ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫

পাকা আমের উপকারিতা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ০৫:৩২ এএম
ছবি: সংগৃহীত

পাকা আম বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন মৌসুমের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু ফল। মিষ্টি স্বাদ, মনোমুগ্ধকর সুগন্ধ ও স্বাস্থ্যগুণে ভরপুর এই ফলটি শুধুমাত্র খাবারের আনন্দ বাড়ায় না, একইসঙ্গে শরীরের জন্যও অসাধারণ উপকার বয়ে আনে।

আমরা জানবো, ১টা পাকা আমে কত ক্যালরি থাকে, রাতে আম খেলে কোনো ক্ষতি হয় কিনা, আম খাওয়ার উপকারিতা ও পাকা আম খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে বিস্তারিত।

১টা পাকা আমে কত ক্যালরি থাকে?

পাকা আম ক্যালরির একটি দারুণ উৎস। গড়ে একটি মাঝারি আকারের (প্রায় ২০০–২৫০ গ্রাম ওজনের) পাকা আমে প্রায় ১৫০–২০০ ক্যালরি থাকে। তবে আমের আকার, জাত এবং মিষ্টতার ওপর নির্ভর করে ক্যালরির পরিমাণ কিছুটা কম-বেশি হতে পারে। পাকা আমের এই ক্যালরির বেশিরভাগই আসে প্রাকৃতিক চিনি, যেমন গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ থেকে, যা শরীরকে দ্রুত শক্তি যোগায়। তাই যারা শরীরচর্চা করেন বা অতিরিক্ত এনার্জি প্রয়োজন তাদের জন্য পাকা আম হতে পারে একটি স্বাস্থ্যকর ফল।

রাতে আম খেলে কি ক্ষতি হয়?

রাতে আম খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ নয়, তবে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। আম প্রাকৃতিকভাবে উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের (GI) ফল, অর্থাৎ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়াতে পারে। যদি রাতের খাবারের পরে বেশি পরিমাণে আম খাওয়া হয়, তবে তা হজমে সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি কিংবা রক্তে শর্করার অস্বাভাবিকতা ঘটাতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের রাতে আম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত। তবে পরিমিত পরিমাণে, রাতের খাবারের অন্তত ১–২ ঘণ্টা পরে আম খেলে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না।

আম খাওয়ার কি কি উপকারিতা রয়েছে?

পাকা আম কেবল সুস্বাদুই নয়, এটি স্বাস্থ্য উপকারিতার এক চমৎকার প্যাকেজ। চলুন জেনে নিই পাকা আম খাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা:

১. পুষ্টি সমৃদ্ধ
পাকা আমে প্রচুর ভিটামিন এ, সি, ই এবং কে, পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।

২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
ভিটামিন সি এবং বিটা-ক্যারোটিনের উচ্চ উপস্থিতির কারণে আম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মজবুত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত আম খেলে ঠান্ডা, সর্দি, ফ্লু-সহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমে।

৩. হজমে সহায়ক
আমে এনজাইম জাতীয় উপাদান রয়েছে, যা খাদ্য হজমে সহায়তা করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং পেটের গ্যাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

৪. ত্বক ও চোখের যত্ন
পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত রাখে। নিয়মিত আম খাওয়া ত্বকের বার্ধক্য রোধ করতেও সহায়ক।

৫. হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা
পাকা আমে থাকা ফাইবার ও পটাশিয়াম হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

পাকা আম খাওয়ার সঠিক সময় কখন?

পাকা আম খাওয়ার সঠিক সময় নির্ভর করে আপনার দৈনন্দিন রুটিনের ওপর। তবে পুষ্টিবিদরা সাধারণত নিচের সময়গুলোতে আম খাওয়ার পরামর্শ দেন:

সকালে নাস্তার সাথে: হালকা নাস্তার পর একটি পাকা আম খেলে তা সারাদিনের শক্তি যোগায়।

দুপুরের খাবারের আগে বা পরে: দুপুরে খাওয়ার পরে ১টি আম হজম প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়।

শরীরচর্চার পরে: ব্যায়াম বা শরীরচর্চার পরে শরীর দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য পাকা আম খাওয়া খুবই উপকারী।

তবে খালি পেটে খুব বেশি আম খাওয়া ঠিক নয়। এতে অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। তাই হালকা কিছু খাবারের পরে বা হালকা নাস্তার সঙ্গে আম খাওয়াই ভালো।

পাকা আম শুধু স্বাদে অনন্য নয়, বরং পুষ্টি ও স্বাস্থ্য উপকারিতার দিক থেকেও অপরিসীম। তবে সব খাবারের মতোই, পরিমিত পরিমাণে খাওয়া জরুরি। অতিরিক্ত আম খেলে ওজন বৃদ্ধি বা রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে। সঠিক সময়ে ও পরিমাণে আম খেয়ে আপনি সহজেই এর সকল উপকারিতা উপভোগ করতে পারেন।