প্রাকৃতিক চাষের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫, ০৪:৪২ পিএম

প্রাকৃতিক চাষের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি

ছবি: সংগৃহীত

দিন দিন চাষাবাদে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে জৈব কৃষির। পরিবেশবান্ধব কৃষিব্যবস্থা গড়ে তুলতে কৃষকেরা অবলম্বন করছেন প্রাকৃতিক উপায়। কারণ, এই পদ্ধতিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার থেকে বিরত থাকার ফলে মাটির স্বাভাবিক গুণাগুণ বজায় রেখে সহজেই গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে টেকসই কৃষিব্যবস্থা। কিন্তু প্রাকৃতিক চাষাবাদের খরচ নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন কৃষকেরা। কেউ কেউ অজৈবের তুলনায় খরচ বেশি হওয়ার ভয়ে পা বাড়ায় না জৈব কৃষির দরজায়।

কিন্তু কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে অজৈবের তুলনায় খরচ কিছুটা বেশি হলেও চাষাবাদের সবদিক বিবেচনায় জৈব কৃষি কৃষকের জন্য কখনো ক্ষতি বয়ে আনে না! এ বিষয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক উপায়ে চাষাবাদে খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে এটা সত্য! তবে এটি  দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক হতে পারে। কারণ, জৈব কৃষি মাটির উর্বরা শক্তি বাড়ানো, সেচের পানির ব্যবহার কমানো এবং ক্ষতিকারক রাসায়নিকের অনুপস্থিতি স্বাস্থ্যকর ফল ও শস্য উৎপাদনের সহায়ক।

এতে কৃষকরা একদিকে যেমন- পরিবেশের ক্ষতি কমাতে পারে আবার অন্যদিকে তেমনি খাদ্য নিরাপত্তা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়াও অজৈব কৃষির সঙ্গে একটি তুলনা করলে দেখা যাবে যে, কনভেনশনাল ফার্মিং বা অজৈব কৃষিতে আমরা রাসায়নিক সার, রাসায়নিক কীটনাশক বা বালাইনাশক ব্যবহার করি। এক্ষেত্রে অনেক সময় আমাদের হরমোন স্প্রে করতে হয়, যেটার জন্য আলাদা খরচের পরিমাণ বেড়ে যায়।

কিন্তু আপনি যদি এটি অর্গানিক ফার্মিং এর সঙ্গে তুলনা করেন সেক্ষেত্রে কিন্তু এটা সিন্থেটিক ফার্টিলাইজার, পেস্টিসাইড, উইডিসাইড বা আগাছানাশক কিন্তু আমরা ব্যবহার করি না। সে তুলনায় অর্গানিক ফার্মিং এর খরচ কম হওয়ার কথা। কিন্তু এখানে একটা বিষয় হলো, যেহেতু আমরা সিন্থেটিক পেস্টিসাইড ফার্টিলাইজার ব্যবহার করছি না, সেক্ষেত্রে আমাদের আগাছা নিধন, রোগবালাই  এবং পোকামাকড় দমনের ক্ষেত্রে শ্রমিকের খরচটা বেড়ে যায়।

ওভারঅল চিন্তা করলে অর্গানিক ফার্মিং এর তুলনায় কনভেনশনাল ফার্মিং এর খরচটা কম। আর ফলনের কথা যদি বিবেচনা করি তাহলে অর্গানিক ফার্মিং এর ফলন একটু কম হবে। ১৫%-২০% ফলন কমে যাবে। কিন্তু আপনি যদি প্রফিটের কথা চিন্তা করেন, এটি ডিপেন্ড করে তিনটি বিষয়ের উপর। উৎপাদন খরচ, মার্কেট প্রাইস এবং প্রোডাকশন বা ফলন।

এক্ষেত্রে দেখা যায়, অজৈব কৃষির তুলনায় জৈব কৃষির প্রফিট বেশি হবে। কারণ হলো, এখানে প্রোডাকশন কস্ট বেশি হলেও আমরা  অর্গানিক উপায়ে যে প্রোডাক্ট, যেমন- শাক-সবজি বা অন্যান্য ফসল তৈরি করছি তার মার্কেট ভ্যালু কিন্তু কনভেনশনাল ফার্মিং এর মাধ্যমে উৎপাদিত ফসলের তুলনায় অনেক বেশি। ওভারঅল চিন্তা করলে অর্গানিক ফার্মিং এ পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না বা ফার্মার বা অন্য মানুষের যারা এ প্রডাক্টটি ক্রয় করে তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করলে প্রফিট সেটিকেও ভাবতে পারি। সুতরাং পরিবেশ যদি ভালো থাকে, মানুষের স্বাস্থ্য যদি ভালো থাকে তাহলে সমাজটাও ভালো থাকবে। আমাদের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে, দূষণ কম হবে। পরিশেষে  ইনশিউর করতে পারি সবদিক বিবেচনায় অর্গানিক ফার্মিং এ লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!