ঢাকা মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫

ক্যারিয়ার বাছাইয়ের পথনির্দেশিকা

মির্জা হাসান মাহমুদ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৫, ০১:৩৯ পিএম

ক্যারিয়ার বাছাইয়ের পথনির্দেশিকা

ছবি: ইন্টারনেট

সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ নয়। পরিবার, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব এবং সামাজিক চাপের ফলে অনেকেই এমন পেশা বেছে নেয়, যা তাদের ব্যক্তিত্ব ও স্বপ্নের সঙ্গে মেলে না। 

কেউ কেউ নিজের ইচ্ছার বিপরীতে পরিবারের চাপে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন, আবার কেউ হয়তো ডাক্তার হন শুধু পারিবারিক প্রত্যাশা পূরণের জন্য। এ ভুল সিদ্ধান্তগুলো একসময় হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই ক্যারিয়ার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। আসুন, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক-

নিজেকে ভালোভাবে চিনুন
সবার আগে জানতে হবে, নিজের প্রকৃত শক্তি, দুর্বলতা এবং ব্যক্তিত্বের ধরন। আপনি কী ধরনের কাজ করতে পছন্দ করেন, কোন পরিবেশে কাজ করলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন- এসব জানা অত্যন্ত জরুরি। যেমন, আপনি যদি অন্তর্মুখী হন এবং মানুষের সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা করতে না চান, তবে গ্রাহকসেবা বা পাবলিক রিলেশনের মতো পেশা আপনার জন্য আদর্শ হবে না।

আগ্রহ এবং স্বপ্নকে অগ্রাধিকার দিন
ক্যারিয়ার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিজের আগ্রহকে গুরুত্ব দিন। এমন কাজ বেছে নিন, যা আপনার আনন্দের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জীবনের সাফল্য কেবল অর্থ উপার্জনে নয়; সেই কাজকে উপভোগ করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, সংগীতের প্রতি আপনার আগ্রহ প্রবল, তবে নিজে গাইতে বা বাজাতে পারেন না। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বা মিউজিক প্রোডাকশনের মতো পেশাও আপনার জন্য দারুণ বিকল্প হতে পারে।

দক্ষতা মূল্যায়ন করুন
নিজের দক্ষতা বিশ্লেষণ করতে শিখুন। আগ্রহ থাকলেই তা ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে যথেষ্ট নয়; দক্ষতা এবং কাজের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ গুণাবলি থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, যদি জীববিজ্ঞানে আপনার আগ্রহ এবং ভালো দক্ষতা থাকে, তবে জিন প্রকৌশলী, বায়োকেমিস্ট, বা মাইক্রোবায়োলজিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন।

পছন্দের কাজের পরিবেশ চিন্তা করুন
আপনি কোন পরিবেশে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তা আপনার ক্যারিয়ার বাছাইয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। যেমন, আপনি যদি কারখানার কঠোর পরিবেশ পছন্দ না করেন, তবে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং আপনার জন্য উপযুক্ত নয়। আবার যারা টেকনোলজির সঙ্গে কাজ করতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট বা আইটি সেক্টরের চাকরি হতে পারে সেরা বিকল্প।

ভবিষ্যতের চাহিদা বিবেচনা করুন
আপনার পছন্দের পেশার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা সম্পর্কে জানতে হবে। এমন পেশায় ক্যারিয়ার গড়ুন, যা সময়ের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ থেকে যাবে। উদাহরণস্বরূপ, দেশে বিবিএ শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক, কিন্তু চাকরির সুযোগ তুলনামূলকভাবে কম। অন্যদিকে, মাইক্রোবায়োলজিস্টের মতো পেশায় দক্ষ লোকের অভাবে বিদেশিদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

জীবনধারা এবং আর্থিক বিষয় মাথায় রাখুন
ক্যারিয়ার নির্বাচন করার সময় নিজের পছন্দের জীবনধারা সম্পর্কে ভাবুন। আপনি শহরে থাকতে চান, নাকি গ্রামের পরিবেশে কাজ করতেও রাজি? যে পেশা বেছে নিচ্ছেন, তা আপনার আর্থিক চাহিদা পূরণ করতে পারবে কি না, সেটাও বিবেচ্য।

বাস্তবতাকে গ্রহণ করুন
আপনার স্বপ্নের পেশা যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, শুরুতে বাস্তবতা বুঝে এগোতে হবে। যদি পছন্দের পেশায় প্রবেশ করতে উচ্চশিক্ষা প্রয়োজন হয়, তবে তা অর্জনের জন্য পরিকল্পনা করুন। আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকলে বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিন।

ক্যারিয়ার টেস্ট এবং পরামর্শদাতা
আপনি যদি নিজের জন্য উপযুক্ত পেশা নির্ধারণে দ্বিধায় থাকেন, তাহলে অনলাইনে ক্যারিয়ার টেস্টে অংশ নিতে পারেন। এ টেস্টগুলো আপনার ব্যক্তিত্ব, দক্ষতা এবং পছন্দের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পেশার পরামর্শ দেয়। পেশাদার ক্যারিয়ার পরামর্শদাতার সাহায্য নেওয়াও কার্যকর হতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করুন
যে পেশা বেছে নিচ্ছেন, সেখানে কয়েক বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান তা ভাবুন। সেই লক্ষ্য অর্জনে কী কী পদক্ষেপ প্রয়োজন, তা ঠিক করুন। যদি পেশার জন্য নতুন কোনো দক্ষতা অর্জন করতে হয়, তাহলে তার জন্য প্রস্তুতি নিন।

আত্মবিশ্বাস রাখুন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আত্মবিশ্বাস। অনেক সময় পরিবারের বা সমাজের বিরোধিতার কারণে পছন্দের পেশায় প্রবেশ করতে বাধা আসে। তবে মনোবল দৃঢ় থাকলে এবং নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলে সেই বাধা পেরোনো সম্ভব।

সঠিক ক্যারিয়ার বেছে নেওয়া শুধু অর্থ উপার্জনের বিষয় নয়; এটি জীবনের মানোন্নয়ন এবং স্বপ্নপূরণের একটি মাধ্যম। নিজেকে সময় দিন, সঠিক সিদ্ধান্ত নিন এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছান। জীবনকে সার্থক করতে হলে ক্যারিয়ার বাছাইয়ে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ধৈর্যের কোনো বিকল্প নেই।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!