ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

যে গাড়ি সাধারণ মানুষের

মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪, ০২:৫৬ পিএম

যে গাড়ি সাধারণ মানুষের

রূপালী বাংলাদেশ

গাড়ির আবিষ্কার মানবজাতির জীবনযাত্রায় এক অভাবনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসে। প্রথমদিকে ঘোড়ার গাড়ি, রেলগাড়ি এবং অন্যান্য যাতায়াত ব্যবস্থা মানুষের প্রধান ভরসা ছিল, যা ধীরে চলত এবং গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগত অনেক বেশি। কিন্তু গাড়ির আবিষ্কার মানুষের যাতায়াতকে আরও সহজ এবং দ্রুত করেছে।যার কারণে শুধু শহরাঞ্চলে নয়, গ্রামাঞ্চলেও উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, যা অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত করে। গাড়ি শুধু যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে নয়, বরং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবেও কাজ করেছে।
 
গাড়ির আবিষ্কার ও উন্নয়ন 
গাড়ির ধারণা ১৮৮০-এর দশকে শুরু হলেও, ১৯০০-এর শুরুতে এটি উল্লেখযোগ্যভাবে জনপ্রিয় হতে শুরু করে। কার্ল বেন্জ এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীরা প্রথম দিকে ইঞ্জিন চালিত যানের ধারণা নিয়ে কাজ করেন। তবে, গাড়ির প্রকৃত ব্যাপক উৎপাদন এবং সবার জন্য সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা তখনও সীমিত ছিল। এতে বিপ্লব আনে হেনরি ফোর্ডের ফোর্ড মোটর কোম্পানি, বিশেষত ফোর্ড মডেল টি এর মাধ্যমে।

ফোর্ড মডেল টি
১৯০৮ সালে বাজারে আসে, যা ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী এবং সফল গাড়ি হিসেবে পরিচিত। এটি মানুষের জীবনযাত্রা এবং গাড়ি উৎপাদন শিল্পে একটি বিপ্লবের সূচনা করেছিল। হেনরি ফোর্ডের লক্ষ্য ছিল এমন একটি গাড়ি তৈরি করা যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে, সহজে ব্যবহারযোগ্য হবে, এবং টেকসই হবে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি তৈরি করেছিলেন মডেল ফোর্ড মডেল টি।  

মডেল টি এর ভূমিকা 
মডেল টি বাজারে আসার আগে, গাড়ি ছিল ধনী ব্যক্তিদের জন্য একটি বিলাসবহুল বস্তু। তবে হেনরি ফোর্ডের অ্যাসেম্বলি লাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গাড়ির উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা হয়। এর ফলে, ফোর্ড মডেল টি এর দাম অন্য গাড়ির তুলনায় অনেক সস্তা হয়। ফোর্ড অ্যাসেম্বলি লাইনটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল যাতে প্রতিটি কর্মী নির্দিষ্ট একটি কাজ করে, যা উৎপাদনের সময়কে কমিয়ে আনে এবং প্রতি ঘণ্টায় অনেক বেশি কাজ করা সম্ভব হয়।

মডেল টি এর বৈশিষ্ট্য এবং সফলতা
ফোর্ড মডেল টি এর বৈশিষ্ট্যগুলো সাধাসিধা, কিন্তু কার্যকর ছিল। এই গাড়ির ইঞ্জিন ২০ হর্সপাওয়ারের শক্তি উৎপন্ন করতে পারত, যা ঐ সময়ের জন্য পর্যাপ্ত ছিল। গাড়িটি যথেষ্ট টেকসই ছিল,যা সাধারণ রাস্তা এবং বিভিন্ন পরিবেশে চালানো যেত। মডেল টি খুব সহজে মেরামত করা যেত এবং এর খুচরা যন্ত্রাংশ সহজলভ্য ছিল, যা গাড়ির জীবনকাল দীর্ঘ করেছিল। এতে করে গাড়িটি আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে ওঠে।মডেল টি এর উৎপাদন প্রায় ২০ বছর ধরে চলে এবং প্রায় ১৫ মিলিয়ন গাড়ি বিক্রি হয়। এই গাড়ি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে একে ঞরহ খরুুরব নামে ডাকা হতো। এটি যাতায়াতের প্রয়োজন পূরণ করার পাশাপাশি নতুন নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল; যেমন গাড়ির সেবা কেন্দ্র, পেট্রোল পাম্প ইত্যাদি।  

মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব
ফোর্ড মডেল টি মানুষের জীবনযাত্রায় এক বিপ্লব ঘটায়। এর আগে মানুষ প্রধানত রেলগাড়ি, সাইকেল বা ঘোড়ার গাড়ির ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু মডেল টি সাধারণ মানুষের জন্য গাড়ি সহজলভ্য করায় মানুষের যাতায়াত আরও দ্রুত ও সহজ হয়ে যায়। শহরের বাইরে বা দূরবর্তী স্থানে কাজের সুযোগ নিতে মানুষ গাড়ির উপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। ব্যবসা এবং বাণিজ্যের প্রসার ঘটে, কারণ পণ্য পরিবহন সহজতর হয়। এমনকি শহর ও গ্রামের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে মানুষজনও একে অপরের সঙ্গে বেশি সংযুক্ত হতে শুরু করে।

ফোর্ড মডেল টি এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব
ফোর্ড মডেল টি আধুনিক গাড়ি উৎপাদনের ভিত্তি স্থাপন করেছে। ফোর্ডের অ্যাসেম্বলি লাইন পদ্ধতি শুধু গাড়ি শিল্পেই নয়, অন্যান্য শিল্পেও একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। মডেল টি এর মাধ্যমে গণ-উৎপাদন কৌশল চালু হয়, যা শিল্প ক্ষেত্রে আধুনিক বিপ্লবের জন্ম দেয়। এটি পুরো বিশ্বের গাড়ি শিল্পকে বদলে দেয়, এবং আধুনিক গাড়ি উৎপাদনের মডেল হিসেবে গড়ে ওঠে। মডেল টি-এর সাফল্য আজকের আধুনিক গাড়ির প্রযুক্তি এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ার দিকে নিয়ে গিয়েছে, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ এবং গতিশীল করেছে।

আরবি/ আরএফ

Link copied!