বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ০৯:৫৯ এএম

কাঁচা কাঁঠালের যত গুণ

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ০৯:৫৯ এএম

কাঁচা কাঁঠালের যত গুণ

রান্না করা কাঁচা কাঁঠাল। ছবি: সংগৃহীত

কাঁচা কাঁঠাল বা এঁচোড় বাঙালি খাবারের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় উপাদান। এটি কাঁচা কাঁঠালের অপরিণত রূপ, যার স্বাদ ও গঠন বিশেষভাবে মাংসের মতো হওয়ায় একে ‘গাছের মাংস’ও বলা হয়। এঁচোড়ের খোসা মোটা ও খসখসে হলেও ভেতরের অংশ নরম এবং রান্নার পরে অপূর্ব রকমের সুস্বাদু হয়। এঁচোড় শুধু স্বাদের জন্য নয়, পুষ্টিগুণের দিক থেকেও সমৃদ্ধ। গ্রামবাংলার আবহাওয়া ও মাটিতে সহজেই জন্মানো এই ফল একসময় দরিদ্র মানুষের অন্যতম খাদ্য হলেও, আজ এটি অভিজাত রান্নার অংশ হয়ে উঠেছে। 

কাঁচা কাঁঠালের পুষ্টিগুণ

খাদ্যতন্তু: কাঁচা কাঁঠালের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার রয়েছে, যা হজমের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

ভিটামিন সি: কাঁচা কাঁঠালে রয়েছে ভালো মাত্রায় ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও সুস্থ রাখে। এ ছাড়া ভিটামিন সি দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে।

পটাসিয়াম: কাঁচা কাঁঠাল পটাসিয়ামে সমৃদ্ধ, যা হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য রক্ষা করে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং পেশির কার্যকারিতা ঠিক রাখে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: কাঁচা কাঁঠালে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

প্রোটিন: কাঁচা কাঁঠালে স্বাভাবিকভাবে কিছু পরিমাণ প্রোটিনও থাকে, যা শরীরের গঠন ও কোষ পুনর্গঠনে সহায়ক।

কম ক্যালোরি ও কম ফ্যাট: কাঁচা কাঁঠালের ক্যালোরি ও ফ্যাটের মাত্রা খুবই কম, তাই এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাওয়া মানুষের জন্য আদর্শ খাদ্য।

প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা কাঁঠালে সাধারণত পাওয়া যায়:
# শক্তি: প্রায় ৯৫–১১০ কিলোক্যালরি
# ফাইবার: ২.৫–৩ গ্রাম
# প্রোটিন: ১.৫–২ গ্রাম
# কার্বোহাইড্রেট: ২৩–২৫ গ্রাম
# ভিটামিন সি: প্রায় ১৩–১৮ মি.গ্রা.
# পটাসিয়াম: প্রায় ৩০০–৪৫০ মি.গ্রা.

কাঁচা কাঁঠাল খাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে । যা রান্নার ধরন, প্রক্রিয়া এবং রেসিপি অনুযায়ী আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।

কাঁচা কাঁঠাল খাওয়ার পদ্ধতি

কাঁচা কাঁঠাল প্রস্তুত করা: প্রথমে কাঁচা কাঁঠাল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হয়। তারপর তেল মাখানো হাতে (এঁচোড়ের আঠা এড়াতে) অথবা হাতে গ্লাভস পরে কাঁচা কাঁঠালের খোসা কেটে ফেলা হয়। ভেতরের নরম সাদা অংশ ও বীজ আলাদা করে কেটে ছোট ছোট টুকরা করা হয়। এরপর কাঁচা কাঁঠালের টুকরাগুলো হালকা সেদ্ধ করে রান্নার জন্য প্রস্তুত করা হয়।

রান্নার পদ্ধতি

ভুনা: মসলা দিয়ে শুকনো করে ভাজাভাজা ভুনা করা হয়। ‘কাঁচা কাঁঠালের ভুনা’ বাঙালিদের খুব প্রিয়।

ডালনা বা ঝোল: আলু ও মসলা দিয়ে ঝোল বা ডালনা তৈরি করা হয়। গ্রামীণ বাংলার ঘরোয়া খাবারে এটি খুব সাধারণ।

কোপ্তা: কাঁচা কাঁঠাল সেদ্ধ করে মেখে তা দিয়ে কোপ্তা (কাটলেটের মতো বল) বানিয়ে মসলা ঝোল বা গ্রেভিতে রান্না করা হয়।

