে যা জানা গেল

বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৪, ০৬:০০ পিএম

শিল্পকলায় মাঝপথে নাটক বন্ধ হওয়ার নেপথ্যে যা জানা গেল

ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের শো চলার মাঝপথেই তা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ‘ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্যে’র জের ধরে মিলনায়তনের বাইরে বিক্ষোভকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তা থামিয়ে দিতে বাধ্য হন শিল্পকলা একাডেমির নতুন মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। এ নিয়ে নাট্যাঙ্গনে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

শনিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা থেকে নাটকটি চলা অবস্থায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। নাটকটি রচনা ও পরিচালনা করেন মাসুম রেজা।

জানা যায়, নাটকের শো শুরুর আগে শিল্পকলার গেটে বিক্ষোভকারীরা নাটক বন্ধের জন্য ব্যানার ঝুলিয়ে দেন। এরপর তারা দেশ নাটকের দলনেতা এহসানুল এজাজ বাবুকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান এবং নাটকটির মঞ্চায়ন বন্ধ করে দিতে বলেন।

বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, দলনেতা এহসানুল এজাজ ফেসবুকে বর্তমান সরকার নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। এক পর্যায়ে শিল্পকলার প্রধান সৈয়দ জামিল আহমেদ সেখানে গিয়ে মধ্যস্থতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বিক্ষোভকারীদের কোনোভাবে শান্ত করতে না পেরে তিনি মঞ্চে চলতে থাকা নাটকটির মাঝখানে ওঠেই সেটি বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেন। পরে নাটকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিক্ষোভকারীরা ওই নাট্যকর্মীকে ‘ফ্যাসিবাদের’ দোসর বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একজন ব্যক্তির প্রতি ক্ষোভ থেকে পুরো নাট্যদলের প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়াকে নিন্দনীয় উদাহরণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

গত ১৭ অক্টোবর দেশ নাটকের দলনেতা এহসানুল এজাজ বাবু তার ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আসুন আমরা সবাই এই দেশকে বাঁচাই, জয় বাংলা বলে এই বাংলাদেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।’

সেই স্ট্যাটাসের সঙ্গে নিত্যপুরাণ নাটকের দলনেতা বাবু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের ছবি ব্যবহার করে একটি কোলাজ যুক্ত করেন।

কোলাজটিতে তিনি ‘এরা বাংলাদেশবিরোধী, এরা স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকারদের রুখে দাঁড়ান’ লেখেন। এছাড়াও কোলাজের ব্যকগ্রাউন্ডে তিনি, ‘তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’ যুক্ত করে দেন। পরে সেটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।

বিতর্কের ব্যবচ্ছেদ করে ‘দেশ নাটক’ নাট্যদলের সদস্য ব্রততী বিথু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আজকে আমার দল দেশ নাটকের নিত্যপুরাণ নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার মাঝখানেই এই ঘটনা ঘটে। সে সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তবে নাটক বন্ধ করুন- এমন ধরনের কোনো স্লোগান সেখানে কেউ দিয়েছে বলে আমাদের কানে আসেনি।’

তিনি বলেন, ‘মূলত একজন ব্যক্তিকে মূল হল থেকে বের করে দেওয়ার জন্য কিছু মানুষ শিল্পকলার ১ নম্বর গেটে জটলা বাঁধিয়েছিল। সেই ব্যক্তিবিশেষকে ধরার এতটাই আগ্রহ ছিল তাদের, যার কারণে পরিস্থিতি কিছুটা খারাপের দিকে মোড় নেয়। আর শো মাঝপথে স্থগিত করে দেওয়া হয়। কোনো নাটক বন্ধ কর, নাটক করা যাবে না- এমন ধরনের স্লোগান সেখানে দেওয়া হয়নি।’

অন্যদিকে, নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে ‘দেশ নাটকে’র নিত্যপুরাণ শো-এর অভিনেত্রী সুষমা সরকার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আমার অভিনয় জীবনে এই প্রথম কোনো শো এমন মাঝপথে থেমে গেলো। একজন অভিনেত্রী হিসেবে এই বেদনাটা কিছুতেই ভুলতে পারছি না। বাসায় ফিরে এই কস্টিউমের সামনে কতক্ষণ বসেছিলাম জানি না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাটকের একজন দর্শক বলেন, এখানে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প রয়েছে। তবুও এমন অনভিপ্রেত পরিস্থিতি কীভাবে সৃষ্টি হলো সেটি আমাদের বোধগম্য মনে হচ্ছে না। এ বিষয়ে জোর তদন্ত হওয়া দরকার।

ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে সেখানে থাকা নাটকটির রচয়িতা ও নির্দেশক মাসুম রেজা বলেন, ‘আসলে পরিস্থিতি এমন হয়ে গিয়েছিল এবং জামিল ভাই এসে বললেন, বন্ধ করতে হবে, কারণ তিনি ওদের বোঝাতে পারছিলেন না। তখন নাটকটা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আমরা আর কিছু ভাবতে পারিনি।’

এ ব্যাপারে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ মঞ্চে ওঠে নাটকের শো স্থগিত করে বলেন, ‘আমরা খুবই দুঃখিত, এটার জন্য লজ্জিত যে- আমাদের এই শো টা বন্ধ করতে হচ্ছে…।’

আরবি/ এইচএম

Link copied!