ঢাকা শনিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৪

রহস্যময় রংধনু নদী

শামসুন্নাহার সুমনা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৪, ১১:২৩ এএম

রহস্যময় রংধনু নদী

ছবি: সংগৃহীত

অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের এই পৃথিবী। সৌন্দর্যময় এই পৃথিবীর প্রতিটি জায়গাই তার নিজস্বতায় ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য ধারণ করে রয়েছে। পৃথিবীতে এমন কিছু জায়গা রয়েছে, যেগুলো বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে বিশেষভাবে পরিচিত। তেমনই একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ও রহস্যময় স্থান কলোম্বিয়ার ‘ক্যানো ক্রিস্টাল’ নদী। যেটি রংধনু নদী নামেও পরিচিত। ‘ক্যানো ক্রিস্টাল’ বা রংধনু নামক নদীটি কলোম্বিয়ায় অবস্থিত। কলোম্বিয়ার ‘সেরেনিয়া ডেলা মাগারিনা’ নামক পাহাড় থেকে এর উৎপত্তি হয়েছে। পাহাড়টির দৈর্ঘ্য ১২০ কি.মি. এবং প্রস্থ ৩০ কিলোমিটার। যেখানে বসবাস করে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ প্রাণী, উভচর ও বিভিন্ন ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণী। এই পাহাড়ের কোলঘেঁষেই বয়ে গেছে নদীটি।
‘ক্যানো ক্রিস্টাল’ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম রঙিন নদী। যেটাকে স্বর্গীয় নদীও বলা হয়। এই নদীতে সারা বছরজুড়েই চলতে থাকে নানা রঙের পানির খেলা। দেখলে যেন মনেহয় আকাশের রংধনুটা ভুল করে প্রবেশ করেছে এই নদীতে। অনেকেই বলেন সৃষ্টিকর্তা তার স্বর্গের সামান্য কিছু সৌন্দর্য দান করেছেন এই ‘ক্যানো ক্রিস্টাল’ নদীকে। তাইতো সে দেখতে এতো সুন্দর। কিন্তু এর কারণ কি? কি এই রংধনু নদীর নানা রঙের পানির রহস্য? আসলে এর প্রকৃত কারণ হল, এই নদীর তলদেশে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন রঙের উদ্ভিদরাজি। এই নদীর তলদেশে রয়েছে নানান রঙের ছোট-ছোট উদ্ভিদ বা গুল্মলতা। যে জায়গায় সবুজ রঙের উদ্ভিদরাজি থাকে, সেখানকার পানি সবুজ দেখায়। যেখানে লাল লতাপাতার উদ্ভিদ বেশি, সেখানকার পানি লাল দেখায়। আর যেখানে কিছু নেই সেখানে দেখায় নীলচে রঙের। আবার নদীর তলদেশে হলুদ রঙের বালিকণা রয়েছে বলে কোনো কোনো জায়গার পানি হলুদ রঙের দেখায়। প্রাকৃতিক ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জলের নিচের উদ্ভিদগুলো তাদের রং পরিবর্তন করে থাকে। নদীতে স্রোতের পরিমাণ বেশি হলে মনে হয় যেন টেউ এর তালে-তালে রংধনু নাচছে। এ ছাড়াও এই নদীতে রয়েছে কিছু কিছু কালচে পাথর। জানা যায় যে, পাথরগুলো ১২০০ মিলিয়ন বছরের পুরোনো। সময়ের পরিক্রমায় যেগুলো ধূসর বর্ণ থেকে কালচে বর্ণ ধারণ করেছে।

এই নদীর আরেকটি আশ্চর্যের বিষয় হল, এই নদীতে নানা ধরনের উদ্ভিদরাজির রাজত্ব থাকলেও এর পানিতে নেই কোন মাছ বা জলজ প্রাণী। আছে শুধুই বিভিন্ন রঙের ছোট-ছোট উদ্ভিদ, যা ‘ক্যানো ক্রিস্টাল’-এর রংধনু রূপের প্রধান কারণ। তবে দুঃখের বিষয় হল, এতো সুন্দর এই নদীটি দেখতে যাওয়ার মতো নেই কোনো স্থলপথ। একমাত্র বিমানে ছাড়া এই জায়গায় যাওয়া অসম্ভব। কারণ এটি কলোম্বিয়ার অত্যন্ত দুর্গম স্থানে অবস্থিত। তবুও ভ্রমণপিপাসু ব্যক্তিরা এর সৌন্দর্যকে উপভোগ করার জন্য বিমান পথেই পাড়ি জমান সেখানে। শুধুমাত্র একটি বার এই নদীর স্বর্গীয় রূপকে স্বচক্ষে অবলোকন করার জন্য।

২০০৯ সালে জায়গাটিকে সম্পূর্ণ নিরাপদ হিসেবে ঘোষণা করেছে কলোম্বিয়া। তাই ইচ্ছে হলে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের, যেকোনো ভ্রমণপিপাসু ব্যক্তি বিমানযোগে ঘুরে আসতে পারে কলোম্বিয়ার এই রংধনু নদী বা স্বর্গীয় নদী থেকে। যেহেতু এই নদীর পানিতে কোনো জলজ প্রাণী নেই, তাই এই নদীতে গোসল বা সাঁতারেও কোনো ভয় নেই। নদীর পাশে ঝর্ণা আর সুইমিং পুলের মতো জলাশয় ‘ক্যানো ক্রিস্টাল’-এর সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে আরও বহুগুণে।
অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর এই ‘ক্যানো ক্রিস্টাল’ নদী মহান আল্লাহ তায়ালার একটি অন্যতম সৃষ্টি। যেটি দেখলে অনুভব করা যায় মহান আল্লাহ্ তায়ালার সৃষ্টি জান্নাত না জানি আরও কতো বেশি সুন্দর দেখতে। তাই ইচ্ছে হলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম এই ‘ক্যানো ক্রিস্টাল’ বা রংধনু নদী থেকে। উপভোগ করতে পারেন মহান আল্লাহর একটি অন্যতম সৃষ্টির সৌন্দর্যকে। আর একটি কথা, নদীতে খুব বেশি জল থাকলে বা জলের পরিমাণ খুব কমে গেলে রংবেরঙের খেলা আর দেখা যায় না। কম জলে গাছ শুকিয়ে খয়েরি হয়ে যায়। আবার বেশি জল থাকলে নদীর নিচ পর্যন্ত দেখা যায় না। ফলে নদীতে রামধনুও হয়ে যায় গায়েব।

আরবি/ আরএফ

Link copied!