দেশের শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পছন্দের বিষয় না পাওয়া, সেশনজট, আবাসন সমস্যাসহ নানাবিধ প্রতিকূলতার বিপরীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে নানান সুযোগের হাতছানি
আছে লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরির সুবিধা
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভালো মানের গবেষণা ও গবেষণা ব্যয় না থাকার অভিযোগ ছিল একসময়। এ ছাড়া লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরি খাতে ব্যয় করা হতো খুবই কম। তবে এই অভিযোগ এখন আর নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে এখন প্রতিযোগী করে বাড়ছে গবেষণা। একই সঙ্গে বাড়ানো হচ্ছে, লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরি সুবিধাও।
ইউজিসির তথ্য বলছে, ২০২২ সালে দেশের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৮৫টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে কম-বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। এ ছাড়া ৮৬টি বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরি খাতে বড় অঙ্কের টাকা খরচ করেছে।
তথ্যমতে, ওই বছর ৮৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে ব্যয় ছিল ১ কোটি ৩৯ লাখ ৩১ হাজার ৪৮ টাকা ব্যয়। গড়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৫ টাকা। এর আগে ২০৮ সালে ১ কোটি ১৭ লাখ, ২০১৯ সালে ১ কোটি ২০ লাখ, ২০২০ সালে ১ কোটি ৪৫ লাখ, ২০২১ সালে ১৫৩ লাখ টাকা ব্যয় করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
এ ছাড়া ২০২২ সালে ৮৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরি খাতে সর্বমোট ব্যয় করা হয়েছিল প্রায় ৭ হাজার ৬৮৪.৫২ লাখ টাকা, যার গড় প্রায় ৪৫.৯৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে লাইব্রেরি খাতে সর্বমোট ব্যয় ছিল প্রায় ১ হাজার ৫৫৩.৪২ লাখ টাকা, যা গড় হিসাবে ছিল প্রায় ১৮.০৬ লাখ টাকা এবং ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাবরেটরি খাতে সর্বমোট ব্যয় ছিল প্রায় ৬ হাজার ১৩১.১০ লাখ টাকা, যা গড় হিসাবে ছিল প্রায় ৭৩.৮৭ লাখ টাকা।
এর আগে ২০২১ সালে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা ২০২১ সালে ৮৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরি খাতে সর্বমোট ব্যয় ছিল প্রায় ৬ হাজার ৫০০.৬৮ লাখ টাকা, যা গড় হিসাবে ছিল প্রায় ৭৫.৫৯ লাখ টাকা এবং ৬৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাবরেটরি খাতে সর্বমোট ব্যয় ছিল প্রায় ৮০২২.৩০ লাখ টাকা, যা গড় হিসাবে ছিল প্রায় ১১৬.৬৫ লাখ টাকা।
সুযোগ আছে বিনা খরচে পড়ারও
বড় লোক বা অবস্থাশালী পরিবারের সন্তানরা শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন-এ কথা সমাজে প্রচলিত রয়েছে। বেসরকারি পড়তে টাকা বেশি খরচ হওয়ায় অনেকেই দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা পড়াশোনায় আগ্রহী হন কম। সমাজে প্রচললিত সেই গল্প এখন অনেকটা মিথ্যা প্রমাণিত হচ্ছে। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিনা বেতনেও পড়ছেন অনেক দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থী। শুধু দরিদ্র পরিবার হয় স্কলারশিপ ও ওয়েভারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন কম নয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এ ভর্তিযোগ্য মোট আসন সংখ্যার শতকরা ৩ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বিনা মূল্যে ভর্তির জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে।
ইউজিসির তথ্যমতে, ২০২২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা খরচে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ৪ হাজার ৬১০ জন এবং দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী ১৮ হাজার ৯৭ জন, স্কলারশিপে ৫ হাজার ৬৯৩ জন এবং ওয়েভারপ্রাপ্ত ৪৭ হাজার ৯৩৮ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত ছিল। ওই বছরে বিনা খরচে ৬ হাজার ৮৬৬ জন দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী অধ্যয়রত ছিল।
বাড়ছে বিদেশি শিক্ষার্থী
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাফল্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিদেশেও। ফলে বিদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী দেশের এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসছেন। বিগত কয়েক বছর থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে এলেও বাড়ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এতে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব বাড়ছে, অন্যদিকে উজ্জ্ব¡ল হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তিও।
ইউজিসির সর্বশেষ ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ওই বছর দেশের ১০০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩২টিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৭৮ জন। আর ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সংখ্যা ছিল ৬৭০ জন।
বিগত ৫ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮ সালে ৮০৪ জন, ২০১৯ সালে ৪৮২ জন, ২০২০ সালে ৭৬৭ জন, ২০২১ সালে ৬৭৭ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত ছিল। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮ সালে ১ হাজার ৩৮৬ জন, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪৬৭
জন, ২০২০ সালে ১ হাজার ৫৫০ জন, ২০২১ সালে ১ হাজার ৬০৪ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত ছিল। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, পাবলিক
থেকে প্রায় দ্বিগুণ শিক্ষার্থী প্রাইভেটে পড়াশোনা করছেন।
ইউজিসি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, চীন, জাপান, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, গাম্বিয়া, মরক্কো, সাউথ কোরিয়া, মৌরিতানিয়া, তানজেনিয়া, অস্ট্রিয়া, রুয়ান্ডা, জিবুতি, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, সাউথ সুদান ও বাহরাইনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এসে ভর্তি হচ্ছেন।
আপনার মতামত লিখুন :