ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

ঘুরে আসুন জজবাড়ি থেকে

মিনহাজুর রহমান নয়ন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৪, ০১:২৩ পিএম

ঘুরে আসুন জজবাড়ি থেকে

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার নবাবগঞ্জের কলাকোপায় ইছামতী নদীর তীরে প্রাসাদোপম একটি বাড়ি। প্রায় ২০০ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনামলে কারুকার্যময় এ বাড়িটি নির্মিত। জমিদার ব্রজেন রায় ওরফে সুদর্শন রায় নির্মিত বাড়িটি (কোকিলপেয়ারী জমিদারবাড়ি) ‘ব্রজ নিকেতন’ নামেই পরিচিত ছিল। চার একর ৫৭ শতক জমির ওপর তৈরি বাড়িটি এখন ‘জজবাড়ি’ নামে পরিচিত।

যদুনাথ সাহার ছিল পাঁচ ছেলে-মেয়ে। তাদের মধ্যে চারজনকে আরও চারটি বাড়ি তৈরি করে দিয়েছিলেন পশ্চিমপাড়ায়, লোকজন বলে তেলিবাড়ি। জমিদার বাড়িটি দিয়ে যান ছোট ছেলে নবকুমারকে। তাদের অনেকে এখন মুর্শিদাবাদে থাকেন। প্রায় পৌনে ২০০ বছরের পুরনো বাড়িটিতে এখন পাঁচটি পরিবার বাস করে। যদুনাথ ছিলেন মারোয়ারি ব্যবসায়ী। সুপারি, লবণ আর শাড়ি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। বরিশাল থেকে কিনে চালান দিতেন কলকাতা ও মুর্শিদাবাদে।

একজন জজ এ বাড়িটি কিনেছেন বলে এর নাম এখন জজবাড়ি। খন্দকার আবু আশফাক ও তার ভাই আবুল কালাম খন্দকারসহ ওই পরিবারের সদস্যদের দখলে আছে পুরো জমিদার বাড়িটি। খন্দকার আবু আশফাকের বড় ভাই খন্দকার আবুল হোসেন একজন যুগ্ম জেলা জজ। তাই এমন নামকরণ।

প্রায় ২০০ বছরের পুরনো, সুন্দর বাগান ঘেরা এ জজবাড়ি। এটি নবাবগঞ্জের কলাকোপায় অবস্থিত। বাড়ির পাশেই রয়েছে শান বাঁধানো পুকুর। রয়েছে পোষা হরিণের একটি খামার। বাগানের রকমারি ফুল আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে অনায়াসে। জমিদার বাড়িটি অতি প্রাচীনকালের ঐতিহ্যবাহী নকশায় তৈরি। যা আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও সেই পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেবে।

ব্রজ নিকেতনের চোখ ধাঁধানো নির্মাণশৈলী দেখে মুগ্ধ হতে হয় দর্শনার্থীদের। যেকোনো পথিক হঠাৎ বাড়িটির কারুকাজ দেখলে থমকে দাঁড়াবে। বাড়ির সামনে রয়েছে বিভিন্ন ফুল ও ফল গাছের বাগান। বিশালাকৃতির ঐতিহ্যবাহী এ জমিদার বাড়ির পাশেই রয়েছে শান বাঁধানো পুকুর। যেখানে টলটলে পানিতে পা ভিজালেও ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। বাগানের হাজারও রকমের ফুল অনায়াসে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রচুর গাছগাছালির সমারোহ, পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে শুনতে সময় পার হয়ে যায়। এই বাড়িটি নিয়ে একটা লোককাহিনী প্রচলিত রয়েছে। ছিল পাঁচতলা ভবন। এক রাতে তিনটি তলা দেবে যায় মাটির নিচে। ভবনের ওপরের তলায় একটি বড় চৌবাচ্চা আছে।

জনশ্রুতি রয়েছে, খেলারাম ধনীদের ধনদৌলত ডাকাতি করে গরিবদের মাঝে দান করতেন। এ বাড়ি থেকে একটি সুড়ঙ্গ পথ ছিল ইছামতি নদীর পাড়ে। নদীপথে ধন সম্পদ এনে এ সুড়ঙ্গ পথে বাড়িতে নিয়ে আসতেন খেলারাম। এছাড়া এই বাড়িটির পাশে আরেকটি বিরাট পুকুর রয়েছে। লোকমুখে প্রচলিত, মাকে বাঁচাতে খেলারাম সেই পুকুরে নেমে ছিলেন আর উঠে আসেননি। এই পুকুরের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ কিছু চাইলে তার ইচ্ছা পূরণ হতো বলে সে সময়ের মানুষ বিশ্বাস করত। এই বাড়িটি প্রায়ই নাটক এবং চলচিত্রের শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

 

কীভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এখানে যেতে হলে ঢাকা থেকে বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে অথবা শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু (৩য় বুড়িগঙ্গা সেতু) হয়ে দোহার যাওয়া যায়। দোহার এসে কলাকোপা, নবাবগঞ্জের পথ নির্দেশ জেনে নিলে ভালো। জেনে রাখা ভালো এর আশপাশে ৫০০ গজের মধ্যে আরও ৪টি দর্শনীও স্থান (কোকিলপ্যারি জমিদারবাড়ির বৌদ্ধমন্দির, শ্রী লোকনাথ সাহা)।
 

আরবি/এমআরএন

Link copied!