ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪

আর্থিক সংকটে কৃষকদের করণীয়

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৪, ০২:৫০ পিএম

আর্থিক  সংকটে কৃষকদের করণীয়

ছবি: ইন্টারনেট

অচিরেই শুরু হতে যাচ্ছে চাষাবাদের সোনালি সময়, রবি মৌসুম। তবে এই মৌসুমকে ঘিরে কোনো আমেজ নেই কৃষকদের মাঝে। আর্থিক সংকটে যেন সব স্বপ্ন মিশে গেছে ফসলের ফাঁকা মাঠে। তবে ভয় নেই, যতবার শস্য থেকে কৃষকের স্বপ্ন মুছে গেছে রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দের কবিতার মতো ‘যে-মাঠে ফসল নাই চাঁদ এসে তাহার শিয়রে দাঁড়ায়েছে।’ তাই কৃষি অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ এ সময়ে ভেঙে না পড়ে মনোবল শক্ত রাখার।

এই বিষয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আর্থিক সংকট কৃষকদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। যেহেতু দুর্যোগ প্রকৃতি প্রদত্ত, এটা ঠেকানোর ক্ষমতা দুনিয়ার কারও নেই। কিন্তু চাইলেই মোকাবিলা করা সম্ভব। তাই এ সময়ে ভেঙে না পড়ে ঠান্ডা মাথায় মোকাবিলা করতে হবে। চাষাবাদের অনেক জমিতে এখনো পানি জমে আছে তাই সবার আগে ক্ষেত থেকে পানি বের করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এ ছাড়া কৃষকদের আর্থিক সংকট মোকাবিলার জন্য কৃষি সমবায় গঠন, বাজার বিশ্লেষণ, সরকারি সহায়তা, প্রশিক্ষণ কিংবা কৃষি ব্যাংকের ঋণ সুবিধা নেওয়া যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে কৃষি ব্যাংকের কিছুটা সহজতর হওয়া উচিত। কারণ কৃষি ব্যাংকের প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী ১০% কিংবা এর অধিক সুদের হার কৃষকদের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। আমি একজন কৃষিবিদ হিসেবে চাইব কৃষকদের জন্য ঋণ ব্যবস্থায় যেন সুদের হার ৪% এর মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়। তাহলে খুব দ্রুতই কৃষকদের আর্থিক সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।’

এই প্রসঙ্গে ‘বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে’-এর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ‘বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সর্বদা কৃষকদের জন্য নিয়োজিত একটি নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠান। সকল দুর্যোগ দুর্বিপাকে কৃষকদের পাশে আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মোতাবেক বিনা জামানতে শুধুমাত্র জমির কাগজপত্রের সত্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা ঋণ সুবিধা প্রদান করে থাকি। বর্গার ক্ষেত্রে জমির মালিকের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র প্রযোজ্য। কৃষকদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শস্য ঋণ, মৎস্য ঋণ, পোল্ট্রি ও ডেইরি ঋণসহ অন্যান্য প্রকল্পভিত্তিক ঋণ প্রদান করে থাকে। শস্য ঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত উৎপাদন পরিকল্পনা রয়েছে এবং এখানে ঋণ বিতরণের সীমাও নির্ধারিত। আর মৎস্য ঋণ হয়ে থাকে পারিবারিকভাবে অর্থাৎ পুকুরের পরিমাণ অনুযায়ী। কার্প জাতীয় মাছ যেমন- কাতলা, রুই কিংবা চিংড়ি ঘের অনুযায়ী সর্বোচ্চ ঋণের সীমা হতে পারে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত। সর্বনিম্ন আধাবিঘা পর্যন্ত দশ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। পোল্ট্রি ঋণ পোল্ট্রি বার্ডস অনুযায়ী দেওয়া হয়। এগুলোর ক্ষেত্রে আবার ভাগ রয়েছে যেমন- লেয়ার, ব্রয়লার এবং দেশি মুরগি। এখানে হাউসহোল্ড অনুযায়ী ঋণ ১০-১৫ হাজার টাকা। ফার্ম হলে ২০/২৫ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ডেইরি ঋণ দুগ্ধ গাভী প্রতি ২৫ হাজার টাকা, হালচাষ করা গরুর জন্য ২০ হাজার টাকা এবং মহিষের জন্য ২০ হাজার টাকা। তবে এ ক্ষেত্রে  বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মোতাবেক পরিবর্তিত হতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব নিয়ম নির্ধারণ করে থাকে। ঋণ গ্রহীতা কৃষিঋণ উত্তোলনে প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য প্রদান করে কৃষি ব্যাংকের যে ব্রাঞ্চের আওতায় থাকবে সে অনুযায়ী আমদের এই সেবাগুলো প্রহণ করতে পারবেন। বর্তমানে প্রচলিত অন্যান্য ঋণ থেকে ১% কমে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কৃষি ঋণ সুবিধা প্রদান করছে। আর ৪% সুদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ সুবিধার আওতায় আসতে হবে। সেক্ষেত্রে কৃষকের অবস্থা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক যাচাই-বাছাই করে নির্দেশনা দিয়ে থাকে।’
 

আরবি/ আরএফ

Link copied!