লক্ষ্য যখন কনটেন্ট ক্রিয়েশন

স্বপ্নবাজ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫, ০৫:০৮ পিএম

লক্ষ্য যখন কনটেন্ট ক্রিয়েশন

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ডিজিটাল যুগে কনটেন্ট ক্রিয়েশন একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। একসময় যেখানে মানুষ চাকরি বা ব্যবসায় মনোযোগ দিত, সেখানে এখন একটি বড় অংশ কনটেন্ট ক্রিয়েশনকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকসহ নানা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কনটেন্ট তৈরি করে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তেই পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। কনটেন্ট ক্রিয়েটররা এখন সহজেই তাদের কনটেন্ট শেয়ার করে দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হতে পারেন এবং এর মাধ্যমে নাম, পরিচিতি ও আয়ের সুযোগ তৈরি করতে পারেন।

তবে, কনটেন্ট ক্রিয়েশন শুধু সৃজনশীলতার বিষয় নয়, এটি একটি অত্যন্ত কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং কাজ। কনটেন্ট তৈরির জন্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আইডিয়া, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং প্রচুর সময় ও পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে হাজার হাজার কনটেন্ট ক্রিয়েটরের উপস্থিতি এবং প্রতিযোগিতা! নতুন কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য একেবারেই সহজ নয়। কনটেন্ট তৈরি করা ও তা দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা, পরবর্তী সময়ে সেই কনটেন্ট থেকে লাভ অর্জন করা- পুরো প্রক্রিয়াটি একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করে। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, কনটেন্ট ক্রিয়েশনে অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা রয়েছে।

চাকরি ছেড়ে কনটেন্ট ক্রিয়েশন শুরু করলে প্রথমদিকে আয় কম বা শূন্য থাকতে পারে, যা অনেক ক্রিয়েটরের জন্য একটি বড় সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া এ পেশায় আয় নির্ভর করে কনটেন্টের ভিউ, সাবস্ক্রাইবার এবং প্ল্যাটফর্মের নীতির ওপর, যা কখনো কখনো অত্যন্ত অনিশ্চিত! আবার অনেক সময় কনটেন্ট আইডি হারিয়ে ফেলার চাপে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা মানসিক অবসাদ এবং সৃজনশীল ব্লকের মুখোমুখি হন। দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণের চাপ, প্রতিযোগিতার মধ্যে টিকে থাকা এবং ক্রমাগত নতুন কিছু তৈরি করা-এসবই একটি বড় মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এ বিষয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা হয়েছে একাধিক কনটেন্ট ক্রিয়েটরের। তাদের ভাষ্যমতে, কনটেন্ট ক্রিয়েশেনে সম্ভাবনা, ঝুঁকি এবং চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হলো-

সম্ভাবনা: কনটেন্ট ক্রিয়েশন বর্তমানে একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা অনেক মানুষের জীবন পরিবর্তন করেছে। যেহেতু পৃথিবী এখন প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল তাই বলা যায়, বর্তমান বিশ্বে কনটেন্ট ক্রিয়েশনে সম্ভাবনা অনেক। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা বিশ্বজুড়ে তাদের কাজ প্রদর্শন করতে পারেন, ফলে তারা শুধু দেশীয় নয়, আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় হতে পারেন। এ ছাড়া কনটেন্ট ক্রিয়েটররা তাদের নিজস্ব ব্র‍্যান্ড তৈরি করতে পারেন এবং তা থেকে আয়ের পাশাপাশি সমাজে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেন। আবার এখানে নিজের পছন্দের বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করারও সুযোগ রয়েছে। যেমন- ব্লগ, শিক্ষা, বিনোদন বা ফিটনেস, যা ক্রিয়েটরদের সৃজনশীলতার পূর্ণ প্রকাশ ঘটাতে সহায়তা করে।

ঝুঁকি: কনটেন্ট ক্রিয়েশন যেমন সম্ভাবনাময় পেশা তেমনি এখানে নানা ঝুঁকিও রয়েছে। অনেক সময় ভিডিও প্রকাশ করা পর সাউন্ডে সমস্যা হতে পারে, যেমন অডিও ফাইলের সমস্যা বা প্ল্যাটফর্মের সেটিংসের কারণে সাউন্ড না আসা। এটি দর্শকদের অভিজ্ঞতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ ছাড়া ভিডিও আপলোড করার পর যদি কোনো কারণে প্ল্যাটফর্মে তা চলে যায় বা রিমুভ হয়ে যায় (যেমন, কপিরাইট বা নীতিমালার কারণে), এটি কনটেন্ট ক্রিয়েটরের জন্য বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। ভিডিও হারানো বা দেখা না যাওয়ার ফলে প্রচুর পরিশ্রম বৃথা হয়ে যায়। আবার সোশ্যাল মিডিয়া বা প্ল্যাটফর্মের আইডি হ্যাক হয়ে যাওয়া বা ব্লক হয়ে যাওয়া একটি বড় ঝুঁকি। যদি অ্যাকাউন্টে সমস্যা হয়, যেমন হ্যাকিং বা প্ল্যাটফর্মের নীতি লঙ্ঘন, তাহলে আইডি পুনরুদ্ধার করা কঠিন হতে পারে, ফলে ক্রিয়েটর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

চ্যালঞ্জ: কনটেন্ট ক্রিয়েশন বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলো হলো-

প্রতিযোগিতা
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে লাখ লাখ কনটেন্ট ক্রিয়েটর রয়েছেন, ফলে নতুনদের জন্য ভিউ ও পরিচিতি অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন। কনটেন্টের সৃজনশীলতা এবং আকর্ষণীয়তা বজায় রেখে নিজেকে আলাদা করা বড় চ্যালেঞ্জ।

আর্থিক অনিশ্চয়তা
প্রথমদিকে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা আয় কম বা অনিশ্চিত পেতে পারেন। আয় মূলত কনটেন্টের ভিউ, সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা এবং প্ল্যাটফর্মের নীতির ওপর নির্ভর করে, ফলে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা থাকতে পারে না।

সৃজনশীল চাপ
নিয়মিত নতুন কনটেন্ট তৈরি করার জন্য সৃজনশীল চাপ থাকে। কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ওপর নতুন কিছু উপস্থাপনের চাপ এবং দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করার চাপ মানসিকভাবে ক্লান্তিকর হতে পারে।

প্রযুক্তিগত বাধা
কনটেন্ট তৈরি করার জন্য ভালো প্রযুক্তি, যেমন ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, এবং সম্পাদনা সফটওয়্যারের প্রয়োজন হয়। কিছু কনটেন্ট ক্রিয়েটরের কাছে এ প্রযুক্তি সহজলভ্য নাও হতে পারে।

প্রযুক্তি এবং প্ল্যাটফর্মের পরিবর্তন
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর নিয়ম প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়, যেমন ইউটিউবের মনিটাইজেশন নীতি বা ফেসবুকের প্রোফাইল আপডেট। এসব পরিবর্তনের কারণে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের আয় ও প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে এসব চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, সঠিক মনোভাব, পরিকল্পনা এবং ধারাবাহিকতায় কনটেন্ট ক্রিয়েটররা এসব বাধা কাটিয়ে সফল হতে পারেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!