শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৫, ১২:২৬ পিএম

রক্ত দানের উপকারিতা

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৫, ১২:২৬ পিএম

রক্ত দানের উপকারিতা

ছবি: সংগৃহীত

রক্তদান একটি মানবিক কাজ যা একজন ব্যক্তির জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে। রক্তদান শুধুমাত্র অন্যদের উপকারে আসে না বরং এটি রক্তদাতার জন্যও বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণ হতে পারে। 

রক্তদানের কিছু প্রধান উপকারিতা

 নতুন রক্তকণিকা তৈরি হয়

রক্তদান করার ফলে শরীরে নতুন রক্তকণিকা (হিমোগ্লোবিন) তৈরি হয়, যা শরীরের স্বাস্থ্য এবং শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি নতুন রক্ত উৎপাদন করে যা রক্তের সঞ্চালন এবং অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে।

 হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
নিয়মিত রক্তদান করলে শরীরে রক্তের আয়রনের মাত্রা কমে আসে। যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। অতিরিক্ত আয়রন হৃদযন্ত্রের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। রক্তদানের মাধ্যমে এই পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

কলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, রক্তদান করলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমে যায় যা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, নিয়মিত রক্তদান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। বিশেষত লিভার, ফুসফুস, এবং কোলন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে।

শরীরের স্বাস্থ্য ভালো থাকে
রক্তদান প্রক্রিয়া শরীরের মেটাবলিক কাজকে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। এটি শরীরকে নতুনভাবে জীবিত করে তোলে এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

মনস্তাত্ত্বিক উপকারিতা
রক্তদান মানসিকভাবে ভালো অনুভূতি দেয়। আপনি জানেন যে আপনার রক্ত অন্যদের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে, যা আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মান বৃদ্ধি করতে সহায়ক।

ওজন কমাতে সহায়ক
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, রক্তদান করতে গিয়ে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি খরচ হয়। রক্তদান একটি প্রাকৃতিক উপায়ে শরীর থেকে কিছু অতিরিক্ত ক্যালোরি বের করে দেয়।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা
রক্তদান করার আগে আপনার রক্তের চাপ, হিমোগ্লোবিনের স্তর, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা করা হয়। এটি আপনার স্বাস্থ্যের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে সাহায্য করতে পারে।

লাইফ সেভিং গিফট
এটি মানবতার জন্য একটি অমূল্য উপহার। একজন দাতা ব্যক্তির রক্ত অন্য কোনো রোগী, আহত ব্যক্তি বা জরুরি পরিস্থিতিতে থাকা ব্যক্তির জীবন বাঁচাতে সহায়তা করতে পারে।

রক্তদান করতে পারবেন যে ব্যক্তিরা

বয়স: ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী যেকোনো শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি।
ওজন: যাদের ওজন ৫০ কেজি বা তার বেশি (কখনো সর্বনিম্ন ৪৫ কেজি ধরা হয়)।
রক্তদান পরবর্তী সময়: একজন ব্যক্তি একবার রক্ত দেওয়ার ৪ মাস পর আবার রক্ত দিতে পারবেন।

রক্তদান করতে পারবেন না যে ব্যক্তিরা

হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম

পুরুষদের ন্যূনতম ১২ গ্রাম/ডেসিলিটার এবং নারীদের ন্যূনতম ১১ গ্রাম/ডেসিলিটার হিমোগ্লোবিন থাকতে হবে।

স্বাভাবিক রক্তচাপ ও তাপমাত্রা না থাকা

রক্তচাপ বা শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক না থাকলে রক্তদান করা উচিত নয়।

শ্বাস–প্রশ্বাসজনিত রোগ

যেমন হাঁপানি বা অ্যাজমা।

রক্তবাহিত রোগ

হেপাটাইটিস বি বা সি, জন্ডিস, এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি থাকলে রক্তদান করা যাবে না।

প্রসূতি বা ঋতুস্রাব চলাকালীন নারীরা

অন্তঃসত্ত্বা নারীরা, ঋতুস্রাব চলাকালীন বা সন্তান জন্মদানের এক বছরের মধ্যে রক্তদান করবেন না।

কিছু ওষুধ সেবনকারী

কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি, অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি ওষুধ সেবনকারীরা রক্তদান করবেন না।

বড় দুর্ঘটনা বা অস্ত্রোপচার

যাদের বিগত ৬ মাসের মধ্যে বড় কোনো দুর্ঘটনা বা অস্ত্রোপচার হয়েছে, তারা রক্তদান করবেন না।

রক্ত দানের অপকারিতা 

যদিও রক্তদান একটি মানবিক এবং উপকারী কাজ, তবে এটি কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থা এবং পরিস্থিতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। রক্তদান করার সময় কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা হতে পারে, তবে সেগুলি সাধারণত সাময়িক এবং নিয়মিত রক্তদান করলে উপযুক্ত চিকিৎসক বা রক্তদান কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুসরণ করলে এই ঝুঁকি কম থাকে। নিচে রক্তদানের কিছু অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো:

১. শরীরে শক্তির অভাব ও ক্লান্তি

রক্তদান করার পর কিছু মানুষ ক্লান্তি এবং শক্তির অভাব অনুভব করতে পারেন, কারণ শরীর কিছু পরিমাণ রক্ত হারিয়ে ফেলে। যদিও শরীর দ্রুত নতুন রক্ত তৈরি করতে সক্ষম, তবে তা হতে কিছু সময় লাগতে পারে।

