ঢাকা শনিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৪

বানভাসি কৃষকদের জন্য চাষাবাদ পদ্ধতি

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৪, ১২:৩১ পিএম

বানভাসি কৃষকদের জন্য চাষাবাদ পদ্ধতি

ছবি: ইন্টারনেট

সামনেই রবি মৌসুম; চাষাবাদের এই সোনালি সময়টাকে হাত ছাড়ার শঙ্কায় ভুগছে কৃষকরা। ঘন ঘন দুর্যোগে বানের জলে ভেসে যাচ্ছে তাদের সোনালি স্বপ্ন। সিলেট, চট্টগ্রামের বন্যা সামলে উঠতে না উঠতেই আবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছে উত্তরবঙ্গের তিস্তা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, করতোয়া, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রসহ অসংখ্য নদ-নদী। ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ বন্যার! তবে ভয় নেই, কৃষিপ্রধান এই দেশে কখনোই ধ্বংস হবে না কৃষি! যেমনটা ফুটে উঠেছে তরুণ কবি মো. নজরুল ইসলামের কবিতায়। ‘শোনো অফিসার, মন্ত্রী, সচিব, ঋষি, সবকিছু ধ্বংস হলেও ধ্বংস হবে না কৃষি।’ জীবন মাঝে মধ্যেই ভেসে যায় তবে ফেঁসে নয়! বানভাসি কৃষকদের জন্য রয়েছে একটি বিকল্প পদ্ধতি। যাকে বলা হয় ভাসমান কৃষি বা ফ্লোটিং অ্যাগ্রিকালচার। এটি মূলত জলমগ্ন অঞ্চলে খাদ্য উৎপাদনের একটি বিশেষ প্রক্রিয়া। বিশেষত বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কৃষির এ পদ্ধতি। বন্যা ও জলাবদ্ধ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন কৌশল হিসেবে ভাসমান কৃষি পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়। এছাড়া স্থায়ী জলাবদ্ধ এলাকায় খাল, হাওরে সারা বছর এ পদ্ধতিতে সবজি ও মসলা উৎপাদন করা যায়। পরিবেশবান্ধব ও জৈব পদ্ধতিতে করা যায় ফসল আবাদ।

ভাসমান কৃষির প্রক্রিয়া

ভাসমান প্ল্যাটফর্ম তৈরি : এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য প্রথমে একটি ভাসমান প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন ফুট পুরু করে বাঁশ ও দড়ি দিয়ে বেঁধে ধাপ ও ভাসমান বীজতলা তৈরি করা যেতে পারে। এরপর কচুরিপানা, টোপাপানা, দুলালীলতা, কলমিলতা, শ্যাওলাসহ নানান জলজ উদ্ভিদ স্তরে স্তরে সাজিয়ে ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়। ধাপ দ্রুত পচানোর জন্য ব্যবহার করা হয় সামান্য ইউরিয়া সার। তারপর ৭-১০ দিন ফেলে রাখা হয় পচানোর জন্য। ধাপগুলো যেন ভেসে না যায় সে জন্য অনেক সময় শক্ত বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। আবার অনেকে চারপাশে চিকন জাল দিয়ে ঘিরে দেন। তারপর সেই ধাপে বিভিন্ন শাক-সবজির মেদা বা দৌলা সাজানো চারা বপন করা হয়।

উদ্ভিদের চাষ : ভাসমান প্ল্যাটফর্ম তৈরির পর বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি, ফলমূল, এবং অন্যান্য উদ্ভিদ চাষ করা হয়। জলরাশি উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং তা স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। ভাসমান কৃষিতে, কৃষকরা সাধারণত মাটির তৈরি টুকরো বা পলিথিনের ব্যবহার করেন। এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে পুকুরের পৃষ্ঠে বা জলাশয়ে ভাসিয়ে রাখা হয়। কৃষকরা এখানে শাক-সবজি, ফল এবং অন্যান্য উদ্ভিদ চাষ করেন। সবচেয়ে জনপ্রিয় ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, শাক, লাউ এবং কুমড়া। কৃষকরা প্ল্যাটফর্মের নিচে পানি ব্যবহার করে সেচের কাজটি সম্পন্ন করেন, যা প্রচলিত কৃষির তুলনায় বেশি দক্ষ।

সুবিধাসমূহ

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা: ভাসমান কৃষিতে অনেক সুবিধা রয়েছে, তবে সবচেয়ে সুবিধাটা পাওয়া যায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাড়তে থাকা বন্যায়। এ পদ্ধতি বন্যায় কৃষির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কৃষকেরা যখন পানির স্তর বাড়ে তখনো ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম হন।

স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন: এ পদ্ধতিতে স্থানীয় বাজারের জন্য তাজা পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। উৎপাদিত শাক-সবজি ও ফল বাজারে সরবরাহ করে কৃষকরা নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করতে পারেন।

পরিবেশবান্ধব: ভাসমান কৃষি নতুন কোনো পদ্ধতি নয়, বরং এটি একটি টেকসই সমাধান যা পরিবেশ এবং সমাজের জন্য উপকারী। এই কৃষি পদ্ধতি খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি করে কৃষকদের জন্য খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর একটি টেকসই প্রক্রিয়া।

চ্যালেঞ্জ 
যদিও ভাসমান কৃষির অনেক সুবিধা রয়েছে তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অনেক কৃষকের কাছে ভাসমান কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত জ্ঞান নেই। আবার প্রবল বর্ষণের সময় এ পদ্ধতিতে ক্ষতিগ্রস্তের সম্ভাবনা থাকে। ফলে কৃষকরা ফসল হারানোর ঝুঁকিতে পড়েন। এ ছাড়াও স্থানীয় বাজারে উৎপাদিত পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে কৃষকরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। তাই প্রযুক্তিগত জ্ঞান রাখা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো উচিত।

 

আরবি/ আরএফ

Link copied!