অনেক দূর যেতে চাই: অলংকার চৌধুরী

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৪, ০৩:০৭ পিএম

অনেক দূর যেতে চাই: অলংকার চৌধুরী

অলংকার চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

এ সময়ের দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী অলংকার চৌধুরী। মডেলিংয়ের মাধ্যমে অভিনয়ে নাম লেখান তিনি। সুন্দরী-হাস্যোজ্জ্বল এই অভিনেত্রী এরই মধ্যে সাবলীল অভিনয় দিয়ে শোবিজের অংলকার হয়েছেন। শুরুর দিকে সব ধরনের কাজ করলেও অলংকার এখন বুঝেশুনে পা ফেলছেন। বর্তমানে কাজের অনেক প্রস্তাব পেলেও স্রোতে গা না ভাসিয়ে নিজের পছন্দসই কাজগুলো করছেন। কাজের ক্ষেত্রে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দিতে নারাজ তিনি। কাজ ও সমসাময়িক প্রসঙ্গে রূপালী বাংলাদেশ’র সঙ্গে কথা বলেছেন অলংকার।

ব্যস্ততা
শুটিং ঘিরেই এখনকার ব্যস্ততা। তবে এখন তুলনামূলক কাজ কম হচ্ছে। পটপরিবর্তনের পর পুরোদমে এখনো কাজ শুরু হয়নি। ধীরে ধীরে সবাই শুটিংয়ে ফিরছেন। সেই জায়গা থেকে সবার মতো আমারও কাজ কম বলা যায়। তবে আমি আগের থেকে এখন কাজের মানে বেশি নজর দিয়েছে। বেছে বেছে কাজ করছি। এখন আর গড়পড়তা কাজ করছি না। কাজ কম করব কিন্তু গল্পনির্ভর কাজে নিজেকে দেখতে চাই। সেই জায়গা থেকে আলহামদুলিল্লাহ।

অপেক্ষা
এরই মধ্যে ‘প্রকৃতি কন্যা’, ‘অনুশোচনা’, ‘এক দিনে সেলিব্রিটি’, ‘শেষ হয়েও হলো না শেষ’, ‘কেন মেঘ আসে হৃদয়ে আকাশে’ সহ কয়েকটি কাজ শেষ করেছি। তার মধ্যে একটি কাজ এরই মধ্যে মুক্তি পেয়েছে। বাকিগুলো শিগগিরই প্রচারে আসবে।

প্রথমবার
একক নাটকের দিক দিয়ে মোশাররফ করিম ভাইয়ের সঙ্গে প্রথমবার ‘এক দিনে সেলিব্রিটি’ নাটকে জুটি হয়ে কাজ করেছি। তবে এর আগে দুটি ধারাবাহিকে তার সহশিল্পী হিসেবে কাজ করেছি। কাজের দিক দিয়ে তৃতীয়বার জুটি হয়েছি। তিনি আমাদের দেশের সম্পদ। তার সঙ্গে কাজ করলে অনেক কিছু শেখা যায়। তার সঙ্গে আরও নতুন কিছু কাজের পরিকল্পনা হচ্ছে।

অলংকার চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

একদিনে সেলিব্রিটি
মোশাররফ ভাইয়ের সঙ্গে সবসময়ই কাজের অভিজ্ঞতা দারুণ। নাটকটি সামাজিক, পারিবারিক এবং মানুষে মানুষে প্রেম-বিশ্বাস-ভালোবাসার গল্পে তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) হিয়া মাল্টিমিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে নাটকটি মুক্তি পাবে। আমি সবসময় যে ঘরানার গল্প পছন্দ করি এটি তেমনই। বার্তা নির্ভর নাটক। আশা করি, সকলের অনেক বেশি ভালো লাগবে আমাদের এই নাটকটি।

গুরুত্ব
প্রতিটি কাজে যুক্ত হওয়ার আগে আমি গল্পে জোর দেই। সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে চাই না। গল্পে বার্তা আছে কিনা, দর্শক কি চায় সবকিছু চিন্তা করেই গল্প নির্বাচন করি। সংখ্যার চেয়ে আমি মানে বিশ্বাসী। কম কাজ করব কিন্তু যেটি করব দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে হবে।

ওটিটি
নাটকের পাশাপাশি ওটিটির কাজ নিয়েও পরিকল্পনা হচ্ছে। বর্তমানে ওটিটিতে অনেক ভালো-ভালো কাজ হচ্ছে। সাসপেন্স ঘরানার কিছু কাজ করতে চাই। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শিগগিরই দর্শক ওটিটিতে দেখতে পাবেন। আমাকে সাসপেন্স ঘরানার গল্প খুব টানে।

সিনেমা
আমি এ পর্যন্ত তিনটি সিনেমায় অভিনয় করেছি। তার মধ্যে ‘মুখোশ’ অনেক আগেই মুক্তি পেয়েছে। ‘ডেঞ্জার জোন’ ও ‘মুক্তির ছোট গল্প’ মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। প্রথম দুটি সিনেমাতে আমার উপস্থিতি স্বল্প সময়ের জন্য থাকলেও ‘মুক্তির ছোট গল্প’তে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছি। এই সিনেমাটির মাধ্যমে চিত্রনায়িকা হিসেবে অভিষেক হবে বড় পর্দায়। সিনেমাটি সরকারি অনুদানে নির্মিত হয়েছে। নির্মাণ করেছেন মাসুদ জাকারিয়া সাবিন।

মুক্তির ছোট গল্প
দেশ নিয়ে এই সিনেমার গল্প। ১৯৭১ এবং ২০২৪ দুটি প্রজন্ম এই সিনেমায় দেখা যাবে। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের গল্পগাঁথা। বর্তমান প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প তুলে ধরা হচ্ছে সিনেমাটির মাধ্যমে। তরুণ প্রজন্মের একটা বিরাট অংশ প্রতিনিয়ত মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। মাদকের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। মাদকের ভয়াবহতা গল্পে উঠে আসবে। আমি একজন সাংবাদিকের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। আমার চরিত্রের নাম নদী। তরুণ প্রজন্মকেই সঙ্গে নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে কাজ করে নদী। আবার মুক্তিযুদ্ধে যোদ্ধাদের যে ভূমিকা ছিল, তা তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের স্বপ্নের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে নদী তার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে চায়। এই সিনেমার পরিচালক মাসুদ জাকারিয়া সাবিন আমার ভীষণ প্রিয় একজন পরিচালক। তার নির্দেশনায় চলচ্চিত্রে কাজ করে সত্যিই আমি ভীষণ সন্তুষ্ট। আমি এ সিনেমার একজন হিসেবে সিনেমাটি নিয়ে ভীষণ আশাবাদী।

বাণিজ্যিক
বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমারও প্রস্তাব পাচ্ছি। প্রস্তাব পেলেই হবে না আমার একটা পরিকল্পনা আছে। ক্যারিয়ার নিয়ে প্রতিটি মানুষের একটা ভাবনা থাকে। আমারও আছে। আমি অনেক দূর যেতে চাই। সেই পথ এখনই দেখছি না। তবে আমি যেতে চাই। আমার কাজ দেখুন, আলোচনা ও সমালোচনা করুন।

অলংকার চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

নায়িকা না অভিনেত্রী
আমার দুই পরিচয়ই আছে। মানুষ দুই নামেই ডাকে। তবে অভিনেত্রী পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কারণ, অভিনয় না থাকলে গল্পের নায়িকা হতে পারব না। সেই দিক দিয়ে অভিনেত্রী অলংকারকে এগিয়ে রাখব।

স্বাচ্ছন্দ্য
আমি জুটিপ্রথায় বিশ্বাসী। তবে বেছে বেছে জুটি হতে চাই। জুটিতে আমার আলাদা পছন্দ নেই। যে মন থেকে অভিনয় করবে এবং আমার অভিনয়ের ভাষা বুঝতে পারবে তার সঙ্গেই কাজ হবে। শিল্প ও অভিনয় মনের মতো হওয়া জরুরি। তাছাড়া আমাদের মূল শক্তি দর্শক। যাদের সঙ্গে দর্শক দেখতে পছন্দ করবেন তাদের সঙ্গেই কাজ করব। মোশাররফ করিম, আব্দুন নূর সজল, শাহেদ শাহরিয়ার, জীবন রায়ের সঙ্গে দর্শক বেশি পছন্দ করেছে। আমিও কাজ করে আরাম পেয়েছি।

জীবনের সঙ্গে প্রেম
শিল্পীদের নিয়ে মানুষের অনেক কৌতূহল থাকে। যখন একজন শিল্পীর সঙ্গে বেশি কাজ হয় তখন অনেকেই অনেক কথা বলে। আসলে তেমন কিছুই নেই। দিনশেষে কেমিস্ট্রি দর্শক পছন্দ করলে পরিশ্রম সার্থক। ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি দিকই আছে। তবে আমি সমালোচনা ইতিবাচক ভাবে দেখি। এই ভেবে ভালো লাগে যে, মানুষ আমাকে নিয়ে চিন্তা করছে। কি বলছে সেটা বিষয় না। কথা বলছে সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে আমাদের নাটক খুবই ভালো হচ্ছে। ব্যক্তিজীবন নিয়ে আলোচনা না করে বেশি বেশি আমাদের কাজ দেখুন। কাজ নিয়ে আলোচনা করুন। এখনকার নির্মাতারা দারুণ কাজ করছেন। দর্শক কাজ দেখলে আমরা এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পাই।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!