সময়টা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের। টিভি কিংবা বড় পর্দায়, সিনেমা বা সিরিজ দেখা এখন মানুষের নিত্যদিনের অংশ হয়ে উঠছে। আর এখন ওটিটির যুগে প্রায় সবাই ঝুঁকছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দিকে। ওটিটির পর্দায় খুঁজে নিচ্ছে অবসর সময়ের বিনোদনের খোরাক। প্রতি সপ্তাহেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোতে একাধিক সিনেমা ও সিরিজ মুক্তি পাচ্ছে। বড় পর্দার সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল এই মাধ্যমটি।
বলা যায়, অনেক ক্ষেত্রে ওটিটি বড় পর্দার সিনেমার চেয়ে এগিয়ে থাকছে। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৪-এ বলিউডের ওটিটি কন্টেন্টে বিচিত্র চমক লক্ষ্য করা গেছে। আজকাল বলিউডের নামিদামি জনপ্রিয় অনেক তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ওটিটিতে নিয়মিত দেখা যায় ওয়েব ফিল্ম ও সিরিজগুলোতে। এ বছরেও বলিউডের অনেক বিখ্যাত তারকাদের বিভিন্ন ওয়েব সিনেমা ও সিরিজে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে নাসির উদ্দিন শাহ, ইমরান হাশমি, মনীষা কৈরালা, সোনাক্ষী সিনহা, কে কে মেনন, সিদ্ধার্থ মালহোত্রা, শিল্পা শেঠি, কাজল, রাভিনা ট্যান্ডন, বিক্রান্ত ম্যাসি, অনন্যা পান্ডে, সোহা আলি খান, মনোজ বাজপেয়ী, রিতেশ দেশমুখ, তাপসী পান্নু প্রমুখকে দেখা গেছে।
এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম রীতিমতো প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে একের পর এক নতুন কন্টেন্ট নিয়ে আসছে দর্শকদের জন্য। এ বছর তেমনি বেশ কিছু হিন্দি ওয়েব সিরিজ দর্শকদের আলোড়িত এবং মুগ্ধ করেছে। এ প্রসঙ্গে হীরামান্ডি, পঞ্চায়েত সিজন থ্রি, মির্জাপুর সিজন থ্রি, তানাভ সিজন টু, মিসম্যাচ সিজন থ্রি, বন্দিশ ব্যান্ডিট সিজন টু, ইয়ে কালি কালি আখে সিজন টু, দ্য নাইট ম্যানেজার সিজন টু, সিটাডেল হানি বানি, কিলার স্যুপ, মায়েরি, দিল দোস্ত ডিলেমা, মামলা লিগ্যাল হ্যায়, ইন্ডিয়ান পুলিশ ফোর্স, ক্যারাটে গার্লস, মার্ডার ইন মাহিম, কল মি বাই, তাজা খবর সিজন টু, দ্য কান্দাহার অ্যাটাক, লুটেরা, শো টাইম প্রভৃতি ওয়েব সিরিজের কথা উল্লেখ করতে হয়।
যেখানে হীরামান্ডির মতো ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে নর্তকী, দেহপসারিনীদের বিপ্লবী হয়ে প্রতিবাদী হওয়ার মানবিক গল্পনির্ভর বড় বাজেটে নির্মিত তারকা বহুল ওয়েব সিরিজ যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে, মির্জাপুরের মতো টান টান উত্তেজনাপূর্ণ গল্পের জমজমাট ওয়েব সিরিজ। এক তরুণীর স্বাধীন জীবন প্রবাহের নাটকীয় গল্পের সিরিজ কল মি বাই দর্শকদের ভিন্ন স্বাদ দিতে সক্ষম হয়েছে। পারিবারিক সেন্টিমেন্ট নির্ভর ওয়েব সিরিজ দিল দোস্তি দিলেমা দর্শকদের কাছে স্বস্তির পরশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
গ্রামীণ সমাজের নানা রাজনীতি, দ্বন্দ্ব সংঘাত হাস্য কৌতুকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে পঞ্চায়েত সিজন থ্রিতে। শো টাইম ওয়েব সিরিজে বলিউডের গ্ল্যামার জগতের অন্দর মহলের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি সাড়া জাগিয়েছে পঞ্চায়েত, মির্জাপুর, সিটাডেল হানি বানি, গেরা গেরা ওয়েব সিরিজগুলো। এখন বড় পর্দায় নয়, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বলিউডের অনেক সিনেমা প্রথম মুক্তি পাচ্ছে। এ বছর তেমন উল্লেখযোগ্য বেশকিছু সিনেমা দেখা গেছে নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম, জিও সিনেমা, জি ফাইভ, ডিজনি প্লাস, হটস্টার, সনি লিভ প্রভৃতি প্ল্যাটফর্মে।
এ প্রসঙ্গে বার্লিন, সেক্টর থার্টি সিক্স, দেড় বিঘা জমিন, ভক্ষক, অমর সিং চামকিলা, মহারাজ, দো পাত্তি, দ্য সিগনেচার, বিজয় সিক্সটি নাইন, সিকান্দার কা মুকাদ্দার, ডেসপাচ, লাভ সিতারা, কন্ট্রোল, ফির আয়ি হাসিন দিলরুবা, বিসফোট প্রভৃতি সিনেমার কথা বলা যায়। এ সিনেমাগুলো প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া সিনেমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দর্শক টেনেছে।
চলতি বছরের বিভিন্ন ওয়েব সিরিজে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন মনোজ বাজপেয়ী (কিলার স্যুপ, নেটফ্লিক্স), সামান্থা রুথ প্রভু, বরুণ ধাওয়ান (সিটাডেল হানি বানি, আমাজন প্রাইম), জিতেন্দ্র কুমার (পঞ্চায়েত, আমাজন প্রাইম) মনীষা কৈরালা, সোনাক্ষী সিনহা (হীরামানডি, নেটফ্লিক্স), রীতেশ দেশমুখ (পিল, জিও সিনেমা এবং সিকান্দার কা মুকাদ্দার, নেটফ্লিক্স) অনন্যা পান্ডে (কল মি বাই, নেটফ্লিক্স এবং কন্ট্রোল, আমাজন প্রাইম), পঙ্কজ ত্রিপাঠী (মির্জাপুর, আমাজন প্রাইম) আলি ফজল (মির্জাপুর, আমাজন প্রাইম) প্রমুখ। তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দর্শকদের বিমোহিত করেছে।
অথচ কাজলের মতো একজন প্রতিষ্ঠিত জনপ্রিয় অভিনেত্রী নেটফ্লিক্সের তিন পাত্তি ওয়েব সিনেমায় হতাশাব্যঞ্জক অভিনয় করেছেন। ওদিকে বলিউডের একজন ডাকসাইটে নির্মাতা রোহিত শেঠি প্রথমবার ওটিটির জন্য ক্রাইম থ্রিলার সিরিজ নির্মাণ করেছেন এ বছর। সিদ্ধার্থ মালহোত্রা, শিল্পা শেঠি, বিবেক ওবেরয়-এর মতো বলিউড তারকা নিয়ে আমাজন প্রাইমের ইন্ডিয়ান পুলিশ ফোর্স ওয়েব সিরিজটি রীতিমতো হতাশ করেছে সবাইকে।
দিনে দিনে ওটিটির জগত বিস্তৃত হচ্ছে বলিউডে। চলতি বছর আমরা এই বিস্তার সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করেছি। এখন বলিউডের অনেক বড় বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওটিটির জন্য সিনেমা, সিরিজ নির্মাণে বেশি মনোযোগী। তারা এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। আবার প্রতিষ্ঠিত তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে অনেকেই আগ্রহ নিয়ে ওটিটির জন্য কাজ করছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এটা ইতিবাচক লক্ষণ বলা যায় অনায়াসেই।
আপনার মতামত লিখুন :