ঢাকা: বন্যার কবলে পড়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে পানিতে ডুবে যায় বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। পানির অত্যধিক প্রবাহে নিমজ্জিত হয় বানভাসিদের শুষ্ক জীবনযাপন।
আকস্মাৎ বানের জলে ক্রমেই ভেসে যায় সুখের শেষ আয়ুষ্কাল; তবুও নিয়তির চোখে তাকিয়ে আছে একদল দুঃখের স্বজন। খেয়ে না খেয়ে বাঁচার চেষ্টা করতে চায় জীবনের শেষ অব্দি। হয়তো শেষ থেকেই মানুষের শুরু; কেননা মানুষের বাঁচতে হয় স্বপ্ন বোনার নব উদ্যমে। কিন্তু সমস্যা একটু রয়েই যায়! ইতিহাস বলে, দুর্যোগ টেনে আনে নতুন এক দুর্যোগকে, যা সামাল দিতে হিমশিম খায় অবসন্ন মানুষজন। উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল ও কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে ভয়াবহ বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই মানুষ ফিরবে স্বাভাবিক জীবনযাপনে। কিন্তু সে পথটা মোটেও সহজ নয়। স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে গেলে বানভাসিদের মোকাবেলা করতে হবে আরো একটি নতুন দুর্যোগের। কী হতে পারে সেই দুর্যোগ এবং কী হতে পারে তার প্রতিকার? এ বিষয়ে দৈনিক রুপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা হয়েছে কুমিল্লা জেলা পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুমের।
তিনি জানান, `আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দেখা দেবে বন্যা পরিবর্তী দুর্যোগ। যেখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হতে পারে আবাসন সংকট। বন্যার পর অনেক পরিবার তাদের ঘর বাড়ি হারায়, এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের অভাব দেখা দেয়। আবাসন পুনর্নির্মাণ প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে কারণ এতে অনেক সময় অর্থনৈতিক সহায়তা এবং প্রকৌশলগত সহায়তার প্রয়োজন হয়। বন্যার পরপরই দ্রুত পুনর্নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলে মানুষ দ্রুত তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারবে। এ ছাড়া এ সময়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি, পুষ্টির অভাব, অর্থনৈতিক ক্ষতি ও পরিবেশগত ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বানভাসিরা। বন্যা পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য সংকট একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়! বন্যার পানি সাধারণত মাটি ও পানি সংযোগ করে দেয়, যা পানির উৎসকে দূষিত করে। ফলে কলেরা, টাইফয়েড, ডায়রিয়ার মতো বিভিন্ন জলবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এসব রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে, বিশেষ করে যেখানে স্বাস্থ্য সেবা এবং পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করে না। তা ছাড়া বন্যার কারণে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, যা ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর মত মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি বয়ে আনে। এ সময়ে কৃষি জমি ও খাদ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা পুষ্টির অভাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ক্ষেতের ফসল নষ্ট হলে এবং খাদ্য সংরক্ষণ কেন্দ্রে পানি ঢুকে গেলে খাদ্য সংকট দেখা দেয় । খাদ্য সরবরাহ চেইন ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে দুর্বল ও দরিদ্র জনগণের জন্য খাদ্য সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়ে। যদিও বন্যার পর পুষ্টির অভাব মোকাবিলায় জরুরী খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়, তবে এটি প্রাথমিক পর্যায়ের ব্যবস্থা মাত্র। দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি জমির পুনর্গঠন এবং স্থায়ী খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, `বন্যার পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলা কিছুটা কঠিন তবে অসম্ভব নয়। এটি মোকাবিলা করতে প্রয়োজন একটি সমন্বিত পরিকল্পনার। সরকার, এনজিও, কমিউনিটি সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় একটি কার্যকরী পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করা গেলে স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্যসহায়তা, আবাসন পুনর্গঠন, অর্থনৈতিক পুনর্বাসন এবং পরিবেশগত পুনর্গঠন করা সম্ভব, যা মানুষকে ফিরিয়ে নেবে নিরাপদ বাসস্থানে।`
আপনার মতামত লিখুন :