সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৫, ১২:২৫ এএম

রঙের ভাষায় গল্প বলেন যিনি

মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৫, ১২:২৫ এএম

রঙের ভাষায় গল্প বলেন যিনি

ছবি: সংগ্রহীত

শিল্প কখনো শব্দে বাঁধা পড়ে না, কখনো ক্যানভাসের গণ্ডিতেও সীমাবদ্ধ থাকে না। রেখা, রঙ আর ছন্দের মিশেলে যখন সৃষ্টি হয় এক নতুন ভাষা, তখনই জন্ম নেয় এক অনন্য শিল্পভুবন। সেই ভাষা বুঝতেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। সেই ভাষায় কথা বলতেন এস এম সুলতান।  আর সেই ভাষাতেই কথা বলে চলেছেন বর্তমান প্রজন্মের শিল্পীরা। তাদেরই একজন সাদিয়া তারাননুম; নিজের শিল্পচর্চা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে। তুলে ধরেছেন মির্জা হাসান মাহমুদ

শিল্পের প্রতি ভালোবাসা:
শৈশব থেকেই শিল্পের প্রতি ঝোঁক তার। ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকি ছিল নেশা। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রূপ নেয় গভীর ভালোবাসায়।  ব্যাক্তিগত জীবনে স্থাপত্যবিদ্যা অধ্যয়ন, সংসার, সন্তান; সব সামলেও তিনি আঁকার জন্য সময় বের করে নেন। শিল্পের প্রতি এই নিবেদনই তাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে সবসময়।

প্রকৃতি ও সৃষ্টির অনুপ্রেরণা:
সাদিয়া তারাননুম বিশ্বাস করেন, প্রকৃতি, সৃষ্টি আর স্রষ্টা‍‍`ই তার পথচলার মূল অনুপ্রেরণা। তার ভাষায়, ‘একজন শিল্পী হিসেবে আমার কাজের মূল অনুপ্রেরণা হলো সৃষ্টি আর স্রষ্টা। এই যে এত সুন্দর প্রকৃতি, মানুষ, জীব—এর প্রতিটা ডিটেইল, রঙ, জ্যামিতি, পানির স্রোত, বৃষ্টির ফোঁটা, পাতার শিরা-উপশিরা—সব কিছুর প্যাটার্ন আর ডিটেইল আমাকে প্রতিনিয়ত আঁকতে উৎসাহী করে।’

প্রচ্ছদে রঙের খেলায় গল্প বলা:
একজন লেখক যেমন শব্দ দিয়ে গল্প বোনেন, প্রচ্ছদ শিল্পীও তেমনই রঙের খেলায় তুলে ধরেন এক অব্যক্ত অনুভূতি। প্রচ্ছদ ডিজাইনের গুরুত্ব প্রসঙ্গে তিনি মনে করেন— ‘Don‍‍`t judge a book by its cover’ কথাটা ঠিক হলেও, ‘Judge a book by its cover’ হওয়া উচিত প্রচ্ছদ ডিজাইনের দৃষ্টিকোণ থেকে। কারণ প্রচ্ছদই পাঠকের সঙ্গে বইয়ের প্রথম সংযোগ তৈরি করে। ভূতের গল্পের বইয়ের প্রচ্ছদ যেমন রহস্যময় হতে হয়, তেমনি কবিতার বইয়ের প্রচ্ছদে থাকতে হয় একধরনের আবেগী সৌন্দর্য।’

শিল্পী ও লেখকের বোঝাপড়া:
প্রচ্ছদ ডিজাইনের ক্ষেত্রে লেখকের ভাবনা গুরুত্বপূর্ণ হলেও চূড়ান্ত শিল্পকর্মটি শিল্পীর নিজস্ব ব্যাখ্যায় ফুটে ওঠে। কখনো লেখকের নির্দিষ্ট চাহিদা থাকে, কখনো শিল্পীকেই কল্পনার জগৎ থেকে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে হয়। তবে অনেক সময় লেখক হুবহু কোনো প্রচ্ছদ অনুকরণ করতে চান, তখন তাকে বোঝাতে হয় কেন তার বইয়ের প্রচ্ছদ স্বকীয় হওয়া জরুরি। এই বোঝাপড়া থেকেই জন্ম নেয় সেরা প্রচ্ছদ।

