বর্তমান যুগে কৃষি ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হয়ে উঠেছে অর্গানিক চাষ। তাই ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে অর্গানিক কৃষির প্রতি ক্রমশ আগ্রহ বেড়ে চলছে কৃষকের।
তবে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে গিয়ে তাদের পড়তে হচ্ছে, কিছুটা বিড়ম্বনায়। কারণ অর্গানিক কৃষিতে পোকামাকড় দমন করা কৃষকের জন্য কিছুটা জটিল। তবে কৃষিবিদদের মতে কিছু প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করে খুব সহজেই অর্গানিক উপায়ে পোকা দমন করা সম্ভব। দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সাক্ষাৎকারে সেসব উপায় জানিয়েছেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান।
সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা
একটি সফল অর্গানিক কৃষি পদ্ধতি হলো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বা আইপিএম। এটি একটি কার্যকরী উপায় যেখানে পোকামাকড় দমনে একাধিক পদ্ধতির সংমিশ্রণে প্রাকৃতিক শিকারি পোকামাকড় যেমন লেডিবাগ, প্রোনোটোমেনিক, প্রিডেটরি মাইট ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এই পোকামাকড়গুলো ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফসলের ক্ষতি কমায়। উদাহরণস্বরূপ, লেডিবাগের একটি প্রজাতি (অ্যাফিড) খেয়ে ফসলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
পাখি ব্যবহার
প্রাকৃতিক উপায়ে পোকামাকড় দমনের একটি দারুণ পদ্ধতি হচ্ছে পাখি ব্যবহার। অর্থাৎ ফসলি জমিতে বিভিন্ন খুঁটি বা ডালপালা পুঁতে রাখা। এ ধরনের খুঁটি বা ডালপালা পাখিদের জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে এবং পাখিগুলো পোকামাকড় খেয়ে ফসলের ক্ষতি কমায়। এতে কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে পোকামাকড়ের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়।
ফাঁদ ব্যবহার
অর্গানিক পদ্ধতিতে পোকামাকড় দমন করতে ফাঁদের ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী। একাধিক ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করে কীটপতঙ্গ আটকানো যায়। যেমন- ইয়েলো স্ট্রিপ ট্র্যাপ বা হলুদ আঠাল ট্র্যাপ ব্যবহার করে বিশেষত পাতার পোকার বা মথের মতো পোকামাকড় আটকানো সম্ভব।
এই ফাঁদে পোকামাকড় আঠাল পৃষ্ঠে আটকে পড়ে, ফলে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এ ছাড়া ফেরোমন ট্র্যাপও খুব কার্যকরী পদ্ধতি। এই ট্র্যাপগুলো পুরুষ পোকামাকড়কে আকর্ষণ করে, ফলে তারা ট্র্যাপে আটকা পড়ে এবং প্রজনন চক্রে বাধা সৃষ্টি হয়। এটি পোকামাকড়ের বিস্তার রোধে সহায়ক। ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে পোকামাকড়ের সংখ্যাও কমানো যায় এবং ফসলের সুরক্ষা বৃদ্ধি পায়।
নির্যাস ও প্রাকৃতিক উপাদান
অর্গানিক কৃষিতে বালাইনাশক হিসেবে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক নির্যাস ব্যবহার করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, নিম তেল বা নিম বীজের তেল একটি কার্যকরী প্রাকৃতিক বালাইনাশক হিসেবে কাজ করে। এটি পোকামাকড়ের স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে এবং তাদের মেরে ফেলে। এ ছাড়া তুলসীর নির্যাসও একটি শক্তিশালী বালাইনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়,যা বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গের বিরুদ্ধে কার্যকরী। এসব নির্যাস সহজেই ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি করা সম্ভব।
এছাড়া বাজারও ভালো মানের নির্যাস পাওয়া যায়। নির্যাসের এই ধরনের ব্যবহার কৃষকদের জন্য লাভজনক ও কার্যকরী হতে পারে, কারণ এটি কোনো ধরনের রাসায়নিকের ব্যবহার ছাড়াই পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
বাজারে প্রাকৃতিক বালাইনাশক
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক বালাইনাশক পাওয়া যায়, যা অর্গানিক উপায়ে পোকামাকড় দমনের জন্য একটি সহজ পদ্ধতি। কৃষকরা গুণগত মান যাচাই করে সহজেই এই প্রাকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহার করে তাদের ফসলের পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, যা মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ।
আপনার মতামত লিখুন :