ঢাকা সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ভুল থেকে শিখুন নতুন কিছু

সানজিদা আফরিন সোনিয়া

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৪:৫৭ পিএম

ভুল থেকে শিখুন নতুন কিছু

ছবি: সংগৃহীত

‘ভুল সবই ভুল-এই জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা, সে ভুল।’ জীবনের কোন না কোন সময়ে হারানো দিনের এই গানটি অবচেতনেই একবার গেয়ে ওঠেনি; তেমন মানুষ হয়তো খুব কমই পাওয়া যাবে। জীবন খাতার প্রতি পাতা উল্টালে হয়তো ভুলের সংখ্যা গুণে শেষ করা কঠিন হয়ে উঠবে। এই ভুলগুলোকে আকড়ে ধরে অনেকেই সামনে আগানোর পথ খুঁজে পান না। অনেক সময় শুধু ভুল স্বীকার করার সাহস হয় না বলেও আমরা বারবার একই ভুলের মাকড়সা জালে নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলি। ভুল, মানুষ মাত্রই ভুল। সেই ভুলের জন্য নিজেকে বারবার দোষারোপ থেকে ভালো কিছু আসে না, বরং ক্ষতি হয় নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের। অনেকেই অতীতের ভুলের কারণে প্রতিনিয়ত নিজের বর্তমানকে ক্ষতির খাতায় তুলে ফেলেন। কিন্তু ভুল থেকে বেরিয়ে আসা এবং সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগোতে পারাটাই মানুষকে জীবনযুদ্ধের জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করতে পারে। কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দিলে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে জীবন যুদ্ধে নতুন পথে যাত্রা শুরু করা অনেকটাই সহজ হতে পারে। বিষয়গুলো জেনে নেই-

ভুল স্বীকার করুন
শুধু ভুল স্বীকার করার সাহস হয় না বলেও অনেক সময় আমরা বারবার একই বৃত্তে আবর্তন করে নিজেকে ভুলের মধ্যে আরও বেশি করে জড়িয়ে ফেলি। তাই একটু সাহস করে নিজের ভুল স্বীকার করাটা যেকোন ভুল শোধরানোর প্রাথমিক ধাপ। একবার যদি কেউ বুঝতে পারে, সে যা করেছে তা এভাবে না করে অন্যভাবে এগোলে পরিস্থিতি আরো ভালো হত, তবে স্বাভাবিকভাবেই তার মধ্যে একটি আত্মসচেতনতাবোধ জন্ম নেয়। এতে করে ভুল থেকেও ভালো কিছু ঘটার আশা থাকে। কিন্তু আশায় তখনই গুড়ে বালি হয়, যখন কেউ মানতেই চায় না ভুলটি তারই ছিল।

ভুলের কারণ খুঁজে বের করুন
ভুলের কারণ বিশ্লেষণের জন্য নিজেকে কিছুটা সময় দিন। একই ভুলের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়; সেক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে। ভুলটা যদি হয় ব্যক্তিগত জীবনে, তবে সেটি পেশাদার জীবনের ভুল থেকে অনেকটাই আলাদা। এই ভিন্ন ধরনের ভুলের জন্য বিশ্লেষণটাও হবে সে অনুযায়ী। তাই ভুল করে হলেও নিজের ভুল নিয়ে একটুখানি ভেবে দেখুন। হয়তো প্রশ্নের মধ্যেই পেয়ে যাবেন আকাঙ্খিত উত্তরটি।

আফসোস থেকে দূরে থাকুন
আফসোস কিংবা অনুশোচনা, এই অনুভূতি একজন মানুষকে কুরে কুরে খাওয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই ভুল করার পর আফসোসের চক্রে ফেঁসে যাওয়া যাবে না। বরং কীভাবে ভুলের পৌনঃপুনিকতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, সেটি নিয়ে খতিয়ে দেখতে হবে। মার্কিন অভিনেত্রী ড্রিউ ব্যারিমোরের এ বিষয়ে বলেছেন, ‘আমি কোনো বিষয়েই আফসোস রাখি না। কারণ আমার মনে হয়, জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ই আজ আমাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।’ আমাদের জীবনের শুধু ঠিক কাজগুলোই নয়; ব্যক্তিত্বের বুননে গাঁথা আছে বহু ছোটবড় ভুলের ইট-পাথর, যা না থাকলে হয়তো আমাদের জীবনের ভিতই নড়ে যেত। তাই আফসোস থেকে দূরে থাকাই হবে বিচক্ষণের কাজ।

ইতিবাচক চিন্তার চর্চা
এ কথা সত্যি যে জোরজবরদস্তি করে ভালো কথা ভাবলেও তা খারাপ ফল নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু অনেক সময় নিজেকে নিজেরই আশ্বস্ত করতে হয়। যা হয়েছে, এর চেয়েও বাজে কিছু হতে পারত এবং এই ভুল শুধরে নেওয়ার সময় আছে- এমন নিরীহ সান্ত্বনা মাঝে মাঝে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। এতে করে পরের বার একই কাজের সময় আগে থেকেই প্রস্তুতি রাখা যায়, ভুলের পুনরাবৃত্তি হওয়ার ঝুঁকিও যায় কমে। জীবনে ইতিবাচক চিন্তার সুস্থ চর্চা এভাবেই মনোবল ধরে রাখতে সহায়তা করবে।

ভুল থেকে শেখা
পড়ালেখা হোক বা ব্যক্তি জীবনের সম্পর্কগুলো, অফিসের কাজ হোক বা ব্যবসায়িক কোনো চুক্তিু এই সব বিষয়েই ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার চর্চা থাকা উচিত। কারণ একবার ভুল করলেই আমরা জানতে পারি, কোনভাবে আমাদের এগোনো উচিত নয়। ঠিক যেমনটা বলে গেছেন উদ্ভাবক টমাস আলভা এডিসন, ‘আমি ব্যর্থ হইনি। আমি শুধু খুঁজে পেয়েছি কাজটি ঠিকভাবে না হওয়ার ১০ হাজারটি পদ্ধতি।’ তাই তো হাজার ভুলেও ক্ষতি নেই, যদি তা থেকে পাওয়া যায় হাজারটি জানার উপায়। আপনার ভুলগুলোও আপনারই অংশ। তাই সেগুলোকে নিজের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন না করে দিয়ে কীভাবে জীবনে চলার পথে তা কাজে লাগিয়ে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওঠা যায়, সে বিষয়ে সচেতন হোন। তাহলে ভুলের পর থাকবে না কোনো আফসোস, থাকবে না নিজেকে বারংবার দোষারোপের গ্লানি। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর ইতিহাসে বহু আবিষ্কারের গল্প শুরু হয়েছিল কারও না কারও একটি নিছক ভুল থেকে।

আরবি/ আরএফ

Link copied!