জোহান ড্রিম পার্ক, ঝিনাইদহ জেলার এক জনপ্রিয় পর্যটন স্থান, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি স্বপ্নের জায়গা। কনকনে শীতের মধ্যে যখন আমরা সেখানে পৌঁছালাম, তখন চারপাশের সুন্দর পরিবেশ যেন এক মধুর অনুভূতি সঞ্চারিত করছিল। আমি এবং আমার পরিবার-স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, ছোট সন্তান অনন রহমান বাপ্পি, ভাস্তে কাকন এবং ছোট ভাস্তি মুসলিমা এখানে এসে খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম। বড় ছেলে অনিক রহমান বাঁধন যেতে পারেনি চাকরির সুবাদে। খুব ফিল করেছি ওকে।
আমরা একটি স্কুল ট্যুরে অংশ নিয়েছিলাম, যেখানে প্রায় ২০০ ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। পার্কটি ছিল একদম সবুজে ভরা, শান্তিপূর্ণ এবং মনোরম। আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল ফুলের বাগান, যেখানে সারা দুনিয়ার বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ফুটে ছিল। বাগানের প্রতিটি কোণে ছিল এমন এমন ফুল, যা দেখতে মনে হচ্ছিল যেন প্রকৃতি তাদের সব সৌন্দর্য এখানে নিংড়ে দিয়েছে। আমরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলে এবং ছবি তুলে সেখানে বেশ কিছু সময় কাটালাম।
এরপর আমরা পার্কের অন্য আকর্ষণীয় স্থানগুলো দেখতে গেলাম। নাগর দোলায় চড়ে, যেন আকাশে ভেসে যাওয়ার অনুভূতি হয়েছিল। দোলায় চড়ে আমাদের সবার হাসি-খুশি আর আনন্দ দেখে মনে হচ্ছিল, যেন সারা দুনিয়া আমাদেরই। স্প্রিট বোট ভ্রমণেও অনেক মজা পেয়েছিলাম। সুরেলা বাতাসের মধ্যে ভেসে যাওয়ার মতো মজা আর কোথাও পাওয়া যায় না। আমাদের সবার মধ্যে একটা আনন্দের স্রোত বয়ে যাচ্ছিল। নৌকায় দোলানোর সময় প্রকৃতির শান্ত পরিবেশ আমাদের কাছে এক অপরূপ দৃশ্য ছিল। সেখানে থাকা সবুজ গাছপালা এবং জলাশয়ের শান্ত পরিবেশ আমাদের মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দিয়েছিল।
জাদু শোটি আমাদের জন্য ছিল আরও একটি আকর্ষণীয় মুহূর্ত। মঞ্চে দাঁড়িয়ে কিছু দক্ষ শিল্পী আমাদের সামনে চমকপ্রদ কর্মকাণ্ড প্রদর্শন করছিলেন। তাদের জাদুতে আমরা সবাই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। প্রতিটি শো ছিল কৌতূহল এবং বিস্ময়ে পূর্ণ। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা
মুগ্ধ হয়ে তাদের কাজ দেখছিল এবং আমরা শিক্ষকরা তাদের প্রতি
শিহরিত হচ্ছিলাম।পার্কের সৌন্দর্য এবং এখানে আসা অন্য পর্যটকদের পরিবেশ থেকে আমরা সবার সঙ্গে আনন্দে ভরপুর কিছু মুহূর্ত কাটালাম। সবার হাতে ছিল ফোন এবং ক্যামেরা, যেন একে অপরের সঙ্গে ছবি তোলার মাধ্যমে এ সুন্দর মুহূর্তগুলো সঞ্চয় করতে পারে। আমার পরিবারও বেশ কিছু ছবি তুলেছিল, যা পরবর্তী সময়ে স্মৃতির পাতায় অমর হয়ে থাকবে।
এ ছাড়া আমাদের খাবারের অভিজ্ঞতাও ছিল অসাধারণ। আমরা সকালের খাবার খিচুড়ি এবং ডিম রান্না করে নিয়ে গিয়েছিলাম। পথে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে খেয়ে নিলাম। এটি ছিল এক ধরনের মজাদার অভিজ্ঞতা, কারণ সকালের ঠান্ডায় খিচুড়ি ও ডিম খাওয়ার অনুভূতি ছিল একেবারে আলাদা। এরপর, দুপুরে আমরা সবাই একসঙ্গে খাওয়া শুরু করলাম। খাসির রেজালা, মুড়িঘন্ট এ খাবারগুলো ছিল সবার জন্য অত্যন্ত মজাদার। খাবারের স্বাদ ছিল অতুলনীয়, এবং সবাই একে অপরকে খেতে দেখে আনন্দিত হচ্ছিল।
পার্কের পরিসর ছিল এতটাই বিস্তৃত, আমরা হেঁটে হেঁটে বেশ কিছু সময় কাটিয়েছি। পরিবেশ এতটা শান্ত এবং সুন্দর ছিল, সেখানে হাঁটতে হাঁটতে আমাদের মন প্রাণ পুরোপুরি প্রশান্ত হয়ে উঠেছিল। বিশেষত শিশুদের খুশি দেখে আমাদের মনে এক শান্তির অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ছিল। তারা পার্কের বিভিন্ন স্থানে খেলা করছিল, নাগর দোলায় চড়ে আনন্দ নিচ্ছিল এবং জাদু শোতে মুগ্ধ হচ্ছিল।
সবশেষে, জোহান ড্রিম পার্কের এক অভিজ্ঞতা ছিল আমাদের স্কুল ট্যুরের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে আসার মাধ্যমে আমরা প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেছি, নানা রকমের আকর্ষণীয় শো এবং বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছি এবং খাবারের দিক থেকেও এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। ফিরে আসার পথে, আমরা সবাই অনেক তৃপ্তি এবং আনন্দের সঙ্গে ঘরে ফিরেছিলাম। মনে হচ্ছিল, এরকম জায়গায় আবার কখনো এলে ভালো লাগবে, কারণ এখানে যে শান্তি এবং আনন্দ পাওয়া যায়, তা খুব কম
জায়গাতেই পাওয়া যায়।
সব মিলিয়ে, জোহান ড্রিম পার্ক আমাদের ভ্রমণকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছিল। এটি শুধু একটি পর্যটন স্থান নয়, বরং একটি জায়গা যেখানে প্রকৃতির মধ্যে শিথিলতা এবং আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। ভবিষ্যতেও এখানে ফেরার ইচ্ছা আমাদের সবার মধ্যে অটুট থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন :