ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নিরামিষ খেতে অতীতে : জগন্নাথ ভোজনালয়

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪, ০৫:৪৩ পিএম

নিরামিষ খেতে অতীতে : জগন্নাথ ভোজনালয়

ছবি: সংগৃহীত

প্রতিটি আদর্শ হোটেলে বাস করে একজন বেচু চক্কতি; বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ হিন্দু হোটেলের মতো যারা ছাপিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। কলকাতায় নয়, বাংলাদেশের পুরান ঢাকায়ই পাওয়া যায় এমন বহু হোটেলের সন্ধান। পুরান ঢাকার খাবারের কথা বললে সাধারণভাবে আমাদের মাথায় হাজি বিরিয়ানি, কলকাতা কাচ্চি, কিংবা বিউটি লাচ্ছির কথাই আসে। কিন্তু আজ আপনাদের সন্ধান দিচ্ছি একটি নিরামিষ হোটেলের।

মসলাদার মোগল খাবারের বাইরে গিয়ে কেউ যদি একেবারেই নিরামিষ খেতে চান; সেক্ষেত্রে দারুণ একটি স্থান হতে পারে তাঁতীবাজারের জগন্নাথ ভোজনালয়।  ভোজনালয়ের বয়স এখন ১৮। দেড় যুগ আগে ২০০৫ সালে নিতাই পাল শুরু করেন এই ভোজনালয়। ওদিকের সবচেয়ে পুরোনো নিরামিষ ভোজনালয়টি বিষ্ণুপ্রিয়া। তারপরই হয়েছে জগন্নাথ। ২০২০ সালে কোভিড আক্রান্ত হয়ে লোকান্তরিত হন নিতাই পাল। তারপর মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে তত্ত্বাবধানে আছেন অশোক কবিরাজ। তিনি গোপীনাথ ভোজনালয়েরও মালিক। এখন দুটো হোটেলই একসঙ্গে চালাচ্ছেন।

জগন্নাথ ভোজনালয় নিরামিষপ্রেমিদের জন্য একটি দারুণ জায়গা। ভর্তা, ডাল, ছানা, বড়া, সয়াবিন, রসা দিয়ে চেটে পুটে খেয়ে শেষপাতে থাকে চাটনি আর পায়েস। যা খুব আয়েশ করে খান ভোজন রসিকরা। এই হোটেলের সবচেয়ে মজাদার বিষয় হচ্ছে রান্নায় পেঁয়াজ ও রসুন ব্যবহার করা হয় না। তবে দেওয়া হয় অন্যান্য মসলা। একাদশীর সময় হলে চন্দ্র তিথিতে বিশেষ খাবার পাওয়া যায়। পুষ্পান্ন (অর্থাৎ পোলাও), খিচুড়ি, সাগুদানা ভুনা, ছানার রসা, ফুলকপির রসা, পাঁচমিশালি সবজি ও শ্যামা দানার পায়েস করা হয়। একাদশীর রান্না হয় সূর্যমুখী তেলে। অন্যান্য দিন ব্যবহার করা হয় সয়াবিন। সেখানে ইস্পাতের ছোট ছোট বাটিতে করে সাজানো প্রায় ২০ প্রকারের নিরামিষ পদ। যার যেরকম প্রয়োজন; সেভাবে নিয়ে নিতে পারেন। সব তরকারির দাম ১০ থেকে ৪০ টাকার ভেতর। ভাত এক প্লেট ১৫ টাকা, প্রয়োজনে ৫ টাকা করে অতিরিক্ত ভাত নিতে পারবেন। ভাত টেবিলে দেওয়া থাকে না। এটি দোকানের লোকেরাই পরিবেশন করে থাকেন। দৈনিক ২০টি পদ করা হয় এখানে। তার ভেতর রসা, লাবড়া, শুক্তো, ৫ তরকারি-সবই পাবেন। একবারে দোকানে বসে খেতে পারেন ৩৫-৩৬ জন। জনপ্রিয় এই হোটেলটিতে সারাদিনই থাকে ভোজনবিলাসীদের ভিড়। তবে ভর দুপুরবেলায় ভিড় আরেকটু বেশি থাকে। দুপুর ১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বেশ লোকসমাগম হয় বলে জানান অশোক কবিরাজ। রাতে ১০টা পর্যন্ত সাধারণত দোকান খোলা রাখেন। তবে ভিড় বাড়লে সেটি বেড়ে হয় ১১টা। একবারের জন্য হলেও এই দোকানের অমৃতের স্বাদ পেতে দূর-দূরান্ত হতে ছুটে আসতে দেখা যায় বিভিন্ন স্তরের মানুষদের।

যেভাবে যাবেন

পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকার সরু গলিটা ধরে এগোলেই চোখে পড়বে ১১০নং বাড়ি। একটি ছোট্ট সাইন বোর্ড- জগন্নাথ ভোজনালয়। ভেতরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠেই দোতলায় ছোট ছিমছাম খাবারের হোটেল। খুব একটা জায়গার সংকুলান নেই। তবুও রোজ প্রচুর লোকের ভিড়। গেলেই দেখা যায় কিছু লোক দাঁড়িয়ে অপেক্ষায়; কখন খালি হবে আসন আর পাত পেড়ে শান্ত করা হবে পেটের আগুন।

আরবি/জেআই

Link copied!