জনপ্রিয় অভিনেতা ও নির্মাতা হাসান জাহাঙ্গীর। এই অভিনেতা নাট্যজগতের দর্শকপ্রিয় এক নাম। বিশেষ করে ‘ময়মনসিংহের তোতা’ বললে এক নামেই তাকে চেনেন মানুষ। অভিনয় ও নির্মাণ দুটোকেই সমানভাবে সমন্বয় করে কাজ করছেন নিয়মিত। নিজ দেশের পর আমেরিকাসহ কয়েকটি দেশে এখন পর্যন্ত তিনি তিন ডজন বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেছেন। ছোট পর্দার গণ্ডি পেরিয়ে হাসান জাহাঙ্গীর সিনেমা নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে অচিরেই চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন। কাজ ও সমসাময়িক প্রসঙ্গে রূপালী বাংলাদেশ’র সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
ব্যস্ততা
আমেরিকাতে চিত্রনায়িকা মৌসুমীকে নিয়ে ‘কন্ট্রাক্ট বিয়ে’ নামের একটি ওয়েব সিরিজের কাজ করছি। এই প্রথম বাংলাদেশি পরিচালক হিসেবে আমেরিকাতে ওয়েব সিরিজের কাজ করছি। সিরিজটির কাজ এখনো বাকি। এই মুহূর্তে মৌসুমী আমেরিকা আর আমি দেশে থাকার কারণে আপাতত কাজটি বন্ধ রয়েছে। আগামী মাসে আমি আমেরিকা গিয়ে বাকি কাজ শেষ করব। ওয়েব সিরিজ ছাড়াও সেখানে অনেকগুলো প্রডাকশন করছি। এ ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশে কাজ করছি। বাংলাদেশকে আমি বিশ্ব দরবরে তুলে ধরছি কাজের মাধ্যমে। আমেরিকাতে সাতটির মতো বাংলা চ্যানেল আছে। সেগুলো বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে প্রচার হয়। সেখানে ৩৬টি বিঙ্গাপন নির্মাণ করেছি। বিঙ্গাপনগুলো বিশ্বের সব দেশে প্রচার হচ্ছে। এখনো বাংলাদেশের কোনো পরিচালক আমেরিকার মাটিতে সেটি পারেনি। আমেরিকাতে আরও বেশ কিছু কাজের পরিকল্পনা হচ্ছে। কানাডা, লন্ডন, দুবাই ও কাতারে কাজ করছি। বিশ্বব্যাপী কাজ করছি। আমি কাজ করা মানে বাংলাদেশকে তুলে ধরা। শুধু আমার জন্যই নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্য কাজ করছি। এটা বাংলাদেশের প্রাপ্তি।
সিরিজ
‘কন্ট্রাক্ট বিয়ে’ ওয়েব সিরিজটিতে সাসপেন্স থ্রিলার গল্পে দেখা যাবে মৌসুমীকে। তার চরিত্রকে ঘিরেই রহস্যের ঘেরা পুরো এই সিরিজটি। আমেরিকাতে পাড়ি জমানোর পর সেটেল হওয়ার জন্যে আমাদের দেশের মেয়েরা দুই বছরের কন্ট্রাক্ট বিয়ে করেন। তার পরের গল্পে উঠে আসবে পুরো বাংলাদেশ-আমেরিকার বাস্তব পরিস্থিতির দৃশ্যপট। এতে আমিও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছি। আশা করছি, এটি মুক্তি পেলে দর্শক পছন্দ করবেন। ওয়েব সিরিজটি বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাবে।
রাজনীতি
যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখন সবাই ধারনা করে থাকেন আমি বিএনপি করি। আবার যখন বিএনপি ক্ষমতায় আসে তখন অনেকেই মনে করেন আমি আওয়ামী লীগ করি। আসলে আমি একজন শিল্পী। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। কখনো হবোও না। আমি মনে করি আমার মতো অন্য শিল্পীদের কোনো রাজনৈতিক দলে থাকতে নেই। শিল্পী মানে তারকা। আমরা এমনিতেই জনপ্রিয়। দর্শকদের জন্যই আজকের হাসান জাহাঙ্গীর হয়েছি। তাই মনে করি শিল্পীদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকা উচিত নয়। দল না করলেও অনেক সময় শিল্পীদের সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে হয়। যদি তারা দল করে এবং দলীয় সুবিধা নেয় সেটি ভিন্ন বিষয়। তবে রাজনৈতিক দলের কারো সঙ্গে ছবি থাকলেই সে ওই দল করে সেটা ভাবা ঠিক হবে না। একজন শিল্পী সবার।

