সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


পর্যটন ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৫:১৪ পিএম

এই শীতে ঘুরে আসুন জীবনানন্দ দাসের বরিশাল

পর্যটন ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৫:১৪ পিএম

এই শীতে ঘুরে আসুন জীবনানন্দ দাসের বরিশাল

ফাইল ছবি

বাংলা পঞ্জিকা অনুয়ায়ী এখন অগ্রহায়ণ মাস অর্থাৎ হেমন্ত কাল। ইতোমধ্যেই বেশ শীত পড়তে শুরু করেছে। কুয়াশার চাঁদরে ঢেকে প্রকৃতি জানান দিচ্ছে এখন শীতকাল। প্রকৃতির এমন স্নিগ্ধ আবেশে সব কিছুতেই অন্যরকম এক ভালো লাগা তৈরি হয়। আর এই সময়ে যদি ওঠে ভ্রমণের কথা তাহলে তো কথাই নেই।

শীতল পরশে দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে আসা যায় সহজেই। নেই ভ্যাপসা গরমের মতো অতিষ্ঠ হওয়ার কোনো কিছু। জীবনকে নতুন আঙ্গিকে দেখার এক দারুণ সময় এই শীত।

নদী, বন, কুয়াশা ঘেরা ফসলের ক্ষেত, খেঁজুর রস, পিঠার আমেজ আর শীতের অনুভূতি সব মিলিয়ে আপনার জন্য উপভোগ্য এক সময় কাটানোর জায়গা হতে পারে বরিশাল। সেই সঙ্গে বাংলার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন গুরুত্ববহ স্থান দেখে আসতে পারেন আপনি। গ্রাম বাংলার প্রকৃতির মোহনীয় রূপ আর পাখ-পাখালির ডাকে ওঠা ভোর দেখতে জীবনানন্দ দাসের বরিশালের সেই বাংলার রূপ দেখে আসাই যায় এই শীতে।

কীভাবে যাবেন বরিশাল

ঢাকা থেকে বরিশালে আপনি পৌঁছাতে পারেন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টায়। প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বেশ কিছু বাস রাজধানীর সায়েদাবাদবাস ও যাত্রাবাড়ী টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে বাসগুলো পদ্মা সেতু হয়ে নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে থামে।

শুধু সড়ক পথ নয়, নৌপথেও রাতের নীরবতাকে সঙ্গী করে আপনি খুব সহজে যেতে পারেন বরিশাল। ঢাকার সদরঘাট থেকে বরিশালের লঞ্চগুলো রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ছাড়ে। লঞ্চগুলো বরিশালে পৌঁছায় ভোর পাঁচটার দিকে।

বরিশালে কোথায় থাকবেন

 বরিশালে আপনি থাকতে পারেন সরকারি আবাসন সার্কিট হাউজ ও জেলা ডাক বাংলোয়। সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেসরকারি কর্মকর্তারাও কম খরচে থাকতে পারেন এসব হাউজে।

 এছাড়াও অনেকগুলো হোটেল-মোটেল গড়ে ওঠেছে বরিশাল নগরীতে। চাইলেই আপনার সাধ্য অনুযায়ী যে কোনো হোটেলে থাকতে পারেন।

 বরিশালে কী কী দেখবেন

 বাংলার ভেনিস খ্যাত বরিশাল জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে- লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, দুর্গাসাগর দিঘী, গুঠিয়া মসজিদ, ভাসমান পেয়ারা বাজার, সাতলা শাপলা গ্রাম, বিবির পুকুর, ব্রজমোহন কলেজ, জীবনানন্দ দাশের বাড়ি, অক্সফোর্ড মিশন গীর্জা, বঙ্গবন্ধু উদ্যান (বেলস পার্ক), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, শ্বেতপদ্ম পুকুর, মুকুন্দ দাসের কালিবাড়ী ও শের-ই-বাংলা জাদুঘর ইত্যাদি।

