কপ-২৮ চুক্তি অনুযায়ী কতটা এগোচ্ছে; এটা আসলে বলা খুব মুশকিল। কেউ কেউ বলছে চুক্তি অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। অন্যদিকে দেখা যায় অনেক জায়গায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার আরও বেড়ে গেছে। আমাদের দেশেই অনেক কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট রয়েছে। তার মধ্যে মহেশখালী মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উল্লেখযোগ্য। তবে শুধু বাংলাদেশই না পৃথিবীর অনেক প্রান্তেই কয়লা, তেল বা গ্যাসকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। এখানে বড় সমস্যা হলো, উন্নত বা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী দেশগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশগুলোকে তেমন সহযোগিতা করছে না। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যারা সহায়তা করছে তারা এমন শর্তজুড়ে দিচ্ছে; যে শর্তগুলো পূরণ করতে গিয়ে মানুষ অনুৎসাহিত হচ্ছে। কারণ ঋণ বা সহায়তা নিতে যদি অনেক বেশি শর্তের মুখোমুখি হতে হয় তাহলে দেখা যায় সে শর্তগুলো পূরণ করে বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা গ্রহণ করাটা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
পাশাপাশি অপর একটি বড় সমস্যা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া। এদিকে বিকল্প জ্বালানি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে দুর্নীতি কিংবা অপচয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ হওয়া দরকার এটা সবাই বলছে; বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী দেশগুলোর আন্তরিকতার অভাব রয়েছে, অন্যদিকে যে দেশগুলোতে বিকল্প জ্বালানি বাস্তবায়ন খুব জরুরি তারাও সততা এবং নিষ্ঠার পরিচয় দিতে পারছে না। ফলে যতটা বাস্তবায়ন হওয়া উচিত ছিল ততটা হয়নি। তার মানে এই নয় যে, এটা হয়নি বলে এটাকে বাদ দিয়ে অন্য ব্যবস্থা করতে হবে! কেন হয়নি! এর কারণ খুঁজে বের করে বাস্তবায়ন করতে জলবায়ু নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর অধিকতর মনোযোগী হতে হবে। যারা সহায়তা দিতে চায়, এ বিষয়ে তাদেরও শর্ত কমিয়ে আনতে হবে। যাদের সহযোগিতা প্রয়োজন তাদেরও সততা এবং নিষ্ঠার পরিচয় দিতে উদ্যোগী হতে হবে।
কারণ দুপক্ষের সমন্বয় এখানে জরুরি। অন্যথায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব না। কপ-২৮ এর সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া চুক্তি ছিল, ২০৫০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি এমন একটি টার্গেট নেওয়ার খুব প্রয়োজন ছিল। কারণ কোনো কিছুর টার্গেট না নিলে বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। শতভাগ সফল না হলেও টার্গেট নেওয়ার ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবাই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করবে। ফলে শতভাগ বাস্তবায়ন না হলেও অধিকতর বাস্তবায়ন হয়তো সম্ভব। সে ক্ষেত্রে যারা বাস্তবায়ন করবেন এবং যারা অংশীদার সবারই যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য একটা বড় ধাক্কা। তাই আমাদের দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়ন করতে প্রথমেই পরিবহন সেক্টরের দিকে নজর দেওয়া উচিত। কারণ বাংলাদেশে ব্যাপক জ্বালানি ব্যবহার হয় পরিবহন সেক্টরে। সেই পরিবহন সেক্টরে যদি বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তাহলে সে ধাক্কাটা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশেষ করে বিকল্প জ্বালানির সরঞ্জামের দাম সহজলভ্য করতে হবে যেন গ্রাহক পর্যায় এর বাস্তবায়ন সহজে পৌঁছাতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আমরাই দায়ী, আমাদের প্রাত্যহিক জীবন যাপন থেকে শুরু করে অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ড জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ। তাই কপ-২৯ এর কাছে আমার প্রত্যাশা, বেশি জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ যেন করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কুফলগুলো সম্পর্কে মানুষ অবগত থাকলে আজকে না হলেও আগামীদিনে তারা সেটা ভাববে কিংবা এই প্রজন্ম না পারলেও আগামী প্রজন্ম নিশ্চয়ই জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাগুলো সমাধানে উদ্যোগী হবে।
অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী
পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ,খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :