ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

এই আদর্শ আমৃত্যু ধারণ করব: রোকেয়া প্রাচী

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৪, ০১:৫৬ পিএম

এই আদর্শ আমৃত্যু ধারণ করব: রোকেয়া প্রাচী

অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী। ছবি: রুপালী বাংলাদেশ

নন্দিত অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী। প্রযোজনা, নির্মাণ ও অভিনয়ের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীনিতে সরব তিনি। ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু করে এখনো সরব রয়েছেন। রাজনীতির জন্য বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার হয়েও পিছু হাঁটেননি তিনি। সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে ক্ষমতাচ্যূত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতার আশপাশে থাকা মানুষদের খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। অনেকেই বিদেশ পাড়ি জমিয়েছেন। অনেকেই আবার ফোন বন্ধ করে চলে গেছেন আত্মগোপনে।

তবে ব্যতিক্রম দেখা যায় এই অভিনেত্রীকে। সামাজিত যোগাযোগ মাধ্যেমে সরব থাকার পাশাপাশি দেখতে গিয়েছেন রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আগুনে পোড়া ভবন। পোড়া বাড়ি ও নিজের একটি ছবি শেয়ার করে ফেসবুকে তিনি লেখেন, দুঃখিত। লজ্জিত। পুড়ে গেলো ইতিহাস, অস্তিত্ব।

কোথায় আছেন জানতে চাইলে রূপালী বাংলাদেশ-কে রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘আমি এই দেশেই আছি। আওয়ামী লীগ করেছি, অন্যায় কিছু করিনি। আওয়ামী লীগের হাত ধরে বাংলা ভাষা পেয়েছি। জাতির পিতার নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। আওয়ামী লীগ করা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করা কোনো অপরাধ নয়। এই আদর্শ আমৃত্যু ধারণ করব আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকব। শেখ হাসিনার কর্মী ছিলাম, আছি এবং থাকব।’

প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, ‘যে দেশে গণভবন লুট হয়, একজন মায়ের বয়সী প্রধানমন্ত্রীর অন্তর্বাস নিয়ে নারী ও পুরুষের ঘৃণ্য স্বাধীনতার বিজয় উৎসব হয়। এই দৃশ্য দেখার পর সুশীল, মেধাবী শিক্ষার্থীরা এবং আজকের জাতির বিবেক হিসাবে যারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন। আপনারা ভাবছেন একজন পরাজিত প্রধানমন্ত্রীর অপমান হয়েছে, খুব শিক্ষা হলো! শিক্ষা হলো এই দেশের! এদেশের সকল নারীদের। মনে রাখবেন শেখ হাসিনা তিনিই মায়ের নামের মর্যাদা দিয়েছেন। আপনারা সেই মায়ের নারীত্বের সম্ভ্রমকে শেষ করে দিলেন! বিশ্বের সামনে যে বাংলাদেশ দেখালেন সেই দেশের মানুষ কাপুরুষ বিকারগ্রস্থ হয়ে থাকবে ইতিহাসে। কে জানে এমন কুশিক্ষায় জাতি কোন পথে চলবে।’

রোকেয়া প্রাচী। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি পোড়ানো অমর্যাদার উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘৩২ পুড়িয়ে যে বিজয় অর্জিত হলো তা গ্লানিকর ও অমর্যাদার। বঙ্গবন্ধুর ছবি পুড়িয়ে ভাস্কর্য ভেঙে যে উন্মাদনা, মনে হলো ১৯৭১। আগে জানতাম বিএনপির দুই একজন ছাড়া সবাই আওয়ামী লীগ করে। এখন দেখছি সবাই সুশীল, নিরপেক্ষ, কোটা আন্দোলনকারী এবং সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে পথে নেমেছেন, সাধুবাদ। রাহুলদার ঘর, আমাদের সিনেমা হল, মন্দির, শহীদ মিনারের দেয়ালের শহীদ স্মৃতি কথার বাংলা ভাষা মুছে যায়। রবীন্দ্রনাথ মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছেন। ফুলার রোডের স্বাধীনতার সেই ভাস্কর্যগুলো রাতারাতি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বেগম রোকেয়ার মুখের উপর লেখা মাগি। সেই অন্তর্বাসের উল্লাস থেকে মাগি পর্যন্ত এসে গেছে।’

প্রতিকার চেয়ে রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘সব জাতির কিছু জায়গা থাকতে হয় দলমত নির্বিশেষে, যা সকলের। এদেশ এখন সব বিভাজিত। বেগম রোকেয়াও আওয়ামী লীগের? আমি এর প্রতিকার চাই। প্রতিবাদ জানাই। শিক্ষার্থী সহ সকল হত্যার বিচার চাই। আগুনে পোড়ানো, মেরে ঝুলিয়ে রাখা পুলিশ ভাইদের এবং অন্তঃসত্ত্বা সেই নারী পুলিশ হত্যার বিচার চাই। সাংবাদিক হত্যার বিচার চাই। স্থাপনা ধ্বংসেরও বিচার চাই।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাধুবাদ জানিয়ে সবশেষে তিনি বলেন, ‘দেশকে ভালোবাসি তাই বলছি—খাল কেটে আনা কুমির ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে যেতে পারে। সাবধান। সাধুবাদ জানাই বিশ্ব বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। তিনি যেন দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারেন। সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন সফল হোক।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!