পোলাও/বিরিয়ানি: কাঁচা কাঁঠাল ভেজে বা ভুনে পোলাও বা বিরিয়ানির সঙ্গে মেশানো হয়। এটি নিরামিষ বিরিয়ানি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

ভাজি বা নাস্তা আইটেম: হালকা মসলা মাখিয়ে কাঁচা কাঁঠালের ছোট ছোট টুকরো ডিপ ফ্রাই করেও খাওয়া হয়। এটি নাস্তা বা স্ন্যাক্স হিসেবে খাওয়া যায়।

আচার: কিছু অঞ্চলে কাঁচা কাঁঠালের ছোট ছোট টুকরো দিয়ে আচারও তৈরি করা হয়, যা বেশ দিন ধরে সংরক্ষণ করা যায়।


কাঁচা কাঁঠাল শুধু সুস্বাদু নয়, এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতাও আছে। 

কাঁচা কাঁঠালের উপকারিতা

হজম শক্তি বাড়ায়
কাঁচা কাঁঠালে থাকা উচ্চমাত্রার খাদ্যতন্তু (ফাইবার) অন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। নিয়মিত হজমের সমস্যা কমাতে কাঁচা কাঁঠাল বেশ কার্যকর।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
কাঁচা কাঁঠাল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে এটি কার্যকর।

হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
পটাসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় কাঁচা কাঁঠাল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এটি রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
কাঁচা কাঁঠাল কম ক্যালোরি ও উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাদ্য। তাই পেট ভরা অনুভূতি দেয় এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়।

ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় সহায়ক
কাঁচা কাঁঠালের জটিল কার্বোহাইড্রেট ধীরে ধীরে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়, ফলে রক্তে চিনির স্তর দ্রুত বাড়ে না। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে।

ত্বক ও চুলের জন্য ভালো
ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে কাঁচা কাঁঠাল ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চুলের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।

ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে
কাঁচা কাঁঠালের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান (যেমন ফ্ল্যাভোনয়েড, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস) শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিকেল প্রতিরোধ করে, যা ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।


কাঁচা কাঁঠালের অনেক উপকারী হলেও, ক্ষেত্রবিশেষে এর কিছু অপকারিতা আছে। 

কাঁচা কাঁঠালের অপকারিতা

গ্যাস বা বদহজমের সমস্যা- কাঁচা কাঁঠালে প্রচুর ফাইবার থাকে। তাই একসঙ্গে বেশি কাঁচা কাঁঠাল খেলে কারো কারো পেটে গ্যাস জমতে পারে বা বদহজম হতে পারে। বিশেষ করে যাদের হজম শক্তি দুর্বল, তাদের সমস্যা বাড়তে পারে।

অ্যালার্জির ঝুঁকি- কিছু মানুষের দেহে এঁচোড় খেলে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন: ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি, বা মুখ ফুলে যাওয়া। যদিও এই ধরনের প্রতিক্রিয়া বিরল, তবুও সতর্ক থাকা ভালো।

রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে- কাঁচা কাঁঠাল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো হলেও, ওষুধের সঙ্গে মিলিয়ে খাওয়ার সময় রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত কমে যেতে পারে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া)। তাই যাঁরা ডায়াবেটিসের ওষুধ খান, তাঁদের সচেতনভাবে খাওয়া উচিত।

কিডনি রোগীদের জন্য সতর্কতা-  কাঁচা কাঁঠালে পটাসিয়াম বেশি থাকে। কিডনি রোগীদের জন্য বেশি পটাসিয়াম বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ তাদের শরীর অতিরিক্ত পটাসিয়াম ঠিকমতো প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করতে পারে না। ফলে হাইপারক্যালেমিয়া (রক্তে অতিরিক্ত পটাসিয়াম) হতে পারে।

অতিরিক্ত খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে- কাঁচা কাঁঠাল যদিও কম ক্যালোরিযুক্ত, তবে যদি কাঁচা কাঁঠাল ভাজা বা অতিরিক্ত তেলে রান্না করে খাওয়া হয়, তাহলে তা উচ্চ-ক্যালোরি খাবারে পরিণত হয় এবং নিয়মিত অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকে।

আরবি/এসবি

Link copied!