ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

আদা চায়ের উপকারিতা-অপকারিতা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৫, ০২:২০ পিএম
আদা চায়ের রয়েছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা ছবি: সংগৃহীত

আদা শুধু রান্নার উপকরণ নয়, এটি এক অনন্য ভেষজ গাছের মূল যা হাজার বছর ধরে প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই আদা দিয়েই তৈরি করা যায় সুস্বাদু চা- যাকে আমরা সাধারণভাবে আদা চা বলে থাকি।

শুধু শরীর গরম রাখে না, বরং নানা রোগের প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হজমশক্তি বাড়ানো থেকে শুরু করে ঠান্ডা-সর্দি উপশম, মানসিক প্রশান্তি থেকে রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখা- আদা চায়ের গুণের শেষ নেই। এই প্রবন্ধে আমরা আদা চায়ের উপকারিতা, অপকারিতা এবং এর সহজ প্রস্তুত প্রণালি সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

আদা চায়ের উপকারিতা:

হজমে সহায়ক: আদা চা হজমশক্তি বাড়ায়, পেটের গ্যাস ও বমিভাব কমায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও এটি উপকারী।

সর্দি-কাশি ও ঠান্ডা উপশমে কার্যকর: আদা শরীর গরম রাখে এবং ঠান্ডাজনিত সমস্যা কমায়। গলা ব্যথা বা নাক বন্ধ থাকলে গরম আদা চা আরাম দেয়।

ব্যথা উপশমে সহায়ক: আদা প্রাকৃতিক প্রদাহ-নাশক। এটি শরীরের বিভিন্ন ব্যথা, যেমন: মাথাব্যথা, পেশির টান, বা জয়েন্টের ব্যথা হালকা করে।

রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে: আদা রক্তে জমাট বাঁধার সম্ভাবনা কমায় এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: আদায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

মানসিক চাপ কমায়: আদা চা মন শান্ত করে, ক্লান্তি দূর করে এবং কাজের ফাঁকে সতেজতা এনে দেয়।

Health benefits of ginger and simple ways to incorporate this zesty root  into your diet - Harvard Health

আদা চায়ের অপকারিতা:

যদিও আদা চা সাধারণত নিরাপদ, তবুও অতিরিক্ত বা নিয়ম বহির্ভূত সেবনে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে:

অতিরিক্ত গ্যাস বা অম্বল: অনেক সময় আদা চা পেটে জ্বালাপোড়া বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে, বিশেষ করে খালি পেটে খেলে।

রক্তপাতের ঝুঁকি: আদা রক্ত পাতলা করতে সাহায্য করে। তাই যারা রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ খান, তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আদা রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

গর্ভবতীদের জন্য সাবধানতা প্রয়োজন: গর্ভাবস্থায় আদা চা বমিভাব কমাতে সাহায্য করলেও অতিরিক্ত সেবন গর্ভধারণের প্রথম দিকে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।

রক্তচাপ কমাতে পারে: আদা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, তবে যাদের আগে থেকেই নিম্ন রক্তচাপ আছে, তাদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

আদা চা কখন খাবেন?

- সকালে খালি পেটে নয়, হালকা নাশতার পর খাওয়াই উত্তম  
- সর্দি-কাশির সময় দিনে ১-২ বার খাওয়া যেতে পারে  
- ঘুমানোর আগে খেলে কিছু মানুষের ঘুমে সমস্যা হতে পারে, তাই ব্যক্তিভেদে সময় ঠিক করুন

আদা চা তৈরির পদ্ধতি

প্রয়োজনীয় উপকরণ:

- পানি: ২ কাপ  
- তাজা আদা: ১ থেকে ২ ইঞ্চি (চাকতি করে কাটা বা কুচি করা)  
- চা পাতা: ১ চা চামচ (ইচ্ছামতো)  
- মধু বা চিনি: স্বাদ অনুযায়ী (মধু বেশি স্বাস্থ্যকর)  
- লেবুর রস: অল্প (ঐচ্ছিক)

তৈরির পদ্ধতি:

-প্রথমে ২ কাপ পানি একটি হাঁড়িতে জ্বাল দিন।  
-পানি ফুটতে শুরু করলে তাতে কুচি করা আদা দিয়ে দিন।  
-এই মিশ্রণটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ৫-৭ মিনিট ধরে ফুটিয়ে নিন (যত বেশি ফুটাবেন, তত বেশি আদার রস বের হবে)।  
-চাইলে এই সময় চা পাতা যোগ করতে পারেন, না হলে শুধু আদা চাও খাওয়া যেতে পারে।  
-ফুটে গেলে ছেঁকে নিন।  
-এবার কাপে ঢেলে মধু বা চিনি মেশান।  
-চাইলে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস যোগ করুন, এটি স্বাদ ও উপকারিতা বাড়ায়।

এবার গরম গরম পরিবেশন করুন। সকালে বা বিকেলে খালি পেটে না খেয়ে হালকা খাবারের পর চা খাওয়াই ভালো।

আদা চা একটি প্রাকৃতিক, সহজলভ্য এবং বহু উপকারিতাসম্পন্ন পানীয় হলেও অতিরিক্ত বা ভুলভাবে গ্রহণ করলে এটি দেহের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সঠিক পরিমাণে এবং নিজের শরীরের অবস্থা বুঝে আদা চা সেবন করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।