গরমে হাঁসফাঁস করছেন আর হঠাৎ রাস্তার পাশে একটা ঠান্ডা আখের রসের দোকান চোখে পড়ল- তখনকার আনন্দটা বলার মতো না! শুধু স্বাদেই নয়, আখের রস শরীর ঠান্ডা রাখে, শক্তি দেয়, আর পুষ্টিগুণেও বেশ এগিয়ে।
তবে যতই ভালো হোক- এই তত্ত্ব সবখানে ঠিক চলে না। আখের রসের যেমন অনেক উপকারিতা আছে, তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে, বিশেষ করে যদি নিয়ম মেনে না খাওয়া হয়।
চলুন, আজ একটু ডিটেলসে জেনে নিই এই ‘সুগার বুস্ট’ পানীয়ের গুণ-অগুণ।
আখ ও তার রস
আখ- বাংলার এক চিরচেনা ফসল। গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটলেই চোখে পড়ে লম্বা সবুজ আখের খেত, আর শহরে গ্রীষ্মকালের রাস্তার ধারে দেখা মেলে আখের রসের দোকান। টক-মিষ্টি এই রস শুধু যে গরমে তৃষ্ণা মেটায় তা নয়, বরং শরীরকে ঠান্ডা রাখে, শক্তি জোগায় আর রোগ প্রতিরোধেও কাজ করে।
চিনি তৈরির প্রধান কাঁচামাল হলেও কাঁচা আখের রসের গুণাগুণ আলাদা। আখ মূলত একটি ঘাসজাতীয় ফসল, যার রস থেকেই চিনি তৈরি হয়। তবে পরিশোধিত চিনির চেয়ে কাঁচা আখের রস অনেক বেশি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে আখের রস একটা প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিঙ্কের মতো কাজ করে।
আখের রসের উপকারিতা
শরীর ঠান্ডা রাখে
আখের রস শরীরের তাপমাত্রা কমায়, ডিহাইড্রেশন দূর করে এবং গরমকালে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
প্রাকৃতিক এনার্জি বুস্টার
এতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি (স্যাকারোজ) তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়, যা দীর্ঘক্ষণ ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
হজমে সহায়ক
আখের রস লিভার ও পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় করে। গ্যাস-অম্বল, কোষ্ঠকাঠিন্য বা অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে এটি উপকারি হতে পারে।
জন্ডিসে কার্যকরী
প্রচলিত চিকিৎসায় আখের রসকে জন্ডিসের জন্য ভীষণ উপকারী বলা হয়, কারণ এটি লিভার পরিষ্কার করে এবং পিত্ত নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ত্বক ও চুলের যত্নে সহায়ক
আখের রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্ল্যাভোনয়েড ত্বককে উজ্জ্বল রাখে, বলিরেখা কমায়, এবং চুলকে মজবুত করে।
ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ক্লিন করে
যাদের বারবার প্রস্রাবে জ্বালা বা সংক্রমণ হয়, আখের রস তাদের জন্য উপকারী হতে পারে।

আখের রসের অপকারিতা
রাস্তায় কেনা রস সবসময় নিরাপদ নয়
রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় তৈরি আখের রস অনেক সময় জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করে। হেপাটাইটিস A বা E ভাইরাস ছড়াতে পারে অপরিষ্কার পরিবেশ থেকে।
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
যদিও এটি প্রাকৃতিক চিনিযুক্ত, তবে উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়াতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের সাবধানে খাওয়া উচিত।
ওজন বাড়াতে সহায়ক!
আখের রস ক্যালোরি সমৃদ্ধ। নিয়মিত ও অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ওজন বাড়তে পারে, বিশেষ করে যারা কম চলাফেরা করেন।
পাকস্থলীর সমস্যা
খালি পেটে অতিরিক্ত আখের রস পান করলে অনেকের পেটে গ্যাস বা অম্বলের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
স্বাস্থ্যকরভাবে আখের রস খাওয়ার কিছু টিপস
# খোলা জায়গার বদলে হাইজিনিক দোকান বেছে নিন
# সকালে না খেয়ে, খাওয়ার ১-২ ঘণ্টা পর খান
# লেবু, আদা বা পুদিনা মিশিয়ে খেলে আরও উপকারী ও স্বাদবর্ধক হয়
# বরফ সাবধানে বেছে নিন-পরিশ্রুত পানি দিয়ে তৈরি কিনা নিশ্চিত হোন
আখের রস শুধুই একটা সুস্বাদু পানীয় নয়- এটা একরকম প্রাকৃতিক টনিকও বলা চলে। গরমে সতেজ থাকতে, রোগ প্রতিরোধে এবং শক্তি যোগাতে এর তুলনা নেই। তবে সচেতনতা ছাড়া কোনোকিছুই নিরাপদ নয়। তাই আখের রস খাও, কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে মাথায় রেখেই।
আপনার মতামত লিখুন :