ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫

প্রবীণদের পাশাপাশি দেশ গঠনে নবীনরাও আসুক: তাসরিফ খান

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৪, ০৫:২৯ পিএম

প্রবীণদের পাশাপাশি দেশ গঠনে নবীনরাও আসুক: তাসরিফ খান

তাসরিফ খান। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী তাসরিফ খান। যার শুরুটা একটা অলীক স্বপ্ন নিয়ে হলেও আজ তিনি স্বপ্নের সফল স্বপ্নবাজ। চার দেয়াল থেকে খোলা ছাদ, এরপর হাওয়ায় উড়ে উড়ে আজ সবার হৃদয়ে বিরাজ করছে তার গানের সুর। সময় সাপেক্ষে তিনি কখনো গান করেন গরিব দুঃখীদের জন্য আবার কখনো স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে হয়ে ওঠেন বিদ্রোহী, মজলুমদের হয়ে কথা বলেন গানের সুরে সুরে; কখনো তার দেখা মেলে বিপ্লবীদের ভিড়ে। তেমনি তাকে দেখা গেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনে। যাকে কেন্দ্র করে তার পুরনো একটি গান ছড়িয়ে গিয়েছিল নেটিজেনদের মাঝে। গত ২৩ জুলাই রাত ১ টায় মুখোমুখি হয়েছিলেন নির্মম ঘটনার। গান, ঘটনা এবং সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে তাসরিফ খান খোলামেলা কথা বলেছেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে।

রূপালী বাংলাদেশ: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আপনার একটি পুরনো গান ‘রাজার রাজ্যে সবাই গোলাম’ নেটিজেনদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছিল, গানটি কখন এবং কেন লেখা হয়েছিল?

তাসরিফ খান: ‘রাজার রাজ্যে সবাই গোলাম’ গানটি সম্ভবত ২০২০ কিংবা ২০২১ এর দিকে করা হয়েছিল। তখন স্বাধীনতা ছিল না। সে সময় অনেক কিছুই বলতে পারিনি। আসলে স্বৈরাচারী শাসনে মজলুমদের যেই পরিণতিটা হয় সেই নিপিড়ীত মানুষের জায়গা থেকে গানটি করেছিলাম।

রূপালী বাংলাদেশ: যেহেতু গানটির কথা তৎকালীন সরকার বিরোধী ছিল, গানটি যখন প্রকাশ পায় সে সময়ে কোনো রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন হতে হয়েছিল কী?

তাসরিফ খান: শুধু তখনই না, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে আমরা ‘আর কত, আর কত?’ শিরোনামে একটা গান করেছিলাম। তখন সে গানের জন্য আমাকে পরিবারের বাইরে থাকতে হয়েছিল অনেকদিন। পরবর্তীতে সে গানটি বাধ্য হয়ে নামিয়ে ফেলি। ফেসবুক-ইউটিউবে কোথাও হয়ত সে গানটি আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। সে গানের মতো এই গানটি নিয়েও আমি এবং কুঁড়েঘর ব্যান্ডের সদস্য শান্ত একটা নির্মম ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি। যার বিবরণ এরই মধ্যে ফেসবুকে দিয়েছি। আসলে যেকোনো সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাব থাকলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে না।

রূপালী বাংলাদেশ: তাসরিফ খানের শুরুটা সঙ্গীত দিয়ে হলেও বর্তমানে তিনি সমাজ সেবক হিসেবেই অধিক পরিচিত। কোন পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

তাসরিফ খান: যেই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এসেছি সেটা তো ভুলে যাওয়া যায় না। আর সমাজসেবার কথা বলতে গেলে আমি মহান কোনো সেবক না। মানুষকে ভালোবেসে পাশে থাকার চেষ্টা করি। সুতরাং দুইটা কাজই আমি ভালোবেসে করি।

রূপালী বাংলাদেশ: অনেকের ধারণা তাসরিফ খান কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল না! এর উত্তরে কি বলতে চান?

তাসরিফ খান: অনেকের না আমি বলব-এটা কিছু মানুষের ধারণা। আমি গত ৫ জুলাই থেকেই শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলি। যখন পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলোর সাথে কিছু প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি সবেমাত্র রাজপথে অংশ নেয়া শুরু করে। আমি আন্দোলনের সঙ্গেই ছিলাম। তারপরও যদি কেউ বদনাম করার চেষ্টা করে সেগুলো আমি দেখব না, আমি আমার কাজের দিকেই সবসময় লক্ষ্য রাখতে চাই।

রূপালী বাংলাদেশ: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ২৩ জুলাই রাত ১ টায় আপনার এবং কুঁড়েঘর ব্যান্ডের সদস্য শান্তর সঙ্গে ঘটে যাওয়া একটা নির্মম ঘটনা আমরা আপনার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। সেই বিষয়টি যদি পাঠক দর্শকদের মাঝে খুলে বলতেন—

