ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

স্বপ্ন থেকে কিছুটা পিছিয়ে

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম

স্বপ্ন থেকে কিছুটা পিছিয়ে

ছবি: সংগৃহীত

মানুষ স্বপ্নের পথে হাঁটে।একটা সফলতার আকাঙ্খা মানুষকে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখে। তবে সব পথের মতো এ পথেও বাধার কোনো কমতি নেই! মাঝে মধ্যেই স্বপ্নের পথের বাঁকে বাঁকে বাধা হয়ে দাঁড়ায় দুঃস্বপ্নের বেড়াজাল। যাকে ভেদ করে অনেকেই আর এগোতে পারেনা সামনের দিকে। আবার কেউ কেউ কিছুটা পিছিয়ে যায় তবে এগিয়ে যায় গন্তব্যে; ‘বাধা বিঘ্ন না পেরিয়ে বড় হয়েছে কে কবে?’ গীতিকার মাজহারুল আনোয়ারের এই গানের মতোই প্রতিটি সপ্নবাজ বিশ্বাস করে, ‘হার জিত চিরদিন থাকবেই তবুও এগিয়ে যেতে হবে।’ কিন্তু প্রশ্ন হলো কতজন পারে এগিয়ে যেতে?

করোনা মহামারী থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত বাংলাদেশের মাটিতে তাণ্ডব চালাচ্ছে একের পর এক প্রাকৃতিক কিংবা সামাজিক দুর্যোগ। কখনো বন্যা কখনো ঘূর্ণিঝড়,কখনো সামাজিক বা রাজনৈতিক ইস্যু আবার কখনো অগ্নিকাণ্ডের মতো ভয়াবহ দাবদাহে উলটপালট হয়েছে সকল দেশীয় পরিকল্পনা। যার একটি বড় প্রভাব পড়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে, সৃষ্টি হয়েছে সেশনজটের। ফলে স্বপ্ন থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২৩-২৪ সেশনের ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম।
  
এই মেধাবী শিক্ষার্থী বলেন,

সেশনজট বাংলাদেশের একটা কমন সমস্যা! যদিও এর আগে শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ ইউনিভার্সিটি গুলোতেই বেশি ছিল কিন্তু করোনা মহামারীর পর এটা ছড়িয়ে পড়ে সকল প্রাইভেট,পাবলিক এবং সর্বস্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতেও। এখনো মনে পড়ে, করোনার মাঝামাঝি সময়ে যখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আমরা তখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতে ভুগছিলাম। অনেকেই পড়াশোনা ছেড়ে বিভিন্ন অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছিল।

শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন,

যদিও পরবর্তী সময়ে সরকারের বিলম্ব ব্যবস্থা গ্রহণে ইন্টারমিডিয়েটে দেড় বছরে পড়াশোনার তীব্র চাপ নিয়ে আমরা সেশনজট কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম। কিন্তু ঘনঘন দুর্যোগ ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা ধ্বংস করে দিচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা। বাড়িয়ে দিচ্ছে সেশনজটের পরিধি। প্রতিটি শিক্ষার্থীর একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে; একটা সময় বাঁধা থাকে। যে সময়ের ভিতরে পড়াশোনা শেষ করে নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করতে হয়,নিজের এবং পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয়। কিন্তু সেশনজট সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিচ্ছে। এমনও দেখা যায়,অনেক মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীরা ঋণ করে পড়াশোনা করছে। যদি নির্দিষ্ট সময়ে পড়াশোনা শেষ না হয় তাহলে তারা পরবর্তীতে টাকা কোথায় পাবে!

সাইফুল ইসলাম আরও বলেন,

অনেকটা পথ এগিয়ে সেসব শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়বে পড়াশোনা থেকে। আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী আমাদের গত ২ মাস আগেই ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্ত কোটা সংস্কার বা সরকার পতন আন্দলোনকে ঘিরে যা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কবে শুরু হবে তাও অনিশ্চিত! এসব ঘটনা বড় একটা সেশনজটের সম্ভাবনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনিতেই বাংলাদেশে সরকারি চাকরির সময়সীমা কম। এইভাবে পিছিয়ে পড়লে কবে পড়াশোনা শেষ করবো আর কবে পরিবারের পাশে দাঁড়াবো!

এসব সমস্যা নিরসনের জন্য তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দ্রুত একটি সুশৃঙ্খল শিক্ষাব্যবস্থা এবং সেশনজট কাটিয়ে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ রাখেন। এইভাবে আর সেশনজটে স্বপ্ন থেকে পিছিয়ে পড়তে চায় না শিক্ষার্থীরা। নির্দিষ্ট সময়ে পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের ভরসা হয়ে একটা সৃজনশীল জীবন গঠন করতে চায়। যা একমাত্র সেশনজট থেকে মুক্তি পেলেই সম্ভব বলে দাবি তার।

আরবি/জেআই

Link copied!