সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৪:৪৪ পিএম

রম্য গল্প: শফিক সাহেবের ‘অটো-জীবন’

মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৪:৪৪ পিএম

রম্য গল্প: শফিক সাহেবের ‘অটো-জীবন’

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

শফিক সাহেব একসময় ছিলেন দুর্দান্ত পরিশ্রমী মানুষ। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে হেঁটে-হেঁটেই যাতায়াত করতেন। বন্ধুরা তাকে মজা করে ডাকত ‘স্ট্যামিনা কিং’। কিন্তু চাকরির কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি অলসতার শীর্ষে পৌঁছে গেলেন। হাঁটা তো দূরে থাক, বাসে চড়তে হলেও তার কষ্ট। সেজন্য ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চড়ে অফিসে যাতায়াত করা তার জীবনের একমাত্র সমাধান হয়ে দাঁড়ায়।
ঢাকা এমনিতেই যানজটের শহর! দিন দিন অটোরিকশার সংখ্যা এত বেড়ে যাচ্ছে যে, এর জন্য রাস্তায় যান চলাচল আর সম্ভবই হচ্ছিল না। রাস্তায় যেখানে-সেখানে জ্যাম লেগে যায়। সময়মতো অফিসে পৌঁছানো তো দূরের কথা, অনেক সময় অটোতেই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি।
অফিসের কলিগরা প্রতিদিন যানজটের সমস্যার সমাধানে অটোরিকশা নিষিদ্ধ করার আন্দোলনের আলোচনা করত। শফিক সাহেব নিজেও সিদ্ধান্ত নিলেন, এবার তিনিও আন্দোলনে যোগ দেবেন। যদিও তিনি নিজেও অটোরিকশায় যাতায়াত করেন, কিন্তু সবাই আন্দোলনে যাবে তিনি তো আর বসে থাকতে পারেন না। মানুষের সামনে ভাব দেখানোর জন্য হলেও তার আন্দোলনে যাওয়া চাই। তার ধারণা, আন্দোলন সফল হলে ঢাকার রাস্তায় আবার ‘ফাইভ স্টার’ পরিষ্কারভাব চলে আসবে। তাছাড়া অটোরিকশা নিষিদ্ধ হলে পরবর্তী যাতায়াত ব্যবস্থাও তিনি ভেবে রেখেছেন। তিনি ভেবেছেন, অটোরিকশা না থাকলে রাস্তা থাকবে ফাঁকা। তখন বাস বা পায়ে চলা রিকশায় যাতায়াত করলেও অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে। তাই পরেরদিন থেকেই তিনি সক্রিয় আন্দোলনকারী! সকালে অফিসে যাওয়ার সময় রাস্তায় একটু মিছিল করেন, বিকেলে ফেরার সময় আবার ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন। নিজের মধ্যে একটা লিডারের ভাব ফুটিয়ে তুলে ভাবেন, ‘আমি না থাকলে এ আন্দোলন জমতই না!’
একদিন, আন্দোলন সফল হলো। হাইকোর্ট থেকে নির্দেশ এলো, ঢাকায় অটোরিকশা নিষিদ্ধ। সেই দিন তিনি অফিসে ঢুকে বীরদর্পে ঘোষণা দিলেন, ‘দেখলেন, আপনাদের কষ্ট কমিয়ে দিলাম। আমার নেতৃত্বেই সব হলো!’ কলিগরা মুখ চেপে হাসল। কারণ তার ক্যারেক্টার সম্পর্কে সবাই জানত।
পরদিন সকালে তিনি খুশিমনে বাস ধরতে বেরোলেন। কিন্তু বাসে ওঠার আগেই শুরু হলো বিপত্তি। দৌড়ে বাসে উঠতে গিয়ে তিনি পা পিছলে কাদায় পড়ে গেলেন। আশপাশের লোকজন হেসে গড়াগড়ি! নিজের মানসম্মান বাঁচাতে তিনি পাবলিক টয়লেটে ঢুকে পড়লেন। শরীর ধুয়েমুছে বের হয়ে তিনি পায়ে চালানো রিকশায় উঠলেন। কিন্তু তপ্ত রোদে রিকশাও এত ধীরগতিতে চলছিল যে, রিকশাওয়ালা বলল, ‘স্যার, নেমে হাঁটেন, তাতে সময় বাঁচবে।’
অগত্যা তিনি হাঁটা ধরলেন। কিছুদূর যেতেই রাস্তার ধারে কুকুরের দল তাকে দেখে হুংকার দিয়ে তাড়া করল। প্রাণ হাতে নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে তিনি অফিসে পৌঁছালেন, ততক্ষণে দুপুর গড়িয়ে গেছে। বস তাকে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘এভাবে কীভাবে সম্ভব শফিক সাহেব? কাল সময়মতো না এলে আপনার চাকরিটা হয়তো আর...’
পরেরদিন আর কোনো ঝুঁকি না নিয়ে শফিক সাহেব ভাড়ায় বাইক নিয়ে বেরোলেন। উরাধুরা গতিতে চলছে বাইক; শফিক সাহেব তো মনে মনে খুশি। তিনি ভাবছেন আজকে বসকে চমকে দেওয়া যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার! মহাখালী আসতেই দেখলেন, রাস্তায় শতশত গাড়ি থেমে আছে। তিনি বুঝতে পারছিলেন না অটোরিকশা নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও এত যানজট কেন! তার মাথায় নানা রকম ভাবনা আসতে লাগল। ‘কোনো ভিআইপি যাচ্ছে নাকি? নাকি কোনো দুর্ঘটনা?’
কিন্তু এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর জানতে পারলেন, সামনে অটোরিকশা চালকেরা আন্দোলনে নেমেছে। তাদের বক্তব্য, ‘অটো বন্ধ করে আমাদের পথে বসানো হয়েছে, আমরা এই অনিয়ম মানবো না।’ আর তাদের স্লোগান, ‘তুমি কে, আমি কে, ব্যাটারি, ব্যাটরি’।
এবার শফিক সাহেবের মাথায় হাত। ‘আমি এত কষ্ট করে অটোরিকশা বন্ধ করালাম, আর এখন তারা আবার রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করছে?’
তিনি বাইক ঘুরিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন, কিন্তু দেখলেন পেছনের গাড়িগুলোও রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। বাধ্য হয়ে হাঁটতে শুরু করলেন। হাঁটতে-হাঁটতে নিজের পুরোনো ‘স্ট্যামিনা কিং’ জীবনের কথা মনে পড়লো। কিন্তু আধাঘণ্টার মধ্যেই তিনি ক্লান্ত হয়ে রাস্তার পাশে বসে পড়লেন।
অবশেষে বিকেলে অফিসে পৌঁছে দেখলেন, তার বস তার জন্য অপেক্ষা করছেন। কোনো কথা না বলে বস তার হাতে বহিষ্কারপত্র তুলে দিলেন। ‘মিস্টার শফিক, আপনার অনিয়ম আর সহ্য করা হচ্ছে না। সরি, আজই আপনার শেষ দিন।’
 

আরবি/ আরএফ

Link copied!