তাসরিফ খান: সেদিন আমি এক সিনিয়র ইনফ্লুয়েন্সারের কথায় বিশ্বাস করে বাসার সামনে আসি একদল লোকের সঙ্গে দেখা করতে। গাড়ি থেকে ৬-৭ জনের মত নেমে আসে। ইনফ্লুয়েন্সার সাহেব আমাকে একটু সাইডে নিয়ে আস্তে করে বলে, ‘সাথে যারা আছে তারা একটা এজেন্সির লোক এবং আইন প্রয়োগ সংস্থার বাহিনির কয়েকজনও আছে এখানে।’ আমি তখন তার কাছে জানতে চাই তারা কেন এসেছেন, কি চাচ্ছেন! তারপর আমাকে অস্ত্রের মুখে একটা স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে পোস্ট করেতে বলে। সেদিন রাতেই আমাকে ভয় দেখানোর জন্য শান্তকে নির্মম ভাবে ওই বাহিনি মারধর করে।

রূপালী বাংলাদেশ: কে সেই ইনফ্লুয়েন্সার?

তাসরিফ খান: ফ্যামিলির কথা ভেবেই তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি চাই না আমার মতো কেউ বিপদে পড়ে বাড়ি ছাড়া হোক। কারণ তারা যখন আমাকে বাড়ি ছাড়া করেছিল আমি ফ্যামিলি থেকে দূরে ছিলাম এমনকি মায়ের ডায়াবেটিস বেড়ে ২৬/২৭ চলে যাওয়ার পরেও মাকে দেখতে যেতে পারিনি, তাই চাই না তাদের মতো ক্ষমতার অপব্যবহার করতে। তবে দ্বিতীয়বারের মতো এমন অন্যায় করলে ছাড় দেয়া হবে না।

রূপালী বাংলাদেশ: দেশের মধ্যে দুই দলের লড়াই হলে প্রশাসনকে কোন পক্ষে যাওয়া উচিত?

তাসরিফ খান: প্রশাসনকে অবশ্যই নিরপেক্ষ থাকা উচিত। সরকারের গোলাম নয়, দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।

রূপালী বাংলাদেশ: ফেসবুকে গুঞ্জন উঠেছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম চাকরির ব্যাপারে। এ নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

তাসরিফ খান: অবশ্যই ভালো হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির একটা ব্যবস্থা হবে। আর আমরা দেখেছি এই কাজে তারা পারদর্শী।

রূপালী বাংলাদেশ: শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুইজনকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা করা অনেকেই ঠিক মনে করছেন না। আপনার দৃষ্টিতে কেমন?

তাসরিফ খান: আমি কমপ্লিটলি ঠিক হিসেবে দেখছি। আমরা নতুন নেতৃত্ব দেখতে চাই। আমাদের সমকালীন স্বাধীন হওয়া অনেক দেশ, অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। অনেকতো দেখছি পুরনোদের। এবার প্রবীণদের পাশাপাশি দেশ গঠনে নবীনরাও আসুক। আমার মনে হয় তারা ভালো করবে দেশের জন্য।

রূপালী বাংলাদেশ: তরুণ প্রজন্মের কাছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনুসের অনেক নামডাক রয়েছে। তার কাছে কি প্রত্যাশা?

তাসরিফ খান: তিনি অনেক সম্মানী ব্যক্তি। আমরা আসলে খুব ভাগ্যবান তার মতো মানুষকে সরকার প্রধান হিসাবে পেয়েছি। এই মানুষকে আমরা যতবেশি ধরে রাখতে পারব ততই আমাদের মঙ্গল। আমার মনে হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ শেষ হলে তার মতো একজন মহান ব্যক্তিত্বকে যদি প্রেসিডেন্ট হিসাবে রাখা যায় তাহলে বাংলাদেশে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন সম্ভব।

রূপালী বাংলাদেশ: নতুন বাংলাদেশ নিয়ে অনেকের অনেক রকমের চাওয়া পাওয়া। নিশ্চয়ই আপনার মাঝেও কিছু চাওয়া বিরাজ করে, আমরা জানতে চাই; কেমন বাংলাদেশ চান?

তাসরিফ খান: সব সেক্টরে স্বাধীনতা থাকুক। গান হোক কিংবা কথা বলা-সব ক্ষেত্রেই সচ্ছলতা খুব বেশি জরুরি। দেশের কাছে এটাই চাওয়া।

সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি দেখতে পাবেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ-এর ইউটিউব এবং ফেসবুক পেজ এ।

রূপালী বাংলাদেশ/রুআ

Link copied!