মাথা ন্যাড়া করলে চুল ঘন হয়- এমন ধারণা বহুকাল থেকে প্রচলিত। আবার এতে চুলের মানও উন্নত হয় এবং টাক হওয়া ঠেকানো যায় এমনটাও অনেকে বিশ্বাস করেন। এ কারণেই তরুণদের মধ্যে মাথা ন্যাড়ার ধারণাও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মাথা ন্যাড়া করলে আসলেই কি এভাবে চুল গাঢ় বা ঘন হয়? মাথা ন্যাড়া করলে টাক হওয়া ঠেকানো যায়? নাকি এটি কেবলই একটি ভুল ধারণা? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
মাথা ন্যাড়া করার অনেকগুলো উপকারিতা আছে, যদিও এটা অনেকটাই ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর নির্ভর করে।
মাথা ন্যাড়া করার উপকারিতা
গরমে আরাম- গ্রীষ্মকালে মাথায় ঘাম কম হয়। ঠান্ডা অনুভব হয় এবং শরীর কিছুটা ঠান্ডা থাকে।
চুল পড়ার চিন্তা নেই- যাদের চুল পড়ে যাচ্ছে বা পাতলা হয়ে যাচ্ছে,তারা ন্যাড়া হয়ে মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকতে পারেন।
খরচ কম- শ্যাম্পু, তেল, হেয়ার প্রোডাক্ট, সেলুন—সব কিছুর খরচ কমে যায়।
নতুন শুরু- অনেকেই জীবনের কোনো অধ্যায় শেষ করে একেবারে নতুনভাবে শুরু করতে মাথা ন্যাড়া করেন—একটা সিম্বলিক রিফ্রেশ।
মাথা ন্যাড়া করার উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে।
মাথা ন্যাড়া করার অপকারিতা
সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব- চুল না থাকলে মাথার ত্বক সরাসরি সূর্যের আলোয় পড়ে, ফলে সানবার্ন বা ত্বক পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। নিয়মিত বাইরে গেলে সানস্ক্রিন বা টুপি ব্যবহার না করলে সমস্যা হতে পারে।
মাথা আঘাত পাওয়ার ভয়- চুল একটা প্রাকৃতিক কুশনের মতো কাজ করে। মাথায় চুল না থাকলে সামান্য আঘাতেও ব্যথা বেশি লাগতে পারে।
ঠান্ডা লাগা- শীতে মাথায় চুল না থাকলে শরীর অনেক বেশি ঠান্ডা অনুভব করতে পারে। সর্দি-কাশি বা মাথাব্যথা হতে পারে।
স্ক্যাল্পের ইনফেকশন- মাথা ন্যাড়া করার সময় যদি নোংরা ব্লেড বা রেজার ব্যবহার করা হয়, তাহলে স্ক্যাল্প কেটে যেতে পারে বা ইনফেকশন হতে পারে।
সামাজিক বা মানসিক চাপ- অনেকে মাথা ন্যাড়া দেখে প্রশ্ন করে বা হাসাহাসি করে। যেটা কিছু মানুষের জন্য অস্বস্তিকর বা মানসিকভাবে চাপের হতে পারে। নিজেকে নিয়ে অস্বস্তি বা আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি হতে পারে, বিশেষ করে যদি এটা প্রথমবার হয়।
মাথা ন্যাড়া করা নিয়ে বিজ্ঞান কিছু নির্দিষ্ট দিক থেকে ব্যাখ্যা দেয়। বিশেষ করে ত্বকের স্বাস্থ্য,তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, চুলের বৃদ্ধি, আর মানসিক প্রভাবের দিক দিয়ে।
মাথা ন্যাড়া করা নিয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
চুল ন্যাড়া করলে চুল ঘন হয় এটা কি সত্যি?
বিজ্ঞান বলছে: না, এটা মিথ। চুল ন্যাড়া করলে চুল ঘন হয় না। চুল কাটলে বা ন্যাড়া করলে শুধু চুলের ডগা মোটা দেখায়, তাই নতুন চুল তুলনামূলক ঘন মনে হয়। কিন্তু আসলে চুলের সংখ্যা বা গোঁড়ার গঠন বদলায় না।
স্ক্যাল্পের পরিচ্ছন্নতা বাড়ে?
বিজ্ঞান মতে, মাথা ন্যাড়া থাকলে: স্ক্যাল্পে তেল, ধুলা, ময়লা জমে কম। স্ক্যাল্পে ফাঙ্গাস, খুশকি বা পোকা-মাকড় সংক্রমণের আশঙ্কা কমে। হাইজিন ভালো থাকে।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে?
চুল তাপ ধরে রাখে। তাই গরমকালে মাথা ন্যাড়া করলে তাপ কম জমে, শরীর ঠান্ডা থাকে। কিন্তু শীতে বিপরীত হয়—শরীরের তাপ দ্রুত বেরিয়ে যায়, তাই ঠান্ডা লাগে বেশি।
চুল ও স্ক্যাল্পের রিজেনারেশনে সাহায্য করে?
মাথা ন্যাড়া করার পর অনেক সময় নতুন চুল আগের চেয়ে স্বাস্থ্যকরভাবে গজায় (বিশেষ করে যদি আগেরটা ক্ষতিগ্রস্ত চুল হয়)। স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন ভালো হলে চুল গজানোর প্রক্রিয়া আরও কার্যকর হতে পারে।
মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলে?
অনেক গবেষণা বলছে ,কেউ কেউ মাথা ন্যাড়া করে এক ধরনের মেন্টাল ক্লিয়ারেন্স বা নতুন শুরু অনুভব করেন। কিছু রোগী (যেমন কেমোথেরাপি নিচ্ছেন) মাথা ন্যাড়া করে চুল পড়ার মানসিক চাপ কমিয়ে আনেন।
আপনার মতামত লিখুন :