ডিপজল
মনোয়ার হোসেন ডিপজল ভাই বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য মানুষ। তিনি এফডিসিতে আসে না সেটা ভুল ধারনা। তিনি ভয় পাওয়ার লোক না। ডিপজল এক শতাংশ বাংলাদেশ। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে তার রাজত্ব। তিনি আগে থেকেই বিএনপির কর্মী। বর্তমানে ডিপজল ভাই শারীরিক ভাবে অসুস্থ আছেন। চোখের চিকিৎসা করাচ্ছেন। তাকে নিয়ে মালদ্বীপে একটি শো করার কথা ছিল কিন্তু অসুস্থতার কারণে তা বাতিল করতে হয়েছে। যে মানুষটি চোখের জন্য ঘর থেকেই বের হতে পারছেন না তাকে নিয়ে বিতর্কিত প্রশ্ন তোলা ঠিক হবে না। সবসময় মানুষকে তিনি সহায়তা করেন। বন্যার্তদের জন্য তিনি এবার অসংখ্য ট্রাক ত্রাণ দিয়েছেন। গত বছরও ১০ ট্রাক ত্রাণ দিয়েছেন। সে বরাবরই মানবিক মানুষ। গত ঈদে সাধারণ শিল্পীদের ১০ লাখ টাকা নিজ হাতে দিয়েছেন। ইন্ডাস্ট্রির মানুষের পাশে সে সবসময় থাকে। এখন পর্যন্ত কেউ তার কাছে গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসেনি। তাকে বিতর্ক করে এফডিসি আসা বন্ধ করা ঠিক হবে না। তিনি না আসলে ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি।
প্লট
বর্তমান সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটিই আমাদের মেনে নিতে হবে। দেশ এবং আমাদের মঙ্গলের জন্য অন্তবর্তী সরকার কাজ করছেন। তিনি যদি মনে করেন আরিফিন শুভর প্লট বাতিল করা দরকার তাহলে সেটা তিনি করতে পারেন। সে যেটি ভালো করেন সেটিই করবেন। ভালোকে ভালো এবং মন্দকে মন্দ বলতেই হবে। আমাদের অভিনয় শিল্পী সংঘ একটি সরকারি জমি পেয়েছেন। এটা শিল্পীদের সম্পদ। শুনেছি সেই জায়গা কারা যেন ভেঙেছে। শিল্পীদের নামে একটি জায়গা বরাদ্দ হলে সেখানে আঘাত করবে, শিল্পীদের জায়গা ছিনিয়ে নেবে এত বড় কার সাহস? এগুলো ঠিক না। এটা সকল শিল্পীদের। সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে অভিনয় শিল্পী সংঘের জমিটা যেন ঠিক থাকে।
সহশিল্পী
মৌসুমী মানেই একটা ব্যান্ড। তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বেও তুমুল জনপ্রিয়। তার বিপরীতে আমি কাজ করেছি। মৌসুমী থেকে শুরু করে পপি, সিমলা, আঁচল আঁখি; নাটকের আনিকা কবির শখ, মেহজাবীন চৌধুরী—এরকম জনপ্রিয় তারকারা আমার সহশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। আমাকে যে চরিত্রে মানায় সেই চরিত্রেই কাজ করি।
সিনেমা
দীর্ঘদিন ধরেই আমার স্বপ্ন ভালো একটি সিনেমা নির্মাণ করব। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালে আমার প্রথম সিনেমার নির্মাণ কাজ শুরু করব। আন্তর্জাতিক মানের একটি সিনেমা নির্মাণের চেষ্টা করছি। সিনেমাটি বিশ্বের সব দেশে মুক্তি দেওয়া হবে। দর্শক নতুনত্ব কিছু পাবে।
আপনার মতামত লিখুন :