বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের ইতিহাসে এক দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান স্টুডেন্ট ওয়েজ। ৭৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি জাতি গঠনে এবং সৃজনশীল সংস্কৃতির বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে। মো. হাবিবুল্লাহর হাত ধরে প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকেই স্টুডেন্ট ওয়েজ সাহিত্য, শিক্ষার প্রসার এবং মানবিক মূল্যবোধের উন্নয়নসহ সমাজে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে। যার ফলে প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং বইয়ের জগতে নিজস্ব পরিচিতি তৈরি করতে সক্ষম হয়। তার পরবর্তী সময়ে স্টুডেন্ট ওয়েজের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তার সন্তান মো. লিয়াকতউল্লাহ, যিনি প্রকাশনা শিল্পে দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন।
এরপর ধারাবাহিকভাবে দায়িত্ব পান তৃতীয় প্রজন্মের প্রকাশক মো. মাশফিকউল্লাহ তন্ময়। যিনি বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং বিস্তারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতি, পাঠক সমাজের চাহিদার পরিবর্তন এবং বাজারের নতুন অবস্থান সৃষ্টি হওয়ার ফলে পুরোনো পদ্ধতিগুলোর থেকে নতুন ধারার প্রকাশনা প্রথার দিকে ঝোঁক বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খেয়ে ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের মানচিত্র। এমতাবস্থায় কেমন কাটছে স্টুডেন্ট ওয়েজের দিনকাল? এই নিয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন স্টুডেন্ট ওয়েজের স্বত্বাধিকারী মো. মাশফিকউল্লাহ তন্ময়।
তিনি বলেন,‘স্টুডেন্ট ওয়েজ শুরু হয়েছিল আমার দাদার হাত ধরে সেই ১৯৫০ সালে। আমি থার্ড জেনারেশন হিসেবে ব্যবসাটি দেখছি। ২০২৫-এ আমাদের প্রতিষ্ঠানটির ৭৫ বছর পূর্ণ হলো। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে আমরা বহু গুণী লেখকের সঙ্গে কাজ করেছি। সৈয়দ মুজতবা আলী, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, মুহাম্মদ আবদুল হাই, আনিসুজ্জামান, শওকত ওসমান, সৈয়দ শামসুল হক, হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, সেলিনা হোসেন, আহমদ ছফা, কবি জসীম উদ্দীনসহ আরও অনেক কিংবদন্তি লেখক জড়িয়ে আছেন আমাদের প্রকাশনীর সঙ্গে।
উল্লেখযোগ্য, সাহিত্যিক আনোয়ার পাশার লেখা মুক্তিযুদ্ধের প্রথম উপন্যাস ‘রাইফেল রোটি আওরাত’-এর প্রকাশক আমরা। এ ছাড়াও হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত পাঁচ উপন্যাস, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘অচিনপুর’, ‘সৌরভ’, ‘বাসর’, ‘আনন্দ বেদনার কাব্য’ এবং আহমেদ ছফার ‘ওঙ্কার’ আমাদের প্রকাশনী থেকে এসেছে। তাই সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আমরা এখনো সৃজনশীলতা বিকাশে কাজ করে যাচ্ছি।
আমাদের লক্ষ্য একটাই, পাঠকদের ভালো বই কম দামে উপহার দেওয়া। এবারের বইমেলায় জুলাই নিয়ে আমাদের নতুন তিনটি বই এসেছে, ইংরেজি দুটি বই আছে, জুলাই নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে যত নিউজ হয়েছে সব একসঙ্গে কম্বাইন্ড করা হয়েছে। এছাড়া কোয়ান্টাম ফিজিক্সের ওপরও দুটি বই আছে। আইটি নিয়েও এবার বেশকিছু বই আসবে আমাদের। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বাংলাদেশের মাইক্রোসফট এমডির একটি বই আসছে।
তারপর সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে অনেক সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশে। সেক্ষেত্রে এবারও ইয়াং জেনারেশনকে ধারণা দেওয়ার জন্য সেমিকন্ডাক্টর ওপর একটি বই আসছে। আর গল্প, উপন্যাস, কবিতা এগুলো তো আছেই।’ যোগ করে তিনি আরও বলেন,
‘স্টুডেন্ট ওয়েজ সব সময় মেধাকে প্রাধান্য দেয়। আমাদের কাছে নতুন পুরোনো বলতে কিছু নেই। নতুনদের জন্যও আমাদের প্রকাশনী আছে ‘বর্ষাদুপুর’। যেখানে আমরা উদীয়মান লেখকদের নিয়ে কাজ করছি।
অনেক ক্ষেত্রেই নবীনদের অভিযোগ থাকে তারা প্রকাশকের পর্যাপ্ত সাপোর্ট পায় না। তাই তাদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্যই সবসময় চেষ্টা করি। আমাদের একটি সম্পাদনা টিম আছে। কেউ পাণ্ডুলিপি দিলে চাইলে আমরা দেখি। ছাপার মতো হলে অবশ্যই আমরা নিজ উদ্যোগেই ছাপার চেষ্টা করি। তবে ইয়াং লেখকদের একটি সমস্যা হচ্ছে, আজকে লিখল কালকেই বই! তো তাদের জন্য বলি যে, প্রচুর লিখতে হবে। এখন ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো আছে, পত্রিকায় লিখলে সবচেয়ে ভালো। সবারই সাহিত্যচর্চা করে তারপর বইয়ের প্ল্যান করা উচিত। তাই যারা নতুন লিখছেন, তাদেরকে এইটুকুই বলব, প্রচুর পড়তে হবে, পত্র-পত্রিকায় লিখতে হবে, তারপর বই প্রকাশ করতে হবে।