গরু বা মহিষের দুধ থেকে তৈরি হয় ঘি। ঘি বা মাখন কয়েকটি পদ্ধতিতে তৈরি করা যেতে পারে। ঘি সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি খাবার হিসেবে পরিচিত। ঘি তে রয়েছে পুষ্টি উপাদান যা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখে। আয়ুর্বেদশাস্ত্রে ঘিকে সুপার ফুড বলা হয় ।
ঘি-এর পুষ্টি উপাদান (প্রতি ১৫ গ্রাম বা ১ টেবিল চামচ)
ক্যালরি: প্রায় ১২০ ক্যালরি
মোট চর্বি: প্রায় ১৪ গ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাট: ৯ গ্রাম
মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: ৪ গ্রাম
পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: ০.৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল: প্রায় ৪০ মিলিগ্রাম
কার্বোহাইড্রেট: নেই (০ গ্রাম)
প্রোটিন: নেই (০ গ্রাম)
ভিটামিন এ: ঘি-তে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে (প্রায় ১১৩ মাইক্রোগ্রাম বা প্রায় ১২% দৈনিক চাহিদা)।
ভিটামিন ই এবং কে: সামান্য পরিমাণে থাকে।
ঘি শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং বহু উপকারিতার উৎস—বিশেষ করে যদি তা সঠিকভাবে এবং পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হয়।
ঘি-এর উপকারিতা
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে- ঘি পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে। এটি ‘অগ্নি’ বা হজমের আগুনকে উজ্জীবিত করে বলে আয়ুর্বেদে বলা হয়। খাবার সহজে হজম হয় এবং গ্যাস-অম্বলের সমস্যাও কমে।
ত্বক, চুল ও ঠোঁটের যত্নে উপকারি- ঘি ভিতর থেকে ত্বককে উজ্জ্বল ও কোমল করে তোলে। শুষ্ক ত্বক, ফাটা ঠোঁট বা চুলের রুক্ষতা দূর করতে ঘি খুবই কার্যকর।
ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে সরবরাহ করে- এই ফ্যাট-সলিউবল ভিটামিনগুলো চোখ, ত্বক, হাড় ও ইমিউন সিস্টেমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ঘি এই ভিটামিনগুলোর একটি প্রাকৃতিক উৎস।
দীর্ঘক্ষণ শক্তি দেয়- ঘি-তে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরে ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে, ফলে এটি উপবাস বা রোজা রাখার সময় বিশেষভাবে সহায়ক।
মস্তিষ্ক ও নার্ভের জন্য ভালো- আয়ুর্বেদ অনুসারে, ঘি ব্রেইনের কার্যকারিতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি মানসিক চাপ কমাতেও কার্যকর।
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ- ঘি শরীরের ভিতরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং এটি ফ্রি র্যাডিকেল দূর করে কোষ সুরক্ষা দেয়।
হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য সহনীয়- যদি ঘি বিশুদ্ধভাবে এবং সীমিত পরিমাণে খাওয়া হয়, তবে এটি ভালো HDL কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
দুধে অ্যালার্জি আছে এমনদের জন্য সহনীয়- ঘি তৈরির সময় দুধের ল্যাকটোজ ও কেসিন প্রায় পুরোপুরি বাদ পড়ে যায়, তাই ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট ব্যক্তিরা অনেক সময় এটি খেতে পারেন।
যেকোনো খাবারের মতোই ঘি-এরও কিছু অপকারিতা আছে। বিশেষ করে যখন তা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয় বা শরীরের বিশেষ অবস্থায় তা গ্রহণ করা উচিত না।
ঘি-এর অপকারিতা
ওজন বৃদ্ধি করতে পারে: ঘি-তে প্রচুর ক্যালরি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। অতিরিক্ত ঘি খেলে ওজন দ্রুত বাড়তে পারে—বিশেষ করে যদি আপনি নিয়মিত ব্যায়াম না করেন।
হার্টের সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে: যদিও পরিমিত পরিমাণে ঘি খেলে ভালো কোলেস্টেরল বাড়তে পারে, কিন্তু বেশি পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট খেলে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
লিভার ও গলব্লাডারের সমস্যা থাকলে ক্ষতিকর: যাদের লিভারের সমস্যা, গলব্লাডারে পাথর বা পাচনতন্ত্র দুর্বল, তাঁদের জন্য ঘি হজম করা কঠিন হতে পারে। এতে বমি ভাব, গ্যাস বা পেট ফাঁপার মতো সমস্যা হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সতর্কতা দরকার: যেহেতু ঘি উচ্চ-ক্যালরিযুক্ত, তাই ডায়াবেটিস রোগীরা যদি ঘি অতিরিক্ত খান, তাহলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স আরও খারাপ করতে পারে।
অতিরিক্ত গরম ঘি ক্ষতিকর হতে পারে: অনেক সময় ঘি অতিরিক্ত গরম করলে তার পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায় এবং এতে কিছু টক্সিক উপাদান তৈরি হতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
অ্যালার্জি বা সংবেদনশীলতা: যদিও অধিকাংশ ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট ব্যক্তিরা ঘি সহ্য করতে পারেন, তবুও কারো কারো দেহে অল্প পরিমাণ ল্যাকটোজ বা কেসিন থাকায় প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :