ঢাকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

একটি স্বপ্ন লুকিয়ে আছে

মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৩:২৪ পিএম

একটি স্বপ্ন লুকিয়ে আছে

ছবি: সংগৃহীত

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এগুলো সাশ্রয়ী শিক্ষার মাধ্যমে দেশের নানা প্রান্তের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা, গবেষণার সুযোগ এবং বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা দেন। প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ, দক্ষ শিক্ষক ও সমৃদ্ধ নেটওয়ার্ক শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ার অনুপ্রেরণা জোগায়, যা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়ক। উচ্চমাধ্যমিক শেষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন শিক্ষার্থীদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

সদ্য উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিতে থাকা মো. মেহেদী হাসানের গল্প সেই স্বপ্নের প্রকৃত দৃষ্টান্ত।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার একটি ছোট্ট গ্রাম থেকে উঠে আসা মেহেদী উচ্চশিক্ষার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। তার মতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শুধু একটি সনদ অর্জন নয়। এটি জীবনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করার সুযোগ। ছোটবেলা থেকেই মেহেদীর লক্ষ্য ছিল দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা, কিন্তু তার এই স্বপ্ন পূরণের পথে ছিল বহু বাধা। স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলেও তার ইচ্ছা ছিল ঢাকায় গিয়ে পড়াশোনা করার, যদিও পরিবার তাকে স্থানীয় কলেজে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। তবে মেহেদীর দৃঢ়সংকল্প এবং কঠোর পরিশ্রম তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। ঢাকা কলেজে পড়ার ইচ্ছে থাকলেও চয়েস লিস্টের দ্বিতীয় নম্বরে থাকা সরকারি বাঙলা কলেজে ভর্তির সুযোগ হয়। ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা শহরে আসার পর, সে একটি সাশ্রয়ী বাসা খুঁজে পেতে সংগ্রাম করে, এবং তার জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যেতে প্রতিদিনই নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। মেহেদী বলেন, ‘আমার বাবার পরিশ্রম আর মায়ের কষ্টের কথা ভাবলে মনটা কেঁদে ওঠে। আমি জানি, তাদের এ ত্যাগের পেছনে শুধু আমার স্বপ্নই নয়, তাদেরও একটি স্বপ্ন লুকিয়ে আছে।’ তার এই সংগ্রাম এবং স্বপ্নবাজ মনোভাব অনেক শিক্ষার্থীর জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবিধা অসংখ্য। মানসম্মত শিক্ষা, খরচসাশ্রয়ী সুযোগ, এবং একাধিক অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতা একটি উদ্দীপনাময় পরিবেশ তৈরি করে। গবেষণা এবং উচ্চমানের শিক্ষকতার পাশাপাশি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতের জন্য এক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সাহায্য করে, যা শিক্ষার্থীদের পেশাগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মেহেদী বিশ্বাস করেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা তার এবং তার পরিবারের জন্য সম্মানের বিষয়। তার স্বপ্ন এক দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার, এবং তিনি বলেন, ‘এই স্বপ্ন শুধু আমার নয়; আমার বাবা, মা, ভাই-বোন এবং আশপাশের মানুষেরও।’ তার দৃঢ় বিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রম এবং আল্লাহর রহমতে এক দিন তিনি তার লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন। মেহেদীর সংগ্রামের গল্প প্রমাণ করে, ইচ্ছাশক্তি আর ধৈর্য থাকলে যেকোনো বাধাই অতিক্রমযোগ্য। পুঁজির অভাব, শারীরিক বা মানসিক অসুবিধা সত্ত্বেও, যেকোনো মেধাবী শিক্ষার্থী তার লক্ষ্য অর্জনে সফল হতে পারে। মেহেদী এবং তার মতো আরও অনেক শিক্ষার্থীর গল্প শেখায়, স্বপ্ন দেখতে এবং তা পূরণের পথে বাধা অতিক্রম করার অদম্য ইচ্ছাশক্তি সঞ্চয় করা।

আরবি/ আরএফ

Link copied!