‘শুধু তোমার জন্য’, ‘যে পাখি ঘর বোঝে না’, ‘আদরে রাখিও বন্ধু’র মতো শ্রুতিমধুর গান দিয়ে শ্রোতাদের মনে ভালোবাসার আসন করে নিয়েছেন শিল্পী ধ্রুব গুহ। এরপর আরও বেশকিছু গান দিয়ে শ্রোতা-দর্শকদের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি দেশের অডিও ইন্ডাস্ট্রি সমৃদ্ধ করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এই শিল্পী। আজ শ্রোতাপ্রিয় শিল্পী ধ্রুব গুহর জন্মদিন। বিশেষ দিন ও ইন্ডাস্ট্রির হালচাল নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে।
শুভ জন্মদিন
ধন্যবাদ। আসলে এখন আর জন্মদিন ওভাবে পালন করা হয় না। তারপরও সবার ভালোবাসায় অন্যরকম ঘোরের মধ্যে কাটবে। জন্মদিনে প্রথম যে কাজটা করি, তা হচ্ছে বাবা-মায়ের আশীর্বাদ নেই এবং স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। এরপর দিনের বেশির ভাগ সময়টা নিজের পরিবারের সঙ্গেই কাটানোর চেষ্টা করি। এ ছাড়াও নিজের প্রিয় কর্মস্থল ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাই। বরাবরের মতো এবারও সবার ভালোবাসা নিয়েই দিনটি কেটে যাবে। যারা সাদাকালো দিনটি রঙিন করে তুলে তাদের সবার প্রতি ভালোবাসা ও শুভকামনা সবসময়।
গানের খবর
নতুন গানের খবর এখনো দিতে পারছি না। তবে নতুন বছর নতুন গানের সংখ্যা বেশি হবে। দু-হাজার পঁচিশ হবে গানময়। একের অধিক গানের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে গানগুলোর প্রস্তুতি চলছে।
বিরতি
করোনা সহ নানা কারণে মাঝে গানে বিরতি গিয়েছে। ৫ বছরের বিরতি শেষে ‘দাগা’ গান নিয়ে আসি। এরপর আর নতুন গান প্রকাশ হয়নি। সামনেই নতুন গান আসবে। এখন ভেবেচিন্তে বাছাই করে কাজ করছি। চেষ্টা করছি ভিন্ন কিছু দেওয়ার। যে কারণে সময় নিয়ে গান করা।
ধ্রুব মিউজিক আমার গান
দেশে অনেক প্রতিভা লুকিয়ে আছে, যারা নিজে গান লিখে, নিজে সুর করে এবং নিজেই গায়। কিন্তু সুযোগের অভাবে নিজের সেই প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে না। এই অলরাউন্ডারদের জন্য ধ্রুব মিউজিক স্টেশন আয়োজন করেছে ‘ধ্রুব মিউজিক আমার গান’। কারোনার আগে এর উদ্যোগ নিলেও মহামারি প্রকট হলে কার্যক্রম স্থগিত করতে হয়। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দু-হাজার বিশ সাল থেকে পুনরায় এর কাজ শুরু হয়। অডিও অঙ্গনকে আরও সরব করতে এবং সংগীতের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের এই আয়োজন। বাংলা সংগীতের উৎকর্ষ সাধন তথা সুযোগের অভাবে যারা এতদিন নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারেনি তাদের যোগ্যতা তুলে ধরার লক্ষ্যেই প্রতিভা অন্বেষণের এই আয়োজনটি করা। শুরু থেকেই আমরা বেশ সাড়া পাচ্ছি। এরই মধ্যে এবারের পর্বের প্রতিযোগিতার সেরা বিশ জন নির্বাচিত হয়েছে। গানগুলো প্রস্তুত হয়েছে। চলতি মাস থেকেই ধারাবাহিকভাবে গানগুলো প্রকাশ পাবে।
গান এবং ইন্ডাস্ট্রির হালচাল
এখন গানের আবহ আছে। মাঝে কিছুটা স্থবির মধ্যে গিয়েছে। ক্রমে তা স্বাভাবিক হচ্ছে। এখন চারিদিকে গান ও স্টেজ শো হচ্ছে। নতুন নতুন গান ও শো হলে ইন্ডাস্ট্রি চাঙ্গা হয়। শো হচ্ছে শিল্পীদের মেলে ধরার অন্যতম একটি মাধ্যম। পরিবেশ ভালো থাকলে নতুন গান সৃষ্টি হয় এবং কাজের পরিধি বাড়ে। আমরা সবসময় বলি গানের রিটার্ন নেই। এটা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। প্রতিকূলতার মধ্যেই আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজতে হবে। এখন ইতিবাচক চিন্তাই করতে হবে। নেতিবাচক ভাবা যাবে না।
গান স্থায়ী হচ্ছে না
এখন গান প্রচুর হচ্ছে। কিন্তু স্থায়ী না হওয়ার কারণ সময়ের পরিবর্তন। সময়ের পরিক্রমায় শ্রোতা-দর্শকদের চাহিদা মাথায় রেখে সবার কাজ করতে হবে। পরিবর্তনটা আমাদের বুঝতে হবে। শুধু গানই হারিয়ে যাচ্ছে না, অনেক কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে। আগে মানুষে মানুষে যে হৃদ্যতা ছিল সেটা এখন অনেকটাই ডিজিটাল হয়ে গেছে। এআই যুগে এসে আগের মতো ভালোবাসা নেই। এটা যুগের পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তবে আমাদের মধ্যে পরিবর্তন দ্রুত গতিতে চলে আসে। আমরা এক জায়গায় স্থির থাকতে চাই না। অনেক সময় গান স্থায়ী না হওয়ার জন্য এটাও দায়ী।
উত্তরণ
এত সব কিছুর মধ্যেও আমাদের এ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। সবার এগিয়ে আসতে হবে। সবাই মিলে চেষ্টা করলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি হলে সব কিছুরই উন্নতি হবে। এককভাবে কেউ ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে নিতে পারবে না। বেশি বেশি গান তৈরি হতে হবে। বেশি গান হলে শিল্পীরা বাঁচতে পারবে। শিল্পীরা যেন দুস্থের কাতারে না চলে যায়। যদিও আমরা এটা বলে যাচ্ছি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তবুও বলব সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সভা-সেমিনার করতে হবে। রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব না। ধৈর্য ধরতে হবে আর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তাহলেই সাফল্য ধরা দিবেই।
আপনার মতামত লিখুন :