ফাস্টফুডের সাথে মেয়োনিজ ছাড়া যেন চলেই না। বিকেলে চায়ের আড্ডাতে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা স্যান্ডউইচ আছে, কিন্তু কীসের যেন একটা কমতি! ঠিক, মেয়োনিজ থাকলে নাস্তার টেবিল একদম পরিপূর্ণ হতো, তাই না? কিন্তু বাইরে থেকে কেনা এক বোতল মেয়োনিজের দাম তো অনেক, আবার মান নিয়েও মনে প্রশ্ন থেকে যায়। অনেক বাসায় সকালের নাস্তাতে টোস্ট বা পাউরুটির সাথে মাখিয়ে খেতে মেয়োনিজ ব্যবহার করা হয়।
মেয়োনিজ বানানোর জন্য খুব সাধারণ কিছু উপকরণ লাগে।
উপকরণ
ডিমের কুসুম– ১টা (তাজা ডিম)
তেল– ১ কাপ (সাধারণত রিফাইন্ড তেল বা অলিভ অয়েল)
ভিনেগার বা লেবুর রস– ১ টেবিল চামচ
সরিষার গুঁড়া বা পেস্ট (ঐচ্ছিক)– ১/২ চা চামচ (স্বাদ বাড়ানোর জন্য)
লবণ– স্বাদ অনুযায়ী
চিনি– ১/২ চা চামচ (ঐচ্ছিক, হালকা মিষ্টি স্বাদের জন্য)
সাদা মরিচের গুঁড়া– সামান্য (ঐচ্ছিক)
প্রস্তুত প্রণালি
একটি ব্লেন্ডারে প্রথমে ডিম, চিনি, গোলমরিচের গুঁড়া, লেবুর রস, ভিনেগার ১ মিনিট ব্লেন্ড করে নিন। এরপর এর মধ্যে অল্প অল্প করে তেল দিয়ে আবার ১ মিনিট ব্লেন্ড করে নিন। এভাবে ১ মিনিট পরপর ১ কাপ তেল ৩ বারে ডিমের মিশ্রণের সাথে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর পছন্দের খাবারের সাথে পরিবেশন করুন আপনার নিজের হাতের তৈরি মেয়োনিজ।
মেয়োনিজের পুষ্টিগুণ
ক্যালোরি- মেয়োনিজে প্রচুর পরিমাণ ক্যালোরি থাকে, কারণ এটি মূলত তেল দিয়ে তৈরি। এক টেবিল চামচ (প্রায় ১৫ গ্রাম) মেয়োনিজে প্রায় ৯০–১০০ ক্যালোরি থাকতে পারে।
ফ্যাট (চর্বি)- মেয়োনিজে উচ্চ মাত্রায় ফ্যাট থাকে, বিশেষ করে ‘মনোআনস্যাচুরেটেড’ ও ‘পলিআনস্যাচুরেটেড’ ফ্যাট, যা হার্টের জন্য তুলনামূলক ভালো। তবে অনেক মেয়োনিজে স্যাচুরেটেড ফ্যাটও থাকে, যা অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
প্রোটিন- খুব সামান্য পরিমাণে প্রোটিন থাকে (প্রধানত ডিমের অংশ থেকে)।
কার্বোহাইড্রেট- খুব কম পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা মূলত ভিনেগার বা চিনি থেকে আসে (কিছু মেয়োনিজে চিনি মেশানো হয়)।
ভিটামিন ও মিনারেলস
ভিটামিন ই: এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বক ও কোষ রক্ষায় সাহায্য করে।
ভিটামিন কে: রক্ত জমাট বাঁধার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়া অল্প পরিমাণে ভিটামিন এ, ডি এবং বি গ্রুপের কিছু ভিটামিন থাকতে পারে।
মেয়োনিজ ভেজ নাকি ননভেজ?
প্রথাগত মেয়োনিজ ডিম দিয়ে তৈরি হয়, তাই এটা ননভেজ (কারণ ডিম অনেক ধর্মীয় মতে ননভেজ ধরা হয়)। তবে এখন বাজারে বা বাড়িতে ডিম ছাড়া মেয়োনিজ (ভেগান মেয়োনিজ) বানানো হয়, যেগুলো ভেজিটেরিয়ান বা ভেগান হয়।
মেয়োনিজের কিছু উপকারিতাও রয়েছে। যদি আপনি তা সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করেন।
মেয়োনিজের উপকারিতা
ত্বকের যত্নে: মেয়োনিজে থাকা তেল এবং ডিমের উপাদান ত্বককে নরম করতে সহায়তা করে। অনেক সময় এটি ঘরোয়া ফেস মাস্ক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
চুলের পরিচর্যায়: মেয়োনিজ চুলের জন্য প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করতে পারে। এটি চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে এবং চুলের রুক্ষতা দূর করে।
ভালো ফ্যাটের উৎস: মেয়োনিজে থাকা তেল (বিশেষ করে যদি অলিভ অয়েল বা স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করা হয়) শরীরের জন্য উপকারী মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাট সরবরাহ করে, যা হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক হতে পারে।
ভিটামিন সরবরাহ করে: ডিমের কারণে মেয়োনিজে ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে থাকে, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যাবলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
খাদ্যের স্বাদ বাড়ায়: স্যান্ডউইচ, বার্গার, সালাদ ইত্যাদিতে মেয়োনিজ ব্যবহারে খাবারের স্বাদ ও মোলায়েমতা বাড়ে, ফলে অনেকেরই খাওয়ার রুচি বেড়ে যায়।
যেমন মেয়োনিজের কিছু উপকারিতা আছে, তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। বিশেষ করে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়।
মেয়োনিজের অপকারিতা
উচ্চ ক্যালরি ও চর্বি- মেয়োনিজে প্রচুর ক্যালরি ও ফ্যাট থাকে। নিয়মিত বা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ে।
খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ায়- বিশেষ করে যদি মেয়োনিজ স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা ট্রান্স ফ্যাট দিয়ে তৈরি হয়, তাহলে এটি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রিজারভেটিভ ও কেমিক্যাল- অনেক কমার্শিয়াল মেয়োনিজে বিভিন্ন ধরনের সংরক্ষণকারী রাসায়নিক এবং কৃত্রিম উপাদান মেশানো হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ- মেয়োনিজে কার্বোহাইড্রেট কম থাকলেও এতে থাকা অতিরিক্ত ফ্যাট ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়াতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
পাকস্থলীতে সমস্যা- কিছু মানুষের জন্য মেয়োনিজ হজম করতে সমস্যা হয়। এতে থাকা কাঁচা ডিমের উপাদান কারণে খাবার বিষক্রিয়া বা সালমোনেলা ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে, বিশেষ করে যদি মেয়োনিজ সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করা হয়।
চামড়ার সমস্যা- অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড ও মেয়োনিজ জাতীয় চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে ব্রণ ও চামড়ার নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।