আচমকা কোন পথ থেকে মোড় ঘোরানো স্বপ্নের কাছে জীবন কিছুটা নির্লজ্জ বটে! কিন্তু, দীর্ঘদিন লালন করা স্বপ্ন যদি হঠাৎ হয়ে যায় বিকল্প পথের দিশারি, তাহলে সে পথে থেমে নয়, এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা, প্রত্যেক গন্তব্যের শেষেই থাকে স্বপ্ন সমান উপহার। বলছি, সময়ের আলোড়ন সৃষ্টি করা তরুণ মিউজিশিয়ান তানজিব খানের কথা।
খুব ছোট থেকেই তার স্বপ্ন ছিল ম্যাজিশিয়ান হওয়ার। কিন্তু, বাস্তবতা তাকে হাঁটিয়েছে বিকল্প পথে। সে পথ তাকে ম্যাজিশিয়ান বানাতে না পারলেও, বানিয়েছে মিউজিশিয়ান। আজ তিনি মনের মাধুরী দিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করতে পারছেন না ঠিক, তবে বাদ্যযন্ত্রের ভিন্নধর্মী ম্যাজিক দেখিয়ে হয়ে উঠেছেন ম্যাজিশিয়ান অথবা মিউজিশিয়ান; সুরেলা শব্দের জাদুতে ছুঁয়ে যাচ্ছেন লাখো মানুষের হৃদয়। এসব গল্প জানাতে তিনি কথা বলেছেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন— আরফান হোসাইন রাফি
রূপালী বাংলাদেশে: তানজিব থেকে কুঁড়েঘরের গিটারিস্ট তানজিব খান হয়ে ওঠার গল্পটা জানতে চাই।
তানজিব খান: আমার কখনো মিউজিশিয়ান হওয়ার ইচ্ছা ছিল না। ছোটবেলায় ভেবেছিলাম ম্যাজিশিয়ান হব। ২০১৬ সালে ইউটিউবে ভিডিও দেখে ম্যাজিক শিখতে শুরু করি। কিন্তু ২০১৭ সালে কুঁড়েঘর ব্যান্ড যখন যাত্রা শুরু করল, আমি তখন ব্যান্ড ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করতাম।
ধীরে ধীরে ব্যান্ড মিউজিকের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। একদিন ইউটিউবে গান শুনতে Guns and Roses ব্যান্ডের November Rain গানটা শুনি। সেখানকার Slash-এর গিটার সলোটা আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করে।
তখনই ভাবলাম, এই সলোটা গিটারে তুলতে হবে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম একটা একোস্টিক গিটার কিনি। তারপর ইউটিউব দেখে নিজে নিজে গিটার শেখা শুরু করি। সেখান থেকেই আমার গিটারিস্ট হওয়ার যাত্রা শুরু।
রূপালী বাংলাদেশ: সম্ভবত আপনার পূর্বপুরুষদের কেউ মিউজিকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না! আপনি কেন এবং কীভাবে যুক্ত হলেন?
তানজিব খান: হ্যাঁ, আমাদের পরিবারে আগে কেউ কখনো মিউজিক লাইনে ছিলেন না। আমি আসলে কুঁড়েঘর ব্যান্ডের মাধ্যমেই মিউজিকের সঙ্গে যুক্ত হই। ২০১৭ সালে আমার বড় ভাই তাসরিফ খান কুঁড়েঘর ব্যান্ড তৈরি করেন।
সেখানে আমি ম্যানেজারের ভূমিকা পালন করতাম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমার গিটার বাজানোর প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। ২০১৭ সালের শেষদিকে নিজের গিটার কিনি আর ইউটিউব দেখে শেখা শুরু করি। সরাসরি কোনো মেন্টরের কাছে শেখা হয়নি, তবে ইউটিউবের ভিডিও আর যাদের বাজানো দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি, তারাই আমার মেন্টর।
রূপালী বাংলাদেশ: স্বপ্নবাজ তানজিব খান নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
তানজিব খান: এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি, সবই আমার কাছে স্বপ্নের মতো। তবে একটা বিশেষ স্বপ্ন আছে। একদিন কুঁড়েঘর ব্যান্ডের সঙ্গে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে লাখ লাখ মানুষের সামনে পারফর্ম করব। এমন একটা শো, যা সারা বিশ্বের মানুষ উপভোগ করবে।
রূপালী বাংলাদেশ: আজকের জায়গায় দাঁড়িয়ে জীবন থেকে এমন একটি গল্প শেয়ার করুন, যা আগামী প্রজন্মকে সাহস জোগাবে।
তানজিব খান: গিটার কেনার ৭ মাসের মাথায় একটা বিশেষ ঘটনা ঘটে। তখন কুঁড়েঘর ব্যান্ডকে ত্রিপুরার একটা কনসার্টে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু আমাদের গিটারিস্ট সাব্বিরের ভিসা না হওয়ায় সবাই টেনশনে পড়ে যায়।
আমার তখন খুবই বেসিক লেভেলের দক্ষতা ছিল। কয়েকটা কর্ড আর দুই-তিনটা রিদম জানতাম।
কিন্তু ব্যান্ড মেম্বাররা সিদ্ধান্ত নেয়, আমাকে গিটার বাজাতে হবে, কারণ আমার ভিসা হয়ে গেছে। মাত্র দুই দিনে ১১টা গান শিখতে হয়। টানা প্র্যাকটিস করে কনসার্টের জন্য নিজেকে তৈরি করি। ওই কনসার্ট ছিল আমার জীবনের প্রথম পারফরম্যান্স, তাও দেশের বাইরে!
সেই দিন সাহস করে ওই স্টেজে না উঠলে হয়তো আজ ব্যান্ডের গিটারিস্ট হিসেবে নিজেকে দেখতে পেতাম না।
রূপালী বাংলাদেশ: আমরা জেনেছি, আপনি মেধাবী তরুণ প্রজন্মকে বাদ্যযন্ত্র শেখানোর একটি স্বপ্নকে লালন করেন। সে স্বপ্নটা যদি খুলে বলতেন।
তানজিব খান: আমার ইচ্ছে, এমন একটা কমিউনিটি তৈরি করা, যেখানে সবাই একে অপরের সঙ্গে নলেজ শেয়ার করতে পারে। ইউটিউব দেখে শেখা সম্ভব, কিন্তু ইউটিউব ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে পারে না।
তরুণ প্রজন্ম যেন সঠিক গাইডলাইন পায়, সেটাই আমার লক্ষ্য। একটা ভালো গাইডলাইন থাকলে যা পাঁচ বছরে শেখা সম্ভব হয়নি, সেটা হয়তো পাঁচ মাসেই শিখে নেওয়া সম্ভব। তাই একটা শক্তিশালী কমিউনিটি গড়ে তোলা
আমার স্বপ্ন।
আপনার মতামত লিখুন :