ঢাকা সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫

পড়াশোনার বিষয় হিসেবে চলচ্চিত্র

মিনহাজুর রহমান নয়ন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৫, ০৩:০৯ পিএম

পড়াশোনার বিষয় হিসেবে চলচ্চিত্র

ছবি: সংগৃহীত

সময়কে সেলুলয়েডের ফিতায় ধরে রাখার মাধ্যম হলো চলচ্চিত্র। সমাজের পরিবর্তন, সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি এবং মানব জীবনের জটিলতাগুলো পর্দায় তুলে ধরার এক অনন্য মাধ্যম এ শিল্প। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, জহির রায়হান এবং তারেক মাসুদের মতো কিংবদন্তি নির্মাতারা তাদের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজের দর্পণ রচনা করেছেন। আজকের দিনে চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় তরুণ প্রজন্মের জন্য ক্যারিয়ার গড়ার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।

 

চলচ্চিত্র অধ্যয়ন: কোথায় এবং কীভাবে
দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এখন চলচ্চিত্র নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ার সুযোগ আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগে চার বছর মেয়াদি স্নাতক এবং দুই বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর কোর্সের পাশাপাশি এমফিল ও পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে। ভর্তি হতে হলে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরে খ-ইউনিটে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এ ছাড়া স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তি হতে হলে স্নাতক ডিগ্রি এবং ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এবং গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশেও চলচ্চিত্র অধ্যয়নের সুযোগ আছে।

 

পড়াশোনার কাঠামো
চলচ্চিত্র অধ্যয়ন মূলত হাতে-কলমে শেখার একটি বিষয়। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মাদ আসাদুজ্জামানের মতে, প্রথম তিন বছরে ছাত্রছাত্রীরা পরিচালনা, লাইটিং এবং অভিনয়ের মতো বিষয়গুলোয় প্রাথমিক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করেন। এরপর চতুর্থ বছরে তাদের পছন্দের একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে মেজর করতে হয়। কোর্স শেষে শিক্ষার্থীদের একটি শর্ট ফিল্ম, ডকুমেন্টারি বা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করে জমা দিতে হয়।

 

কাজের সুযোগ
চলচ্চিত্র অধ্যয়ন শুধু একটি ডিগ্রি অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি সৃজনশীল দক্ষতাকে পেশাদার কাজে রূপান্তরিত করার এক দারুণ সুযোগ। এ বিষয়ে পড়াশোনা করলে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম, বিজ্ঞাপনী সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোয় কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। নাটক, চলচ্চিত্র বা টেলিভিশনের জন্য চিত্রনাট্য লেখা, পরিচালনা, প্রডাকশন ডিজাইন, বা পোস্ট-প্রডাকশন সব ক্ষেত্রেই কাজের সুযোগ রয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক কাজ ছাড়াও চলচ্চিত্র নিয়ে যারা পড়াশোনা করেন, তারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও কাজ করতে পারেন। কেউ শর্ট ফিল্ম নির্মাণে দক্ষ হলে ছোট প্রডাকশন হাউস বা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে নিজের প্রতিভার পরিচয় দিতে পারেন। আসাদুজ্জামানের মতে, এ পেশায় সফলতা নির্ভর করে কাজের মান এবং সৃজনশীলতার ওপর। নির্মাতার দক্ষতার ভিত্তিতেই প্রডাকশন হাউস বিনিয়োগ করে।

 

চলচ্চিত্রের গুরুত্ব
চলচ্চিত্র কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়; এটি সমাজের পরিবর্তন, সংস্কৃতি এবং সময়ের কথা তুলে ধরার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপকরণ। ৫০ থেকে ৯০-এর দশকে সত্যজিৎ রায়, জহির রায়হান বা তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র দেখে সেই সময়ের সমাজ ও সংস্কৃতির রূপ পরিলক্ষিত করা যায়।

 

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা করে চাকরির পাশাপাশি সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটিয়ে নিজেকে একজন সফল নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। যারা সৃজনশীল কাজে নিজের প্রতিভা তুলে ধরতে চান, তাদের জন্য চলচ্চিত্র অধ্যয়ন হতে পারে একটি অসাধারণ ক্যারিয়ার পথ।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!