রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ইমরান হোসেন রানা

প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৫, ১১:২৫ পিএম

শাবিপ্রবির কিলোরোড প্রতি ঋতুতেই দৃষ্টিনন্দন

ইমরান হোসেন রানা

প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৫, ১১:২৫ পিএম

শাবিপ্রবির কিলোরোড প্রতি ঋতুতেই দৃষ্টিনন্দন

সবুজে ঘেরা শাবিপ্রবির কিলোরোড

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) নাম আসলেই যে জায়গাটির কথা সবার আগে মনে পড়ে সেটি হচ্ছে কিলোরোড। এটি শুধুই একটি রাস্তা নয়, এটি হাজারো শিক্ষার্থীর আবেগের অনন্য প্রতিচ্ছবি। সময়ের পরিক্রমায় এই পথ হয়ে উঠেছে স্মৃতি, সংগ্রাম ও সৌন্দর্যের মেলবন্ধন। আর এই পথের প্রতিটি ধূলিকণা যেন সাক্ষী হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি মানুষের পদচিহ্নের হৃদয়ে মননে।

৯০০ মিটার দৈর্ঘের এই রাস্তাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে গোলচত্বর পর্যন্ত এই সড়কটি কিলোরোড হিসেবে ক্যাম্পাসজুড়ে বেশ পরিচিত। দুই ধারে সবুজ গাছের ঝিরিঝিরি হাওয়া। যেন গাছেরা মায়ের মতো মমতা চাদরে আগলে রেখেছে কিলোরোডকে।

জানা যায়, ১৯৯১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ড. সদরুদ্দীন আহমেদ চৌধুরীর আমলে মো. সালিকুল রহমান চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে এই গাছগুলো রোপণ করা হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বৃক্ষরাজি আজ হয়েছে ছায়ারশিবির, পরম আদরে দিনমান বিলায় ভালোবাসা, আর চারিপাশে সৃষ্টি করে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।

নতুন ঋতু এলেই কিলোরোড সাজে নতুন রূপে। গ্রীষ্মে কৃষ্ণচূড়া ও জারুলের রঙিন ছোঁয়ায় রাস্তা হয়ে ওঠে এক স্বপ্নীল চিত্রকর্ম। বর্ষায় সবুজ চাদরে যেন নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হয়, আর শীতে কুয়াশার মোড়কে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় তৈরি হয় এক রহস্যময় আবেশ।

বসন্তে কিলোরোড সাজে অন্যরকম আঙ্গিকে, একদিকে পাতাঝরার শব্দে মেতে ওঠে নিঃশব্দতার জাগানিয়ার গান, অন্যদিকে হাওয়া আসতেই গাছের পাতাগুলো ঝরে যায়। তখন গাছে কোনো পাতা থাকে না।

ওটা ছিল বসন্ত শুরুর কথা, বসন্ত শেষের দিকে গাচে গাছে নতুন পাতা নাচে, আবার কিছু কিছু গাছে দেখা যায় অর্কিড,অর্কিড এক অনিন্দ্য সুন্দর ফুল, কিছু কিছু ফুল মালার মতো গাছের ডাল থেকে ঝুলে থাকে।

কিলোরোডের দু’পাশে আছে লেক, এসব লেকে দেখা যায় লাল শাপলা। লেকের ধারে ও কিলোরোডের শেষের দিকে দেখা যায় জারুল ও কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছ।

বসন্তের মলিনতা আর গ্রীষ্মের তাপের মাঝে জারুল আর কৃষ্ণচূড়া যেন দু’টি রঙিন চিঠি—একটি নরম ভালোবাসার, আরেকটি দাহনের আগুনে লেখা। জারুলের নীলচে বেগুনিতে মিশে থাকে মায়া, কৃষ্ণচূড়ার লালে জ্বলে ওঠে হৃদয়ের গোপন আবেগ। দুটোই প্রকৃতির ভাষায় লেখা প্রেমপত্র—যা পড়লে হৃদয় একটু থেমে যেতে চায়।

কিলোরোড শুধু সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত নয়, এটি বহু আন্দোলন ও প্রতিবাদের নীরব সাক্ষী। এখানে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, অধিকার আদায়ের জন্য শ্লোগানে মুখরিত করেছেন আকাশ। রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে যখন স্লোগান ওঠে, তখন কিলোরোড সাক্ষী থাকে নতুন ইতিহাসের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০০১-০২ সেশনের শিক্ষার্থী মানিকের কিছু আবেগময় কথা, ‘প্রিয় ১ কিলো,তুমি এবং তোমার দু‍‍`ধারে বেড়ে উঠা বৃক্ষরাজির কাছে আজীবন ঋণী! ক্যাম্পাসের সবচেয়ে আপন যে তুমি ছিলে তা এখন মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করি! মেইন গেইট থেকে ক্যাম্পাসে তো ইচ্ছে করেই হেঁটে যেতাম শুধু তোমাকে ভালবেসে, সাথে প্রায়ই থাকতো বন্ধু সমীরণ, মৌসুমী, দেবী এবং রিদোয়ান সহ আরও অনেকেই ! নিশ্চয়ই তুমি আগের চেয়ে দ্বিগুন হয়েছ! প্রাক্তন প্রেয়সীর চেয়েও তোমাকে বেশী মিস করি!’

পরিসংখ্যান বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থী নাঈম সরকার কিলোরোড নিয়ে বলেন, ‘এককিলো শাবিপ্রবির প্রাণকেন্দ্র, যেখানে কেবল আড্ডা বা হাঁটাহাটি নয়, গড়ে উঠেছে ইতিহাস। এই রাস্তায় আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি, শ্লোগান তুলেছি, নির্ঘুম রাত পার করেছি আন্দোলনের মঞ্চ গড়ে। কিলোরোডেই প্রতিবাদের সুর বেজেছে, মাঝেমধ্যে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে মিছিলে কেঁপে উঠে পুরো ক্যাম্পাস, আমাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় অধিকার আদায়ের স্লোগান। কিলোরোড শুধু পা ফেলার জায়গা নয়, এটি আমাদের সাহস, আমাদের একতার প্রতীক। এই পথের প্রতিটি ইট-পাথরে লেগে আছে আন্দোলনের চিহ্ন, সংগ্রামের গল্প।’

এই রাস্তায় শিক্ষার্থীদের প্রাত্যহিক যাতায়াতের পাশাপাশি গড়ে ওঠে আড্ডা, হাসি-ঠাট্টা আর স্মৃতির সঞ্চয়। রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধ মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, জারুল ও নারিকেল গাছের ছায়াতলে বসে কত গল্প, কত অনুভূতি ভাগাভাগি হয়। কেউ নতুন বন্ধুত্ব গড়ে, কেউবা মনের গভীরে জমিয়ে রাখে না বলা কথাগুলো।

কেন্দ্রীয় মসজিদ, ভিসি মহোদয়ের বাসভবন, আইআইসিটি ভবন—এই সবকিছু মিলিয়েই কিলোরোড এক অনন্য সৌন্দর্যের প্রতীক।

এই পথ শুধু একটি রাস্তা নয়, এটি আবেগের প্রতিচ্ছবি, আন্দোলনের শক্তি, বন্ধুত্বের আশ্রয়স্থল। রাতের ল্যাম্পপোস্টের আলোয় যখন পথ আলোকিত হয়, তখন কিলোরোড যেন হয়ে ওঠে এক স্বপ্নের রাজপথ। এই পথের প্রতিটি ইট-পাথরে লেখা রয়েছে শিক্ষার্থীদের গল্প, ভালোবাসা ও সংগ্রামের ইতিহাস।

কিলোরোডের মায়া একবার যার হৃদয়ে দাগ কেটেছে, সে কখনোই একে ভুলতে পারে না। এটি শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অনুভূতির সুর।

আরবি/জেডি

Link copied!