২. লো ব্লাড প্রেশার 
রক্তদান করার পর কিছু মানুষের রক্তচাপ কমে যেতে পারে, যার ফলে মাথা ঘোরা, অস্থিরতা বা অবসাদ অনুভূত হতে পারে। এই পরিস্থিতি সাধারণত কিছু সময়ের জন্য থাকে, তবে কিছু মানুষকে চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হতে পারে।

৩. রক্তশূন্যতা 
শরীরের স্বাভাবিক রক্তের পরিমাণের তুলনায় বেশি রক্তদান করা হয়। তবে কিছু মানুষের মধ্যে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এটি শরীরের হিমোগ্লোবিন স্তর কমিয়ে দিতে পারে, যার ফলে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

৪. হালকা বা মাঝারি আঘাত 
রক্তদান করার সময় সুঁই ঢোকানোর স্থান থেকে কিছু মানুষ হালকা বা মাঝারি আঘাত (যেমন, কালো দাগ বা ফোলা) অনুভব করতে পারেন। এটি সাধারণত ক্ষতিকর নয় এবং কিছু দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।

৫. অনেক বেশি রক্তদান করার ফলে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা
যদি নিয়মিত বেশি পরিমাণে রক্তদান করা হয় বা রক্তদানের মধ্যে বিরতি না নেওয়া হয়, তবে শরীরের ইস্পাত (আয়রন) সঞ্চয় কমে যেতে পারে, যা আয়রন অভাব বা আয়রন কম থাকার সমস্যা তৈরি করতে পারে।

৭. মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব
কিছু মানুষের মধ্যে রক্তদান করার পর মানসিক চাপ বা উদ্বেগ অনুভূত হতে পারে। তবে এটি সাধারণত সাময়িক এবং এটি একে অপরকে সহানুভূতির মাধ্যমে মোকাবেলা করা যায়।

৮. শরীরে অতিরিক্ত তরল হারানো 
রক্তদান করার সময় কিছু পরিমাণ তরল শরীর থেকে বের হয়ে যায়। যা শরীরে পানির ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে। যদি এই ঘাটতি পর্যাপ্তভাবে পূর্ণ না করা হয় তবে ডিহাইড্রেশন হতে পারে।

সতর্কতা

# যারা খুব কম বয়সী, দুর্বল বা কিছু বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, তাদের রক্তদান করা উচিত নয়।
# রক্তদান করার আগে এবং পরে পর্যাপ্ত জল পান করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে শরীরের সঠিক হাইড্রেশন বজায় থাকে।
# রক্তদান করার আগে বা পরে যদি কোনো সমস্যা অনুভব করেন, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

রক্ত দিতে কত সময় লাগে

রক্তদান করতে সাধারণত ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি কিছুটা বেশি সময় নিতে পারে যার মধ্যে রক্ত সংগ্রহের প্রস্তুতি, দান প্রক্রিয়া এবং পরবর্তী পর্যবেক্ষণ অন্তর্ভুক্ত থাকে। পুরো প্রক্রিয়াটি সাধারণত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় নিতে পারে।

রক্তদান সম্পর্কে ইসলাম যা বলে

ইসলামে রক্তদান একটি মানবিক কাজ হিসেবে দেখা হয় এবং এটি সাধারণত উপকারী হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে এটি নির্দিষ্ট শর্তে এবং নিয়ম অনুসারে করতে হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে রক্তদান করার সম্পর্কিত কিছু মূল দিকনির্দেশনা নিম্নরূপ:

১. মানবতার প্রতি সহানুভূতি:
ইসলাম মানব জীবনের মূল্য অত্যন্ত উঁচু হিসেবে বিবেচনা করে এবং মানুষের জীবন রক্ষার জন্য যা যা করা সম্ভব তা করতে উৎসাহিত করে। কুরআনে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি একজন মানুষের জীবন রক্ষা করল, সে যেন সমস্ত মানব জাতির জীবন রক্ষা করল।” (সূরা আল-মায়িদা, ৫:৩২)

২. মোটিভেশন ও শর্ত:
রক্তদান যদি মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এবং সমাজের কল্যাণে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে করা হয় তবে এটি একটি ভালো কাজ যা ইসলামে অনুমোদিত। তবে এটি অবশ্যই কিছু শর্তে হতে হবে:

নিজের স্বাস্থ্য ক্ষতি না হওয়া: রক্তদান করার সময়, দাতা ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা ভাল থাকতে হবে এবং এটি তার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারবে না।
স্বেচ্ছায় রক্তদান করা: ইসলাম কাউকে জোর করে রক্তদান করতে বললে তা সমর্থন করে না। রক্তদান সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় হতে হবে।

৩. রক্তদানকারীর মর্যাদা:
ইসলামে রক্তদানকারীকে মানবতার প্রতি সহানুভূতিশীল এবং দয়ালু হিসেবে দেখা হয়। রক্তদান করার মাধ্যমে একজন মুসলমান তার সমাজে মানবিকতা এবং সহানুভূতি প্রকাশ করে। এটি একটি সদকা (দান) হিসেবে গণ্য হতে পারে। যার মাধ্যমে একজন মুসলমান আল্লাহর কাছে সাওয়াব অর্জন করতে পারেন।

৫. রক্তদান ও রোজা:
অনেক ইসলামি স্কলারদের মতে, রক্তদান রোজা ভঙ্গ করে না যদি তা দুর্বলতা সৃষ্টি না করে। তবে, দুর্বলতা অনুভব করলে বা শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে গেলে ইফতারের পর রক্তদান করা উত্তম। ইসলামী শরিয়তে, রোজা অবস্থায় রক্তদান করা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে যদি তা শরীরের শক্তি কমিয়ে দেয়। তাই রোজার সময় রক্তদান করলে শরীরের অবস্থা বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
 

আরবি/শিতি

Link copied!