সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষের সঙ্গে গাছপালার যে সম্পর্ক, আজীবন সে সম্পর্ক চলমান থাকবে। অতীত থেকে বর্তমান, গাছের বিকল্প তৈরি হয়নি কখনো। এই যে প্রতিদিন বাইরে বেড়লেই চারপাশে এত গাছপালা দেখা যায়; কোনোটা ফল দেয়, কোনোটা দেয় কাঠ, কোনোটা আবার দেয় অনিন্দ্য সুন্দর ফুল। অক্সিজেন তো দেয়ই, আরও দেয় ছায়া। গাছ নিয়ে আলোচনার অনেক বিষয় থাকলেও আজকের আলোচনা বাগান করা নিয়ে। মানুষের শখের শেষ নেই। পরিবেশ, অবস্থান, পরিস্থিতি ভেদে মানুষের শখের পরিবর্তন হয়ে থাকে। একটা কাজ একজনের কাছে ভালো লাগা বা শখ হলেও সেই একই কাজ অন্য আরেকজনের কাছে ভালো লাগার বিষয় না-ও হতে পারে। কিন্তু বাগান করা এমন একটি শখ, যা সারা বিশ্বে সবার কাছেই সমাদৃত। বাংলাদেশেই এমন প্রচুর মানুষজন রয়েছেন যাদের প্রিয় শখ হলো বাগান করা। কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার ব্যবসায়ী রমিজুল হক তেমন একজন সৌখিন মানুষ। রমিজ মিয়া নামে পরিচিত মানুষটা পেশায় একজন খুদে ব্যবসায়ী। পেশাগত ব্যস্ততার বাইরে তার প্রধান শখ বাগান করা। যা এখন শখ থেকে ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়েছে। ছোটবেলা থেকে বাগান করতে থাকা রমিজুল হকের বাগান করার অভিজ্ঞতা কমপক্ষে ৩০ বছর। অতীতে চাচার বাগান-ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলেও পরে তিনি নিজে বাগান করা শুরু করেন। প্রথমদিকে অল্প জমি নিয়ে ফলের বাগান করেছিলেন। সময় যেতে থাকে একইসঙ্গে তার বাগানও বড় হতে থাকে, বাড়তে থাকে গাছের প্রকারভেদ। সরেজমিনে তার বাগান ঘুরে দেখলে বোঝা যায় তিনি কতটা যত্নের সঙ্গে বড় করে তোলেন প্রিয় বাগানের প্রিয় গাছগুলো। ব্যাস্ত জীবনের মধ্যেও সময় বের করে বাগান করা বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ‘গাছগাছালির সঙ্গে ভালোবাসা আমার ছোটোবেলা থেকেই। চাচা বাগান করতেন, তার সঙ্গে থেকে থেকেই গাছের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তখন তো আর এতকিছু বুঝতাম না, গাছ লাগাইতাম, বড় হইতো, ফুল ফুটতো, ফল ধরত এতেই আনন্দ ছিল, এক ধরনের মানসিক শান্তি। বড় হতে হতে গাছপালার নানা উপকারী গুণ বুঝতে পারলাম।’ কর্মজীবনের ব্যাস্ততার মাঝেও তিনি যেভাবে সময় দিয়েছেন গাছপালা লালন-পালনে, গাছপালা থেকেও পেয়েছেন তেমন সুন্দর প্রতিদান। বীজ থেকে অঙ্কুরিত চারাগাছ যেমন বড় হয়ে দেয় ফল-ফলান্তি। তেমন করে শখের বসে শুরু করা বাগানই একপর্যায়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছে অর্থনৈতিক সাহায্য হয়ে। তার বাগানে নানারকম গাছপালার মধ্যে যেমন রয়েছে ফলমূলের গাছ, তেমনি রয়েছে ফুলের গাছও। আরও আছে নানা ধরনের শাক-সবজি। ফলমূল, শাক-সবজি ছাড়াও তিনি বাগানের ভেতর কলম করার মাধ্যমে বিভিন্ন গাছের চারা তৈরি করেন। তিনি বলেন, ‘শখ করে শুরু করলেও এখন বাগানে উৎপাদিত ফলমূল, শাক-সবজি, চারাগাছ দিয়ে ব্যাক্তিগত চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাজারে বিক্রির মাধ্যমে আর্থিক চাহিদাও মেটাতে পারছি।’ বাগানের খরচ এবং আয় নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, বাগান থেকে যে আয় আসে তার অনেকটা বাগানের পেছনে খরচ হলেও কিছু অর্থ অবশিষ্ট থাকে, যা দিয়ে তিনি সংসারের খরচ বহন করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, এলাকায় তিনি গাছপ্রেমী হিসেবে বিশেষ পরিচিত। বুড়িচংসহ আশপাশের বেশকিছু এলাকায় তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই বাগান করতে শুরু করেছেন। রমিজুল হক গ্রামের মানুষ হলেও; পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে গাছপালা কতটা জরুরি বা তীব্র গরম, খরা, অতিবৃষ্টি ইত্যাদি রোধে গাছপালা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এসব হিসাব তার কাছে জটিল মনে হলেও, গাছপালা যে উপকারী; সেটা তিনি খুব ভালো করে জানেন। সবশেষে বাগান করা নিয়ে মানুষকে কি বলতে চান? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যে আমাদের উপকার করে সেটা প্রাণী হোক বা গাছ, তাকে আমাদের ভালোবাসা উচিত। গাছের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রে বাগান করার মতো সহজ এবং লাভবান উপায় আর হয়তো নেই। বাগান করার মাধ্যমে মানুষ পরিবেশের উপকার করার পাশাপাশি নিজেও মানসিকভাবে বা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে।’ আশা করা যায় পৃথিবীর সমস্ত মানুষ এই কথার সঙ্গে একমত হবেন যে, ‘গাছ বাঁচলেই মানুষ বাঁচবে।’
আপনার মতামত লিখুন :