ঘুমানোর আগে অনেকেই ফোন স্ক্রল করেন, অনেকে আবার সিনেমা বা সিরিজ দেখতে বসেন কিংবা বই পড়েন। ইচ্ছাকৃত এই দেরিতে ঘুমাতে যাওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। একটা সময় যা অনিদ্রা বা ইনসমনিয়ার মতো জটিলতার সৃষ্টি করে
বিশেষজ্ঞদের মতে,আগে বেশিরভাগ বয়ষ্ক মানুষ ঘুম না হওয়ার সমস্যায় ভুগতেন। আর বর্তমানে তরুণ বয়সেই ঘুমের সমস্যা দেখা দিচ্ছে অনেকের। রাত জেগে স্মার্টফোন ব্যবহার আর সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি অনেকের রাত জাগার অভ্যাস আরও বাড়িয়েছে। অনেকে তো সারারাত জেগে ভোরবেলার দিকেই ঘুমোতে যাচ্ছেন।
রাত জাগার কিছু উপকারিতা আছে বটে, যদিও এটা সবার জন্য উপকারী নয়। তবে সঠিকভাবে যদি রাত জাগা যায়, বা যাকে বলে "নাইট আওল" হওয়া—তা হলে কিছু ভালো দিক পাওয়া যায়।
রাত জাগার উপকারিতা
শান্ত পরিবেশে কাজ করার সুযোগ- রাতের বেলা চারপাশে কম শব্দ থাকে, কম ব্যস্ততা থাকে। যারা একান্তে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে ভালোবাসে, তাদের জন্য এটা আদর্শ সময়।
সৃজনশীল চিন্তা বেড়ে যায়- অনেক লেখক, শিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী রাতে কাজ করতে পছন্দ করেন কারণ এই সময়টা নীরব ও আবেগঘন, যা সৃজনশীল চিন্তার জন্য ভালো।
নিজের জন্য সময়- দিনের ব্যস্ততায় নিজের সঙ্গে সময় কাটানো যায় না অনেক সময়। রাতের নীরবতায় আত্মজিজ্ঞাসা, বই পড়া বা নিজের পছন্দের কিছু করা যায়।
স্ট্রেস কমে যেতে পারে (কখনো কখনো)- যদি রাতের পরিবেশ শান্ত এবং চাপমুক্ত হয়, তবে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি আসতে পারে।
নতুন পরিকল্পনা করতে সুবিধা- অনেকেই বলেন, তাদের সেরা আইডিয়া আসে গভীর রাতে। কারণ তখন মাথা পরিষ্কার থাকে, বাইরের প্রভাব কম থাকে।
সারাদিনে কাজ করার জন্য শরীরে শক্তির প্রয়োজন। পর্যাপ্ত সময় না ঘুমালে নানা জটিলতা দেখা দেয়। শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি দেখা দেয় মানসিক সমস্যা। চলুন জেনে নেওয়া যাক রাত জাগার ফলে দেখা দেয় এমন কিছু সমস্যা সম্পর্কে।
রাত জাগার অপকারিতা
অনিদ্রা- নিয়মিত দেরি করে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে কর্মক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমনকি ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
ক্লান্তি ও তন্দ্রা- রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবের ফলে দিনের বেলা ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম বা তন্দ্রাভাব দেখা দিতে পারে। যা কর্মজীবীদের প্রাতিষ্ঠানিক কাজে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। ফলে কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
খিটখিটে মেজাজ- রাত জাগা ও অপর্যাপ্ত ঘুম মেজাজ খিটখিটে করে তোলে। ফলে বিরক্তি, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি- রাত জাগার অভ্যাস দীর্ঘস্থায়ী হলে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকির বাড়ে।
দিনের পর দিন রাত জাগার অভ্যাস শারীরিক ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তাইতো কম বয়সেই মানুষের শরীরে দানা বাঁধছে নানা ধরনের রোগ। অভ্যাসের বদল কিন্তু এসব সমস্যা থেকে রেহাই দিতে পারে।
ঘুমের সময় ঠিক রাখুন
প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে ঘুমান এবং ঘুম থেকে উঠুন। এমনকি ছুটির দিনেও এই চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। ঘুমানোর আগে ভারী কোনো কাজ করবেন না। যে ঘরে আপনি থাকেন, সে ঘরটিকেই ঘুমানোর জন্যই নিদিষ্ট করুন। চেষ্টা করুন আপনার শোবার ঘরে যেন টেলিভিশন না থাকে। শোবার ঘরের জানালায় রাখুন ভারী পর্দা। কারণ অন্ধকার আপনার চোখকে প্রশান্তি দেবে। এতে আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন। ঘুমানোর সময় বিছানার পাশে স্মার্টফোন রাখবেন না। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে ফোন স্ক্রল করা বাদ দিন।
ঘুমানোর প্রস্তুতি
ঘুমের আগে ভারী খাবার খাবেন না। ঘুমানোর ঘণ্টা দুয়েক আগে কুসুম গরম পানিতে গোসল করে নিতে পারেন। এতে শরীরের তাপমাত্রা কমবে। আবার ঘুমানোর আগে কম আলোতে পড়তে পারেন পছন্দের কোনো বই। মন শান্ত করতে গান শুনতে পারেন। এই বিষয়গুলো আপনার পেশিগুলোকে শান্ত করবে এবং আপনি ঘুমের জগতে তলিয়ে যেতে পারবেন সহজে। ঘুমানোর আগে কফি, চা পান করবেন না। ঘুমাতে যাওয়ার আগে মেডিটেশন করতে পারেন।
আপনার মতামত লিখুন :