 গুঠিয়া মসজিদ

 অপার সৌন্দর্যের নিদর্শন বরিশালের বিখ্যাত বায়তুল আমান জামে মসজিদ, যা অনেকের কাছে ‘গুঠিয়া মসজিদ’ নামেও পরিচিত। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম এ জামে মসজিদ বরিশালের উজিরপুর থানার গুঠিয়া ইউনিয়নের চাংগুরিয়া গ্রামে অবস্থিত। এর পুরো কাঠামোতে মক্কা, জেদ্দা, মদিনা, বাগদাদ ও আজমিরের মাটি ও জমজম কূপের পানি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রায় ১৯৩ ফুট উচ্চতার মিনার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে মার্বেল পাথর। এই মসজিদে গেলে প্রশান্তিতে ভরে উঠবে আপনার হৃদয়। বাংলার সমৃদ্ধ ইতিহাসের নানান চক্রে ঘুরপাক খাবেন আপনি।

 ভিমরুলির ভাসমান পেয়ারা বাজার

ছোট খালজুড়ে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে পেয়ারা বিক্রি। অনেকটাই আশ্চর্য হবেন প্রথমে দেখে। পেয়ারার জন্যই আলাদা বাজার, আলাদা এক রাজ্য। যত খুশি কিনে নিতে পারেন কম দামে। নৌকায় ঘুরতে ঘুরতে পেয়ারা কেনা আর খাওয়ার যে অনুভূতি তা থেকে মনে হবে আপনি অন্য কোনো দেশে ভাসছেন। নৌকা ভরতি পেয়ারার রাজ্যে ছবি তোলার যেন জুড়ি নেই। ফ্রেমবন্দী করে নিজের কাছের এমন মনোরম দৃশ্যকে ছড়িয়ে দেয় অনেকেই।

 ঝালকাঠি জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ভাসমান বাজার। ভাসমান এ বাজারে পেয়ারার মৌসুমে সর্বোচ্চ বেচাকেনা হয়। বাজার চলে সপ্তাহের প্রতিদিন। বাজারের আশপাশে প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে একটি করে ডিঙ্গি নৌকা।

 সাতলা শাপলা গ্রাম

 শীতের প্রহরে বিল দেখার মতো দারুণ কিছুই যেন নেই। পাখ-পাখালির মেলা যেন বসে বিলে। নানান ফুলে ঘেরা থাকে বিলের প্রান্তর। তেমনই এক বিল বরিশালে। বাংলার চিরায়ত রূপ ধরা দেবে আপনার চোখে সেখানে গেলে।

লাল আর সবুজের মাখামাখি দূর থেকেই চোখে পড়বে। কাছে গেলে ধীরে ধীরে সবুজের পটভূমিতে লালের অস্তিত্ব আরো গাঢ় হয়ে ধরা দেবে। চোখ জুড়িয়ে দেবে জাতীয় ফুল শাপলার বাহারি সৌন্দর্য। আগাছা আর লতাগুল্মে ভরা বিলের পানিতে ফুটে আছে হাজার হাজার লাল শাপলা। সূর্যের সোনালি আভা শাপলাপাতার ফাঁকে ফাঁকে পানিতে প্রতিফলিত হয়ে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বিলের সৌন্দর্য। নৌকা কিংবা হাঁটুপানি মাড়িয়ে বিলের ভেতর ঢুকলে মনে হবে বাতাসের তালে তালে এপাশ-ওপাশ দুলতে দুলতে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে শাপলারা। সে হাসিতে বিলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে আনন্দধারা।

বরিশাল সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের উত্তর সাতলা গ্রাম। বিলের নামও গ্রামের নামেই- সাতলা বিল। তবে শাপলার রাজত্বের কারণে সেটি শাপলা বিল নামেই বেশি পরিচিতি পেয়েছে। এরইমধ্যে বরিশালের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিলের কথা ছড়িয়ে পড়েছে দেশ-বিদেশে। শীতের মৌসুম আপনার জন্য ভ্রমণের সেরা জায়গা হতে পারে এটি।

