সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৫, ০৩:২৬ পিএম

যমুনার বুকে জীবনের সংগ্রাম

মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৫, ০৩:২৬ পিএম

যমুনার বুকে জীবনের সংগ্রাম

ছবি: সংগৃহীত

তিস্তা, যমুনা আর ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে থাকা চরগুলো যেন প্রকৃতির হাতে আঁকা ছবি। শীতের কুয়াশায় ঢাকা প্রান্তরজুড়ে জমে থাকে কুয়াশা, সাদা চাদরের ন্যায়। কিন্তু এই নীরবতার মধ্যেও বাজতে থাকে মানুষের জীবন-সংগ্রামের গান। গাইবান্ধা জেলার চরাঞ্চলগুলো শীতকালে হয়ে ওঠে এক অনন্য কর্মস্থল, যেখানে প্রকৃতির প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে কৃষকরা মাটির বুকে নতুন জীবন সৃষ্টি করেন।

শীতকালে গাইবান্ধার চরের বিস্তীর্ণ জমিতে ভুট্টা, গম, জব, মুগ ডাল, মসুর, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, কালোজিরা, ধনিয়া, মিষ্টি আলুর মতো ফসল চাষ হয়। তবে এই ফসলগুলো ফলানোর পথ কখনোই সহজ নয়। নদীর পলিমাটি উর্বর হলেও ঘন কুয়াশা, হিমেল হাওয়া, আর সেচের অভাবে কৃষকদের প্রতিটি পদক্ষেপেই রয়েছে সংগ্রাম।

চরের কৃষকদের জীবন যেমন কঠিন, তেমনই আশাবাদী। কৃষক আবুল কাশেম জানান তার কষ্টের গল্প। ‘ভোরের ঠান্ডায় জমিতে নামতে হয়। ফসলের পরিচর্যা করতে গিয়ে শীতে হাত-পা জমে যায়। তবু কাজ থামে না। এই বছর ভুট্টা আর মরিচের চাষ করেছি। জমি ভালো ফলন দিচ্ছে, কিন্তু বাজারে দাম পাব কি না, সেই চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না।’

অন্যদিকে কৃষক রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘এবার আমি নানা পদের ফসল চাষ করছি। মাটির উর্বরতা ভালো থাকায় ফলনের আশা করি। কিন্তু সারের দাম আর সেচের খরচ সামলানো খুব কঠিন হয়ে যায়। এই ফসল ঘরে তুললেও বাজারে ন্যায্য দাম পাওয়া যেন স্বপ্নের মতো। মধ্যস্বত্বভোগীরা সব লুটে নেয়, আমরা শুধু খরচটা তুলতে গিয়েই হিমশিম খাই।’

গাইবান্ধার চরাঞ্চলে কৃষকরা আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি কিংবা উন্নত সেচব্যবস্থা ছাড়াই কাজ চালিয়ে যান। অনেক সময় নদীর পানি দূরে সরে গেলে সেচের অভাব দেখা দেয়। আর শীতের ঘন কুয়াশা ফসলের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। মরিচ, মিষ্টি আলু কিংবা ধনিয়া খেত পোকামাকড়ের আক্রমণের শিকার হয়। তার ওপর প্রতিদিনের শারীরিক শ্রমের পরও কৃষকদের একটি বড় অংশ তাদের কাজের যথাযথ মূল্য পান না।

এই অঞ্চলের ফসলগুলো স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন বাজারেও সরবরাহ করা হয়। ধনিয়া আর কালোজিরার মতো মসলা জাতীয় ফসলগুলোর চাহিদা অনেক বেশি। মরিচ, ভুট্টা আর গমের খেতগুলোর ফলনও ভালো হয়, তবে পরিবহন আর বাজারজাতকরণের সমস্যায় কৃষকদের আয় সীমিত হয়ে যায়।

চরের কৃষি শুধু অর্থনীতির একটি অংশ নয়, এটি এখানকার মানুষের জীবনধারা। ফসল ফলানোর এই সংগ্রাম একদিকে যেমন জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, অন্যদিকে এটি তাদের আত্মপরিচয়েরও অংশ। তবু উন্নত কৃষি ব্যবস্থার অভাব, বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, এবং প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার কারণে কৃষকদের জীবন ক্রমাগত অনিশ্চয়তায় ভরা।

তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র আর যমুনার কোলজুড়ে গড়ে ওঠা এই চরগুলো প্রকৃতির আশীর্বাদ। পলিমাটির উর্বরতায় চাষাবাদের সম্ভাবনা অশেষ। কিন্তু চরাঞ্চলের কৃষকদের জীবন যেন শীতের কুয়াশার মতো; যেখানে লুকিয়ে থাকে কষ্ট আর বঞ্চনার গল্প। শীতের জমিতে ফসল ফলানোর পরও তাদের দুঃখ লাঘব হয় না, কারণ বাজার তাদের ভাগ্যের ওপর সদয় হয় না।

এই গল্প শুধু গাইবান্ধার নয়, এটি দেশের প্রতিটি চরাঞ্চলের মানুষের গল্প। শীতের সকালে মাঠে নেমে শ্রমের বিনিময়ে যারা ফসল ফলান, তাদের জীবনের প্রতিটি অধ্যায় প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাক্ষ্য দেয়। চরাঞ্চলের কৃষকেরা মনে করেন, উন্নত সেচব্যবস্থা, ন্যায্যমূল্যের নিশ্চয়তা, এবং সরকারি সহায়তা পেলে চরাঞ্চলের কৃষি আরও এগিয়ে যেতে পারে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!