ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

পুরুষের ভেরিকোসিল

ডা. নিতাই পদ বিশ্বাস
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

অন্ডকোষ থেকে উপরের দিকে বিস্তৃত শিরাগুলোর অস্বাভাবিক ফুলে যাওয়া ও পেঁচানো অবস্থার নাম ভেরিকোসিল। সাধারণত শৈশব ও কৈশোর বয়সে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি এবং প্রায় ১৫% পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হন। ব্যপ্তি অনুপাতে এই রোগের বিভিন্ন ধরনের জটিলতা পরিলক্ষিত হয়- বন্ধ্যত্ব তার মধ্যে অন্যতম। বাম দিকে এই রোগটা বেশি দেখা গেলেও ডান পাশ বা উভয় দিকেও হতে পারে।

বিভিন্ন কারণে এ রোগ হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কারণটা অজানাই রয়ে যায়। জ্ঞাত কারণগুলোর মধ্যে পেটের দুই বড় ধমনীর মধ্যে অন্ডকোষ শিরা চাপা পড়া বা বাম কিডনি শিরার চাপ সরাসরি অন্ডকোষের শিরায় পড়াসহ এবং কোষ্ঠ্যকাঠিন্য ও পেটের নানাবিধ টিউমার এ রোগের অন্যতম কারণ হিসাবে ধরে নেওয়া যায়।  

উপসর্গ
সাধারণত লম্বা,  পাতলা ও স্মার্ট  গড়নের  পুরুষেরা এই রোগের  উপসর্গ  নিয়ে  আসেন; সেক্ষত্রে নির্দিষ্ট অন্ডকোষে ব্যথা থাকে যেটা উপরের দিকে ছড়িয়ে যায়, অন্ডকোষের শিরাগুলো ফোলা ও পেঁচানো থাকতে পারে যা কিনা দেখেই বোঝা যায় বা হাতের ছোঁয়ায় পাতলা ব্যাগভর্তি কৃমি/কেঁচোর মতো অনুভূত হয়। পাশাপাশি পেটের কোনো টিউমার নিয়েও রোগীরা আসতে পারেন। বিশেষজ্ঞ ইউরোলজিস্টগণ ক্ষেত্রবিশেষে রোগীকে দাঁড়িয়ে এবং শোয়া অবস্থায় পরীক্ষা করে রোগটা নির্ণয় করতে পারেন। তবে কালার ডপলার আলট্রাসাউন্ড করলে সামগ্রিক চিত্রটা ভালোভাবে বোঝা যায়। বিশেষ করে সার্জারির পূর্বে অবস্যই এটা করে নিতে হবে।

রোগের ধরন:
রোগের ব্যপ্তি অনুযায়ী এটা চার প্রকারের হয়। গ্রেড শূন্য থেকে গ্রেড তিন। ভেরিকোসিল পরবর্তী অন্ডকোষ ছোট বনে যেতে পারে, অন্ডকোষের ভেতরের প্রকৃতি পাল্টে যেতে পারে যার ফলে শুক্রানুর গুণগত মানের অবনতি ঘটে বিধায় শেষমেশ বন্ধ্যত্ব পর্যন্ত ঘটতে পারে।

চিকিৎসা
প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়; যেমন- ব্যথা উপশমকারী ওষুধের সঙ্গে আরও কিছু ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়। তবে যে ক্ষেত্রে শিরাগুলো বেশি মাত্রায় ফুলে যায় বা পেঁচানো থাকে, সার্বক্ষণিক কষ্টদায়ক ব্যথা থাকে যা ওষুধে কমে না, বন্ধ্যত্ব বা কিছু  ক্ষেত্রে  চাকরিতে প্রবেশের পূর্বশর্ত হিসাবে এ  রোগের শৈল্য চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা গেলেও অপারেটিং অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে শৈল্য চিকিৎসায় সব থেকে বেশি সুফল পাওয়া  যায়।  নিজ থেকে পরীক্ষা করে সন্দেহ করা মাত্রই বিশেষজ্ঞ ইউরোলজিস্টের শরণাপন্ন হলে ভালো ফল আশা করা যায়।


লেখক: প্রফেসর ডা. নিতাই পদ বিশ্বাস 
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইউরোলজি বিভাগ 
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি
চেম্বার: আলোক হাসপাতাল, মিরপুর-৬ 
হটলাইন: ১০৬৭২