ঢাকা শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ডাক্তার বাড়িতে অরণ্য

মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৫:২৮ পিএম

ডাক্তার বাড়িতে অরণ্য

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মানুষ বেঁচে থাকার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। প্রকৃতি এবং পরিবেশ সুস্থ থাকলে, মানুষও সুস্থ থাকবে। জ্ঞানী ব্যাক্তিরা বলেন, ‘মানুষকে ভালোবেসে প্রতিদান না পাওয়া গেলেও, প্রকৃতি ও অরণ্যের প্রতি ভালোবাসা থাকলে তার ভালো প্রতিদান পাওয়া যায়।’ প্রকৃতির যত্ন নেওয়ার অনেক উপায় রয়েছে, তবে এর মধ্যে বাগান করা সবচেয়ে সহজ এবং মনের খোরাক মেটানোর মাধ্যম। বাগান শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, এটি মানুষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার ওপরও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এমনই এক ভালবাসার বাগানের গল্প বলছে ‘ডক্টরস হোম গার্ডেন’। যশোরের নাজির শংকরপুরের ডাক্তার বাড়ির ছাদে গড়ে ওঠা এই বাগানটি প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার চমৎকার উদাহরণ।

পরিবারের সব সদস্যের মতো এম এ হাই সিকদারও পেশায় একজন চিকিৎসক। প্রায় আট থেকে দশ বছর আগে তিনি শখের বসে নিজের ছাদে কিছু গাছের চারা লাগিয়ে বাগান শুরু করেন। শুরুর দিকে এটি কেবল শখের বশে করা হলেও ধীরে ধীরে এই বাগানটি পরিবারের সবাই মিলে তৈরি করা এক ভালবাসার ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথোপকথনে ডাক্তার সিকদার জানান, ‘আমার এই বাগানের শুরুটা খুব সাধারণ ছিল। ছোট কিছু গাছ দিয়ে শুরু করেছিলাম, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বাগানের আকার এবং বৈচিত্র্য বাড়তে থাকে। পরিবারের সবাই মিলে গাছের যত্ন নেওয়ার ফলে বাগানটি বড় হতে থাকে।’

এখন এই বাগানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের ফলমূলের গাছ রয়েছে। ডাক্তার সিকদার জানান, ‘গাছের যত্ন নিতে নিতে এখন আমাদের বাগানটি বিশাল এক সবুজ অরণ্যে পরিণত হয়েছে’ বাগানে রয়েছে নানা প্রজাতির আম, জামরুল, পেয়ারা, ডালিম, ড্রাগন ফল, তীনফল, আনারস, খেজুর, আঙ্গুর ,বড়ই, লেবু, কমলাসহ নানা ধরনের দেশি-বিদেশি ফলের গাছ। গাছগুলো পরিবারের প্রতিটি সদস্যের ভালোবাসা ও যত্নে বেড়ে উঠেছে। বাগান নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাবসায়ীক চিন্তা করেননি তারা। বাগানে উৎপাদিত ফলমূল পরিবারের প্রয়োজন মেটায়। সেইসঙ্গে তারা এসব ফল প্রতিবেশী এবং চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যেও বিলিয়ে দেন।

বাগানে শুধু ফলমূলই নয়, রয়েছে বিভিন্ন রঙের ও প্রজাতির ফুলের গাছও। এসব ফুলের গাছ বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং পরিবেশে  মনোরম ঘ্রাণ ছড়ায়। ডাক্তার সিকদার বলেন, ‘ফুলের গাছগুলো আমাদের বাগানকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। প্রতিদিন সকালে যখন বাগানে যাই, ফুলের মিষ্টি গন্ধ মনকে প্রশান্তি দেয়।’

ফল-ফুল ছাড়াও ডক্টরস হোম গার্ডেনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো সবজি চাষ। বাগানে চাষ করা বিভিন্ন সবজি পরিবারের খাদ্য চাহিদার অনেকাংশই পূরণ করে। এতে পরিবারের জন্য নিরাপদ, কীটনাশক মুক্ত সবজি পাওয়া সম্ভব হয়। বাগানের সবজি খেয়ে তারা যেমন তৃপ্তি পান, তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যও তা অনেক উপকারী।

ডাক্তার সিকদারের মতে, বাগানের যত্ন নেওয়া এবং গাছ লাগানোর এই অভ্যাস শুধু তাদের পরিবারেই সীমাবদ্ধ নেই। তার বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় অনেকেই নিজেদের ছাদে বাগান করা শুরু করেছেন। কেউ যদি ছাদবাগান করতে চান, তবে তিনি তাদের চারাগাছ দিয়ে সহায়তা করেন এবং বাগান করতে উৎসাহিত করেন।তিনি বলেন, ‘কেউ যদি বাগান করতে আগ্রহী হয়, আমি তাকে সবধরনের সাহায্য করি।’

ডক্টরস হোম গার্ডেন একটি পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রার উদাহরণ। এর মাধ্যমে ডাক্তার সিকদার তার পরিবার এবং স্থানীয় সমাজে একটি সবুজ বিপ্লবের সূচনা করেছেন। তার মতে, ছাদবাগান পরিবেশের উপকার করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

এই ভালবাসার বাগানের মাধ্যমে ডক্টরস হোম গার্ডেন একটি প্রমাণ যে, শখের বাগানও পরিবেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিটি পরিবারের উচিত ছাদে কিংবা আঙিনায় বাগান করা, যেন আশেপাশের পরিবেশ সবুজে ভরে ওঠে। ডাক্তার সিকদার মনে করেন, ‘প্রকৃতি আমাদের জন্য অনেক কিছু করে, আমাদেরও উচিত প্রকৃতির প্রতি দায়িত্ব পালন করা।’

ডক্টরস হোম গার্ডেনের মতোই প্রতিটি বাড়িতে গড়ে উঠুক সবুজ অরণ্য। প্রকৃতির প্রতি যত্নই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী নিশ্চিত করতে পারে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে হয়ত কিছুটা সময় লাগবে, তবে আমাদের ভালোবাসা যেন বজায় থাকে। স্লোগান হোক: ‘গাছ লাগাই বেশি বেশি, অরণ্যকে ভালোবাসি।’

রূপালী বাংলাদেশ/রুআ

Link copied!