বিবির পুকুর পাড়

বরিশাল শহরের মধ্যেই পাবেন গ্রামীণ জীবনের ছোঁয়া। নগরীর প্রান্তে যেখানে দেখা মেলে না পানির উৎস সেখানে ব্যতিক্রম বরিশাল। বিবির পুকুর বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি শতবর্ষের পুরানো ও ঐতিহ্যবাহী কৃত্রিম জলাশয়। ১৯০৮ সালে উইলিয়াম কেরির পালিত সন্তান জিন্নাত বিবির উদ্যোগে জনগণের জলকষ্ট নিরসনের জন্য নগরীর সদর রোডের পূর্ব পাশে ৪০০ ফুট দীর্ঘ্য ও ১৮৫০ ফুট প্রশস্থ একটি পুকুর খনন করা হয়। পরবর্তীতে তার নাম অনুসারে এটির নাম হয় “বিবির পুকুর”। বাংলাদেশের অন্য কোন বিভাগীয় শহরের প্রাণকেন্দ্রে এরকম জলাশয় নেই এবং এটি বরিশাল নগরীর অন্যতম সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য বলে বিবেচিত হয়।

দুর্গাসাগর দীঘি

ঐতিহাসিক এক প্রেমের নিদর্শন দুর্গাসাগর দীঘি। জনশ্রুতি এবং তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, ১৭৮০ সালে এই দীঘিটি খনন করার তৎকালীন চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যেও পঞ্চদশ রাজা শিব নারায়ন রায়। বাংলায় বারো ভূইয়ার একজন ছিলেন তিনি। স্ত্রী দুর্গাবতীর প্রতি ভালোবাসার গভীরতা প্রমাণের জন্যই নাকি তিনি রাজকোষ থেকে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে দীঘিটি খনন করান।

কথিত আছে, রানী দুর্গাবতী একবারে যতোদূর হাঁটতে পেরেছিলেন ততোখানি জায়গা নিয়ে এই দীঘি খনন করা হয়। রানী দূর্গাবতীর নামেই দীঘিটির নাম করন করা হয় দুর্গাসাগর দীঘি। দীঘিটি ৪৫ একর ৪২ শতাংশ জমিজুড়ে।

কালের বিবর্তনে দীর্ঘিটির ঔজ্জ্বল্য কিছুটা হারিয়েছে। তবে প্রতি শীত মৌসুমের শুরুতে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে এখানে নানান প্রজাতির পাখি আসে। সরাইল ও বালিহাঁসসহ নানান প্রজাতির পাখি দীঘির মাঝখানে ঢিবিতে আশ্রয় নেয়। সাঁতার কাটে দীঘির স্বচ্ছ পানিতে।

জীবনানন্দ দাশের বাড়ি

বরিশাল শহরের বগুড়া রোডে এগিয়ে গেলে পথে পড়ে আম্বিয়া হাসপাতালের বিরাট ভবন। হাসপতালের পাশেই একটা বড় রিকশার গ্যারেজ। তার পাশেই গাছ-গাছালি ঘেরা ছায়া সুনিবিড় একটি বাড়ির দরোজা। প্রবেশ পথের মোট থামে হালকা লালচে মোটা থামে একটা নামফলক। ওই ফলকে কালো হরফে লেখা ‍‍`ধানসিড়ি‍‍`।

হ্যাঁ, অনেক দিন আগে এ বাড়িতে থাকতেন নিভৃতের কবি জীবনানন্দ দাশ।

তার কবিতায় খুঁজে পাওয়া যায় এই বাংলাকে। যে নিভৃত স্থান থেকে তিনি লিখতেন জীবনের তত্ত্ব, সেই স্থান দেখাটাও সৌভাগ্যের। মনে হবে এই বুঝি জীবনানন্দ ঘুরছে আশপাশে, আর লিখছেন ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর’ কিংবা ‘মুখোমুখি বসিবার সেই নাটোরের বনলতা সেন’।

বরিশালের এমন অপরূপ সৌন্দর্য দেখেই কবি লিখেছিলেন এমন অমর কবিতার বাণী।

তাই আর দেরি কেন জীবনানান্দের সেই বরিশাল দেখতে পা বাড়াতে পারেন এখনই।

আরবি/ এইচএম

Link copied!