নিজস্ব ঘরানা ও বৈশিষ্ট্য:
নির্দিষ্ট কোনো ধারার মধ্যে তিনি নিজেকে আটকে রাখেন না। তবে সাইকাডেলিক এবস্ট্রাক্ট এবং সাই-ফাই ঘরানার কাজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তার আঁকার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে; যেমন, শাপলা ফুল, কদম ফুল, এস্ট্রোনট চরিত্র ইত্যাদি। Shapla Fool নামে একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে তার, যেখানে মাঝে মাঝে নিজের কাজ আপলোড করেন।
সব কাজের মাঝে BAT-এর জন্য করা ৪০‍‍` x ৩০‍‍` দেয়ালচিত্র অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। বিশাল ক্যানভাসে, কম সময়ে কাজ শেষ করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন তিনি। কাজটা শেষ করার পর যে তৃপ্তি এসেছিল, সেটা তুলনাহীন। সাম্প্রতিক বইমেলায় করা হাসান ইথারের ‘প্রশ্ননামা’ বইয়ের প্রচ্ছদ তার অন্যতম প্রিয় কাজগুলোর একটি।

ডিজিটাল বনাম ট্র্যাডিশনাল পেইন্টিং:
ডিজিটাল আর ট্র্যাডিশনাল পেইন্টিং নিয়ে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন—‘ট্র্যাডিশনাল পেইন্টিংয়ের মজাই আলাদা। রঙ হাতে নিয়ে ক্যানভাসে মিশে যাওয়ার অনুভূতি অন্যরকম। তবে ডিজিটাল মাধ্যমেরও নিজস্ব সুবিধা আছে, বিশেষত যখন ভিডিও আর্ট বা ক্যারেক্টার মুভমেন্টের প্রয়োজন হয়।’

নতুনদের জন্য পরামর্শ:
বর্তমান সময়ে নতুনদের জন্য কিছু পরামর্শও দিয়েছেন গুণী এই শিল্পী। তিনি জানান, ‘নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে কাজ করতে হবে। এখন ইন্টারনেট আর ফ্রিল্যান্সিংয়ের যুগে শিল্পীদের অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে। আর যেহেতু আয়ের সুযোগ রয়েছে, তাই চিত্রকলাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করলেও ক্ষতি নেই।’ তিনি বিশ্বাস করেন, সত্যিকারের শিল্পীর কাজই তাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

ভবিষ্যৎ স্বপ্ন:
ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। শিল্প তার কাছে ভালো লাগা থেকে আসা, সেটাই করে যেতে চান। তবে স্বপ্ন আছে নির্জন কোনো গ্রামে গিয়ে ক্ষেত-খামার করার, আর ক্যানভাসে ছবি এঁকে দিন কাটানোর।

বাংলাদেশের চিত্রশিল্প:
বাংলাদেশের চিত্রশিল্পের অতীত গৌরবময়, বর্তমান সমৃদ্ধ এবং ভবিষ্যতেও তা আরও বিস্তৃত হবে বলে মনে করেন তিনি। তার মতে— ‘রাস্তায় রাস্তায় গ্রাফিটি, দেয়ালচিত্র, বিভিন্ন শিল্পকর্মই প্রমাণ করে—এই দেশে কত শিল্পী আছে, কত প্রতিভা লুকিয়ে আছে।’

পরিবার ও প্রেরণা:
পরিবারের সমর্থন তাকে সবসময় উৎসাহিত করেছে। ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা পাশে ছিলেন। আর বিয়ের পর স্বামী ইথারও তার কাজে উৎসাহ দিয়ে গেছেন। প্রচ্ছদ নিয়ে প্রচণ্ড খুঁতখুঁতে হওয়া সত্ত্বেও ইথার নিজের বইয়ের প্রচ্ছদের দায়িত্ব তার হাতে তুলে দিয়েছেন, যা তার জন্য বড় ভালোবাসা ও বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ।

শিল্পের পথ কখনো সহজ নয়, কিন্তু রঙ আর তুলির ছোঁয়ায় সেই পথ হয়ে ওঠে স্বপ্নের মতো। সাদিয়া তারাননুম সেই স্বপ্নকেই নিজের ক্যানভাসে বন্দি করে চলেছেন, একের পর এক অনন্য সৃষ্টি দিয়ে। তার তুলির আঁচড়, রঙের জাদু এবং প্রচ্ছদের ভাষা ভবিষ্যতেও শিল্পপ্রেমীদের মুগ্ধ করবে, নতুনদের পথ দেখাবে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!