ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

স্বাদের সঙ্গে স্বাস্থ্য সচেতনতা, আতাফলের যত উপকারিতা

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৫, ০২:৩২ পিএম
আতাফল ছবি: সংগৃহীত

মিষ্টি স্বাদ আর সুগন্ধে ভরপুর একটি ফল- আতা। দেখতে সাধারণ হলেও এই ফলটি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আঞ্চলিকভাবে জনপ্রিয় হলেও, অনেকেই হয়তো জানেন না যে, আতাতে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো থেকে শুরু করে হজম শক্তি উন্নত করতেও সাহায্য করে। 

আতাফল, যাকে অনেকেই সুগন্ধি ফল বা কাস্টার্ড অ্যাপল নামে চেনেন, আমাদের দেশের এক অত্যন্ত জনপ্রিয় মৌসুমি ফল। এর মিষ্টি স্বাদ, দানাদার টেক্সচার আর ঘ্রাণ অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু এই সুস্বাদু ফলের পেছনে লুকিয়ে রয়েছে স্বাস্থ্য উপকারিতা ও কিছু সতর্কতা। চলুন জেনে নিই- আতাফলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা এবং সচেতনভাবে এটি খাওয়ার সঠিক উপায়।

আতাফলে কোন কোন ভিটামিন রয়েছে?

আতাফল পুষ্টিতে ভরপুর। এতে রয়েছে:

# ভিটামিন সি– রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

# ভিটামিন বি-৬– স্নায়ুতন্ত্রের জন্য উপকারী

# ভিটামিন এ– ত্বক ও চোখের জন্য ভালো

# আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম– রক্তস্বল্পতা, রক্তচাপ এবং পেশী গঠনে সহায়তা করে

# ডায়েটারি ফাইবার– হজমে সাহায্য করে

Custard apple in hindi sales

আতাফল খাওয়ার উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: এতে থাকা ভিটামিন সি শরীরকে সর্দি-কাশি ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

হজমে সহায়ক: আতাতে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।

ত্বক ও চুলের জন্য ভালো: এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বককে উজ্জ্বল করে ও বয়সের ছাপ কমায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: আতাতে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে: ভিটামিন বি-৬ মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে এবং স্নায়ু সুস্থ রাখে।

আতাফল খাওয়ার অপকারিতা

চিনি বেশি: আতাতে প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ বেশি, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ওজন বৃদ্ধি: অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে।

বিচি খাওয়া বিপজ্জনক: আতার বিচি বিষাক্ত হতে পারে, ভুল করে চিবিয়ে খেলে পেটের সমস্যা বা বিষক্রিয়া হতে পারে।

অ্যালার্জির ঝুঁকি: কিছু মানুষের শরীরে এই ফলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

আতা ফল খাওয়ার ১০ দারুণ উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় আতাফল খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় আতাফল খাওয়া সাধারণত নিরাপদ এবং উপকারী, তবে পরিমাণে খাওয়া জরুরি। এতে থাকা ফোলেট ও আয়রন গর্ভবতী মায়ের রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সাহায্য করে।  

তবে, চিনি বেশি থাকায় যারা গ্যাস্ট্রেশনাল ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের সাবধানে খেতে হবে।

আতাফল খেলে কি ওজন বাড়ে?

হ্যাঁ, আতাতে প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ বেশি এবং এতে ক্যালোরিও রয়েছে। যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়, বিশেষ করে দৈনন্দিন ব্যায়াম ছাড়া, তাহলে ওজন বাড়তে পারে। তবে পরিমিত খেলে এটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।

আতা ফল খাওয়ার নিয়ম

# সকাল বা দুপুরে খাওয়া ভালো– এ সময় হজম শক্তি বেশি থাকে।
# খালি পেটে নয়– গ্যাস হতে পারে।
# পরিমাণে খাওয়া উচিত– দিনে ১টি মাঝারি আতা যথেষ্ট।

আতাফলের বিচির উপকারিতা

আতাফলের বিচি খাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি বিষাক্ত হতে পারে। তবে প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় আতার বিচির গুঁড়ো বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়:

# উকুন দূর করতে
# ব্যথা কমাতে
# ত্বকের ফুসকুড়িতে

তবে, এটি কখনোই না জেনে-মেনে ব্যবহার করা উচিত নয়। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া আতার বিচির গুঁড়ো ব্যবহার করা বিপজ্জনক হতে পারে।

শরিফা ও আতাফলের পার্থক্য

অনেকে আতা এবং শরিফাকে এক মনে করলেও, এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে:

আতাফল যেমন খেতে মজা, তেমনি শরীরের জন্যও অনেক উপকারি- শুধু জানতে হবে কীভাবে ও কখন খেতে হবে। পরিমাণে খেলে এটি শরীরের নানা উপকার করে, তবে অতিরিক্ত খেলে হতে পারে কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়াও। তাই সচেতনভাবে, সঠিক নিয়মে আতাফল খেয়ে উপভোগ করুন এর সব ভালো দিক।