ঢাকা শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র ছৈলার চর

মো. ফয়সাল আহম্মদ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫, ০২:৩১ পিএম

সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র ছৈলার চর

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

নৈসর্গিক সৌন্দর্যময় এ ভূখণ্ডের নাম ছৈলার চর। বিশখালী নদীর জলরাশির মধ্যে এক টুকরো সবুজ। প্রকৃতি যেন সব সৌন্দর্য এখানে উজাড় করে দিয়েছে।

উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির দক্ষিণ জনপদ কাঁঠালিয়ার বিষখালী নদীর তীরে ছৈলার চর। পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও রয়েছে নানা সংকট। তবু সংকট উপেক্ষা করেই প্রকৃতির নয়নাভিরাম ছৈলার চর পর্যটকদের মিলনমেলায় পরিণত হচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সুন্দরবনের মতোই দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে ছৈলার চর।

বঙ্গোপসাগর থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে কাঁঠালিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের হেতালবুনিয়া মৌজায় বিষখালী নদীতে এক যুগেরও আগে ৩০.৬১ একর জমি নিয়ে জেগে উঠেছে এ বিশাল চর। যেখানে রয়েছে লক্ষাধিক ছৈলাগাছ। আর ছৈলাগাছের নাম থেকেই এ চরের নামকরণ করা হয়েছে ‘ছৈলার চর’।

শীতের সময় শুকনো চরে গহীন অরণ্য। চারপাশে নদীঘেরা যেন ছৈলার বনের দ্বীপ। সেখানে ছৈলাগাছে পাখিরা বাসা বেঁধেছে। অতিথি পাখিও নিরাপদ স্থান মনে করে আশ্রয় নিয়েছে। দেশীয় পাখির সারি তো আছেই। ছৈলা ছাড়াও এখানে কেয়া, হোগল, রানা, এলি, মাদার, আরগুজিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সমারোহ।

প্রতিবছর শীত ও শুকনো মৌসুমে ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত থাকে ছৈলার চর। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি আয়োজনে বনভোজন কিংবা শিক্ষা সফরে ছুটে আসে ছৈলার চরে। ২০১৪ সালে ছৈলার চরটি পর্যটনস্পট হিসেবে চি‎হ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন।

উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ থেকে ছৈলার চরকে পূর্ণাঙ্গ বিনোদনস্পটে রূপ দিতে ডিসি লেক খনন, পুকুরে ঘাটলা, টিউবয়েল, শৌচাগার, শেড ও একটি রান্নাঘর স্থাপন করা হয়। এখানে রয়েছে বিশ্রামার, দূর থেকে আসা পযর্টকদের রাতে থাকার জন্য রেস্ট হাউসও রয়েছে।

এ ছাড়া পর্যটকদের নামাজ পড়ার সুবিধার্থে মসজিদ নির্মাণের কাজও চলমান রয়েছে। 
কাঁঠালিয়া লঞ্চঘাট থেকে নৌপথে যেতে হয় ছৈলার চরে। আমুয়া বন্দর থেকেও ট্রলারে কিংবা অন্য যেকোনো নৌযানে যাওয়া যায়। সড়কপথেও এখানে যাওয়া যায়। পর্যটন এলাকাকে ঘিরে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে।

বিভিন্ন পর্যটকদের আলোচনাকালে তারা বলেন, ছৈলাগাছের ফল সবুজ। এর ফুলে সাদা-লাল সংমিশ্রণ রয়েছে। এ ফুলের গোড়া কেটে রাতে ভিজিয়ে রাখলে সকালে মধু জমে ফুলের গোড়ায়। উপকূলীয় অঞ্চলের কিশোর-কিশোরীদের কাছে এ ফুলের মধু বেশ প্রিয়। গাছের টকজাতীয় ফলটি কাঁচা, পাকা ও রান্না করা অবস্থায় খাওয়া যায়।

এমনকি এ ফল দিয়ে জেলিও তৈরি করা সম্ভব। এখানে পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি ছৈলাগাছের ওপর নির্ভর করে অনেক ধরনের খাদ্য তৈরির সম্ভাবনাও আছে। উদ্ভিদটির শেকড় মাটির অনেক গভীর যায়। ফলে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা থেকে উপকূলীয় জনসাধারণের জানমাল রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে এ গাছ।

স্থানীয় বাসিন্দারা ছৈলার চরকে আরও বেশি পযর্টকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে বিশখালি নদীতে একটি পল্টুন নির্মাণ এবং সুন্দরনের সঙ্গে সরাসরি লঞ্চ-জাহাজের ব্যবস্থা করার দাবি জানান। এতে দেশি-বিদেশি পযর্টকেরা এখান থেকে সুন্দরবনে যেতে পারবে কিংবা ছৈলার চরে আসতে পারবে।

ইউএনও জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ছৈলার চরের পর্যটন সম্ভাবনাকে পরিপূর্ণভাবে বিকাশের জন্য অনেক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে। আমরা আশা করছি, পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে ছৈলার চরকে আমরা দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন হাব হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।

লেখক: কাঁঠালিয়া, ঝালকাঠি প্রতিনিধি 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!